টেক্সাসে আকস্মিক বন্যায় মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের মধ্যাঞ্চলে শুক্রবার (৪ জুলাই) ঘটে যাওয়া আকস্মিক বন্যায় মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া এখনও বহু মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। খবর বিবিসির।
ঘটনার চার দিন পর নিখোঁজদের বেঁচে থাকার আশা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে। কাদা ও পাথরে ঢাকা নদীর তীরে উদ্ধারকারী দল তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও এ অঞ্চলে আরও বৃষ্টি ও বজ্রঝড়ের পূর্বাভাস রয়েছে।
গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্প ‘ক্যাম্প মিস্টিক’ জানিয়েছে, তাদের অন্তত ২৭ জন শিক্ষার্থী ও স্টাফ এই বন্যায় মারা গেছেন। এখনও ১০ জন মেয়ে ও এক ক্যাম্প কাউন্সেলর নিখোঁজ রয়েছেন।
এদিকে জাতীয় আবহাওয়া পরিষেবার (এনডব্লিউএস) বাজেট কাটছাঁটের কারণে দুর্যোগ মোকাবিলায় বিঘ্ন ঘটতে পারে—এমন প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে হোয়াইট হাউস।
কেবল কার কাউন্টি থেকেই ৮৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, যার মধ্যে ৫৬ জন প্রাপ্তবয়স্ক ও ২৮ জন শিশু। মৃতদের মধ্যে এখনও ২২ জন প্রাপ্তবয়স্ক ও ১০ শিশুর পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি।
ক্যাম্প মিস্টিক এক বিবৃতিতে বলেছে, “আমাদের হৃদয় ভেঙে গেছে। আমাদের পরিবারের সঙ্গে আমরা এই অপূরণীয় শোক ভাগাভাগি করছি।”
অস্টিন আমেরিকান-স্টেটসম্যান পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, ক্যাম্প মিস্টিকের সহ-মালিক ও পরিচালক ৭০ বছর বয়সী রিচার্ড ইস্টল্যান্ড শিশুদের বাঁচাতে গিয়ে মারা যান।
ইস্টল্যান্ড পরিবারকে চেনা স্থানীয় ধর্মযাজক ডেল ওয়ে বিবিসিকে বলেন, “তিনি একজন সত্যিকারের নায়ক হিসেবে মারা গেছেন। পুরো কমিউনিটি তাঁকে স্মরণ করবে।”
এদিকে আবহাওয়া অফিস আরও ধীর গতির বজ্রঝড় ও সম্ভাব্য নতুন বন্যার পূর্বাভাস দিয়েছে।
সমালোচকরা দাবি করছেন, জাতীয় মহাসাগর ও বায়ুমণ্ডল প্রশাসন (এসওএএ)-এর অধীনস্থ এসডব্লিউএস-এর কর্মী ছাঁটাইয়ের কারণে পূর্ব সতর্কতা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে।
তবে হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট এই দাবিকে নাকচ করে দিয়ে বলেন, “এটি একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এটি সরকারের দোষ নয়।”

তিনি জানান, অস্টিন-সান অ্যান্টোনিও আবহাওয়া অফিস আগের দিন স্থানীয় কর্মকর্তাদের ব্রিফ করেছিল এবং ৪ জুলাই ভোরে একাধিক সতর্কবার্তা দেয়।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রোববার (৬ জুলাই) সাংবাদিকদের বলেন, “আমি বাইডেনকে এর জন্য দোষারোপ করব না। এটা শতাব্দীর সবচেয়ে বড় দুর্যোগগুলোর একটি।”
টেক্সাসের সিনেটর টেড ক্রুজ বলেন, “এখন দোষারোপের সময় নয়, বরং ঐক্যবদ্ধভাবে বিপর্যয়ের মোকাবিলা করার সময়।”

স্থানীয় বাসিন্দা নিকোল উইলসন একটি অনলাইন পিটিশনের মাধ্যমে কার কাউন্টিতে বন্যা সতর্কতা সাইরেন স্থাপনের দাবি তুলেছেন, যা অনেক কাউন্টিতে আগে থেকেই চালু রয়েছে।
লেফটেন্যান্ট গভর্নর ড্যান প্যাট্রিক স্বীকার করেছেন, যদি এই ব্যবস্থা আগে থাকত, অনেক জীবন বাঁচানো যেত। তিনি বলেন, আগামী গ্রীষ্মের মধ্যেই এটি স্থাপন করা হবে।

এদিকে বিশ্বজুড়ে শোকবার্তা আসতে শুরু করেছে। ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে একটি চিঠিতে "গভীর দুঃখ" প্রকাশ করেছেন। তিনি নিহতদের পরিবার ও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছেন।