বাংলাদেশসহ ১৪ দেশকে শুল্কহার নিয়ে সতর্ক করে ট্রাম্পের চিঠি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আমদানিকৃত পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত আপাতত পিছিয়ে দিলেও বাংলাদেশ, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ ১৪টি দেশে চিঠি পাঠিয়ে নতুন শুল্কহার সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।
ট্রাম্পের এই চিঠি এমন এক সময়ে এলো, যখন আমদানিকৃত পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপের ওপর ৯০ দিনের স্থগিতাদেশের মেয়াদ এই সপ্তাহেই শেষ হতে যাচ্ছে।
এর মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন করে বাংলাদেশ, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ ১৪টি দেশের নেতাদের কাছে শুল্ক সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছেন এবং হুমকি দিয়েছেন যে আগামী ১ আগস্ট থেকে এসব শুল্ক কার্যকর হবে। খবর বিবিসির।
উচ্চ শুল্ক ৯ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল, যা আগে স্থগিত করা হয়েছিল। হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, তারা বাণিজ্য চুক্তি করার জন্য আলোচনা চালিয়ে যাবেন।
স্থানীয় সময় সোমবার (৭ জুলাই) ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ১৪টি দেশের নেতাদের উদ্দেশ্যে পাঠানো চিঠি প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি তাদের সর্বশেষ শুল্ক পরিকল্পনার কথা জানান। তিনি আরও বলেন, “আপনার দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে এই হার উপরে বা নিচে পরিবর্তিত হতে পারে।”
ট্রাম্প যে শুল্ক হার নির্ধারণ করেছেন, তা মূলত এপ্রিল মাসে দেওয়া তাঁর “লিবারেশন ডে” ঘোষণার সঙ্গে মিল রয়েছে, যেখানে তিনি বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন।
নতুন ঘোষণায়, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মিয়ানমার ও লাওস থেকে আসা পণ্যে ৪০ শতাংশ, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া থেকে ৩৬ শতাংশ, সার্বিয়া ও বাংলাদেশের জন্য ৩৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার জন্য ৩২ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য ৩০ শতাংশ এবং মালয়েশিয়া ও তিউনিসিয়ার জন্য ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা জানানো হয়েছে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট জানান, ভবিষ্যতে আরও কিছু দেশের জন্য চিঠি পাঠানো হতে পারে। তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্টের ফোন প্রতি মুহূর্তে বাজছে, বিশ্বনেতারা তাকে অনুরোধ করছেন চুক্তি করার জন্য।”
ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই শুল্কনীতি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে বিদেশি প্রতিযোগিতা থেকে রক্ষা করবে এবং দেশের উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাড়াবে। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এতে মার্কিন বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
জাপান গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে ১৪৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম বৃহত্তম আমদানিকারক দেশ। দক্ষিণ কোরিয়া রয়েছে শীর্ষ দশে।
সোমবারের ঘোষণার পর মার্কিন শেয়ারবাজারে মন্দা দেখা দেয় এবং টয়োটা কোম্পানির যুক্তরাষ্ট্রে তালিকাভুক্ত শেয়ারের দাম ৪ শতাংশ কমে যায়।
ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট বলেন, “আগামী কয়েকটা দিন খুব ব্যস্ত কাটবে। গত রাতেই আমার মেইলবক্সে প্রচুর নতুন প্রস্তাব এসেছে।”

যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য, ভিয়েতনাম ও চীনের সঙ্গে আংশিক চুক্তি করেছে, যেগুলোতে পূর্বের তুলনায় শুল্ক কিছুটা বেড়েছে। ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গেও আলোচনা চলছে এবং ধারণা করা হচ্ছে, তারা এখনই কোনো শুল্ক চিঠি পাবে না। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েনের সঙ্গে ট্রাম্পের “ভালো আলোচনা” হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
সম্প্রতি ট্রাম্প হুমকি দিয়েছিলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদি চুক্তিতে না আসে, তাহলে তাদের পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ হারে শুল্ক বসানো হবে।