গাজায় স্কুল-ত্রাণকেন্দ্রসহ বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলি হামলা, নিহত ৯৫

গাজা উপত্যকায় ক্যাফে, স্কুল এবং খাদ্য বিতরণকেন্দ্রে বোমা হামলা চালিয়ে অন্তত ৯৫ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে বর্বর ইসরায়েলি বাহিনী। এছাড়া একটি হাসপাতালেও হামলা চালিয়ে কয়েকজনকে আহত করা হয়েছে। খবর আল জাজিরার।
সোমবারের (৩০ জুন) হামলায় নিহতদের মধ্যে ৬২ জন গাজা শহর ও উত্তর গাজায় মারা গেছেন। এর মধ্যে আল-বাকা ক্যাফেতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৩৯ জন নিহত হন। সেখানে শিশুসহ অনেকেই জন্মদিনের অনুষ্ঠানে জড়ো হয়েছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ইয়াহিয়া শরীফ জানান, “আমরা ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহ দেখতে পাই। এই জায়গার কোনো রাজনৈতিক বা সামরিক সংশ্লিষ্টতা ছিল না।”
আল জাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদ বলেন, “হামলার আগে কোনো সতর্কতা দেওয়া হয়নি। আহতদের রক্তের দাগ এখনও স্পষ্ট।”
এছাড়া গাজা শহরের ইয়াফা স্কুলে আশ্রয় নেওয়া শত শত বাস্তুচ্যুত মানুষের ওপরও বোমা বর্ষণ করা হয়। হামাদ আবু জারাদেহ জানান, বোমা পড়ার মাত্র পাঁচ মিনিট আগে তাদের সরে যেতে বলা হয়েছিল। তিনি বলেন, “আমরা কোথায় যাবো বুঝতে পারছি না। প্রতিদিনই মৃত্যু আমাদের চারপাশে।”
মধ্য গাজায় দেইর আল-বালাহর আল-আকসা হাসপাতালের আঙিনায়ও হামলা হয়, যেখানে হাজারো পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল। ভিডিওতে দেখা যায়, বিস্ফোরণে আতঙ্কিত মানুষজন দৌড়াচ্ছে। আল জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজজুম বলেন, “এটি হাসপাতাল চত্বরে অন্তত ১০তম হামলা।”
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের এই হামলাকে “স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অপরাধ” বলে আখ্যা দিয়েছে।
দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে হামলায় অন্তত ১৫ জন নিহত ও ৫০ জন আহত হয়েছেন। মে মাসের শেষ থেকে জিএইচএফ ত্রাণ বিতরণ শুরু করার পর থেকে এই কেন্দ্রগুলোতে হামলায় প্রায় ৬০০ জন নিহত হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী স্বীকার করেছে যে, ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে হামলায় বেসামরিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হারেৎজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি সেনাদেরকে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
এদিকে খান ইউনিসে বাড়ি-ঘর ধ্বংস এবং উত্তর গাজায় নতুন করে মানুষের ওপর স্থানত্যাগের হুমকি দিয়ে পুনরায় ব্যাপক অভিযান শুরু হয়েছে। এক বাসিন্দা সালাহ (৬০) বলেন, “বিস্ফোরণ থামছে না; স্কুল ও বাড়ি লক্ষ্য করে হামলা হচ্ছে। মনে হচ্ছে ভূমিকম্প হচ্ছে।”
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজার ৮০ শতাংশ অঞ্চল এখন ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে বা জোরপূর্বক স্থানত্যাগের আদেশের অধীনে রয়েছে।
এরই মধ্যে ইসরায়েলের কৌশল বিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমার যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে হোয়াইট হাউসে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় অংশ নেবেন। মধ্যস্থতাকারী কাতার জানিয়েছে, আলোচনায় অগ্রগতি হলেও এখনও জটিলতা রয়েছে।
হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা ওসামা হামদান বলেন, “আমরা যুদ্ধবিরতির জন্য মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে কাজ করছি, পারাপার খুলে দিতে চাই, কিন্তু চার সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলের কোনো ইতিবাচক সাড়া পাইনি।”