কে হবেন দালাই লামার উত্তরসূরি, তিব্বত-চীনজুড়ে চলছে গুঞ্জন

উত্তর ভারতের ধর্মশালায় দালাই লামার ৯০তম জন্মদিন উপলক্ষে শত শত অনুসারী জড়ো হয়েছেন। তাদের প্রত্যাশা, তিব্বতের নির্বাসিত আধ্যাত্মিক নেতা হয়তো এবার তার উত্তরসূরি সম্পর্কে কোনো ইঙ্গিত দেবেন।
দালাই লামার দপ্তর জানিয়েছে, বুধবার (২ জুলাই) তিনি একটি ভিডিও বার্তা এবং বিবৃতি প্রকাশ করবেন, যদিও কী বলবেন তা এখনও স্পষ্ট নয়। খবর বিবিসির।
দালাই লামা ১৯৫৯ সালে চীনের শাসনের বিরুদ্ধে ব্যর্থ বিদ্রোহের পর তিব্বত থেকে ভারতে পালিয়ে আসেন এবং ধর্মশালায় নির্বাসিত সরকার গঠন করেন। তিব্বতের ওপর বেইজিংয়ের কঠোর নিয়ন্ত্রণের বিপরীতে তিনি বিকল্প শক্তির প্রতীক হয়ে ওঠেন।
জন্মদিনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে সোমবার থেকে, যা তিব্বতি চান্দ্রপঞ্জিকার হিসেবে তার জন্মদিন। বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনের ১৫তম তিব্বতি ধর্মীয় সম্মেলন, আর রোববার হবে ৯০তম জন্মদিন উদযাপন।
দালাই লামা এর আগে বলেছিলেন, ৯০তম জন্মদিনের কাছাকাছি সময়ে তিনি উত্তরসূরি বিষয়ে সিদ্ধান্তের কিছু প্রকাশ করবেন। সোমবার এক সমাবেশে তিনি বলেন, “দালাই লামা প্রতিষ্ঠানের ধারাবাহিকতা নিয়ে আলোচনা করার জন্য একটি কাঠামো তৈরি করা হবে।” তবে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।
কিছু বছর আগে তিনি বলেছিলেন, তার উত্তরসূরি একজন মেয়ে হতে পারেন বা কোনো উত্তরসূরি নাও থাকতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি আবার বলেছেন, নির্বাসিত তিব্বতিদের মধ্যে উত্তরসূরি চাওয়ার প্রবল সমর্থন থাকলে দালাই লামার পদ অব্যাহত থাকবে এবং তার দপ্তর উত্তরসূরি নির্বাচিত করবে।

দালাই লামা বারবার বলেছেন, তার উত্তরসূরি চীনের বাইরে জন্মাবেন, যা বেইজিংকে ক্ষুব্ধ করেছে। যদিও তিনি তিব্বতের জন্য চীনের অংশ হিসেবেই বাস্তব স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে “মধ্যমার্গ”-এর সমর্থক, চীন তাকে এখনও বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে দেখে।
তিব্বতি সংসদের সংসদ সদস্য ইয়ুদোন আউকাটসাং বিবিসিকে বলেন, “আমি মনে করি না এই সপ্তাহে খুব স্পষ্ট কোনো প্রক্রিয়া ঘোষণা হবে। কিন্তু সবাই তার কাছ থেকে কোনো ইঙ্গিতের প্রত্যাশা করছে।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি দালাই লামা উত্তরসূরি ঘোষণা করেন, তাহলে চীনও তাদের পছন্দের দালাই লামা ঘোষণা করবে।

ওয়েস্টমিনস্টার ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক দিব্যেশ আনন্দ বিবিসিকে বলেন, “চীন বলবে দালাই লামার পুনর্জন্ম নির্ধারণের একমাত্র অধিকার বেইজিংয়ের চীনা কমিউনিস্ট পার্টিরই আছে।”
চীনা দালাই লামাকে তিব্বতি জনগণ ও বিশ্ব মেনে নেবে না বলেই মনে করেন আউকাটসাং। তিনি বলেন, “তিব্বতে মানুষের মন-মানসিকতা নিয়ন্ত্রণের জন্য এত বছর চীনের চেষ্টা সত্ত্বেও তারা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।”
বর্তমান দালাই লামা ১৯৩৫ সালের ৬ জুলাই তিব্বতের এক ছোট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দুই বছর বয়সে বৌদ্ধ কর্মকর্তারা তাকে আগের দালাই লামাদের পুনর্জন্ম হিসেবে চিহ্নিত করেন।

১৯৫৯ সালে চীনের বিরুদ্ধে তিব্বতিদের বিদ্রোহ ব্যর্থ হলে তিনি ১০ হাজার অনুসারী নিয়ে ভারতে পালিয়ে আসেন। তখন থেকে ধর্মশালায় নির্বাসিত সরকার পরিচালনা করছেন এবং ২০১১ সালে রাজনৈতিক পদ থেকে অবসর নিলেও তিব্বতি বৌদ্ধ ধর্মের শীর্ষ আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে রয়েছেন।
ধর্মশালায় জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা ৮৪ বছরের লোবসাং চোয়েডন বলেন, “আমার বিশ্বাস আমি তিব্বতে ফিরে যাবো। যদি না পারি, আমার পরবর্তী প্রজন্ম অবশ্যই ফিরবে।”