ক্ষতিগ্রস্ত পরমাণু স্থাপনা থেকে ইউরেনিয়াম উদ্ধার করতে পারে ইরান : ইসরায়েল

গত মাসে মার্কিন বাহিনীর হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত তিনটি পরমাণু স্থাপনার মধ্যে একটির (ইসফাহান) মাটির নিচে চাপা পড়ে থাকা সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ইরান হয়তো পুনরুদ্ধার করতে পারে বলে বিশ্বাস করে ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইসরায়েলি এক শীর্ষ কর্মকর্তা এমন মন্তব্য করেছেন।
তবে ওই কর্মকর্তা বলেন, ইউরেনিয়াম উদ্ধার করা অত্যন্ত কঠিন হবে এবং তেমন কোনো প্রচেষ্টা হলে ইসরায়েল নতুন করে হামলা চালাবে। খবর বিবিসির।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করে আসছেন যে, জুনে ইরানে চালানো মার্কিন বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দেশটির পরমাণু স্থাপনাগুলো “সম্পূর্ণ ধ্বংস” হয়েছে। যদিও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এই বিষয়ে কিছুটা সতর্ক অবস্থানে আছে।
ইরান সব সময়ই পরমাণু অস্ত্র তৈরির অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে এবং তারা জানিয়েছে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে।
ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের এক ব্রিফিংয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানান, তাদের গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, ইরানের বড় একটি ইউরেনিয়াম মজুদ ইসফাহানে সংরক্ষিত ছিল, যা ২২ জুন “অপারেশন মিডনাইট হ্যামার”-এ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার শিকার হয়।
তবে ওই কর্মকর্তা বলেন, ইরান যদি ইউরেনিয়াম উদ্ধারের চেষ্টা করে, তা হলে সেটি নজরে আসবে এবং ইসরায়েল তখনই ব্যবস্থা নেবে।
ইসরায়েলের মূল্যায়ন অনুযায়ী, এই হামলায় ইরানের পরমাণু কর্মসূচি অন্তত দুই বছর পিছিয়ে গেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের সদস্যরা বারবার বলেছেন, ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র আন্না কেলি এক বিবৃতিতে বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বহুবার বলেছেন, অপারেশন মিডনাইট হ্যামার ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস করেছে। তার সাহসী নেতৃত্বে বিশ্ব আজ অনেক বেশি নিরাপদ।”
এই বিষয়ে আরও মন্তব্য জানতে বিবিসি হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
এদিকে, মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার একটি ফাঁস হওয়া প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফোর্ডো, নাতানজ ও ইসফাহানের তিনটি স্থাপনাই গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়নি।
জুনের শেষ দিকে, সিআইএ পরিচালক জন র্যাটক্লিফ মার্কিন আইনপ্রণেতাদের বলেন, ইরানের একমাত্র ধাতব ইউরেনিয়াম উৎপাদন কেন্দ্র ধ্বংস হওয়ায়, দেশটির পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা কার্যত হ্রাস পেয়েছে।

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল গ্রোসি সিবিএসকে বলেন, “তিনটি লক্ষ্যবস্তু গুরুত্বপূর্ণভাবে ধ্বংস হয়েছে ঠিকই, তবে কিছু কিছু অংশ এখনও দাঁড়িয়ে আছে।”
তিনি আরও বলেন, “সত্যি কথা বলতে, বলা যাবে না যে সবকিছু নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, আর কিছুই নেই।”
বিশ্লেষক টাকার কার্লসনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ পেজেশকিয়ান বলেন, “স্থাপনাগুলো ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে আমাদের আর সেগুলোর কোনো অ্যাক্সেস নেই।” তিনি আরও জানান, “সম্পূর্ণ মূল্যায়ন এখনও সম্ভব নয়।”