বিদ্যুৎ খাত সংস্কারে পাকিস্তানের নতুন পদক্ষেপ

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ রোববার (২৯ জুন) আনুষ্ঠানিকভাবে ‘আপনা মিটার, আপনা রিডিং’ স্মার্ট মোবাইল অ্যাপের উদ্বোধন করেছেন। এই উদ্যোগের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে গ্রাহকরা নিজেদের মিটার রিডিং নিয়ে তা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোকে পাঠাতে পারবেন। খবর ডনের।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে ধাপে ধাপে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোতে মিটার রিডারদের ভূমিকা কমিয়ে আনা হবে। বর্তমানে বিদ্যমান প্রো রাটা পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ গ্রাহকরা ‘সুরক্ষিত ক্যাটাগরি’ থেকে বাদ পড়ে অথবা পরের স্লাবে চলে যান, ফলে বিল বেড়ে যায়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেন, “এই উদ্যোগ সরকারের বিদ্যুৎ খাতের সংস্কারের অংশ হিসেবে একটি বিপ্লবী পদক্ষেপ।”
শাহবাজ শরিফ জানান, “আমরা বিদ্যুৎ খাতে সংস্কার করেছি, ডিসকোর বোর্ডে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছি এবং দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি।”
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জ্বালানি মন্ত্রী স্বাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদকদের (আইপিপি) সঙ্গে কঠোর আলোচনার মাধ্যমে ইউনিট প্রতি ৭.৫ টাকা বিদ্যুতের দাম কমিয়েছেন। “বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলে আমরা তার সুযোগ নিয়ে বিদ্যুতের দামও কমিয়েছি।”
প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ বিল থেকে পাকিস্তান টেলিভিশন (পিটিভি) ফি বাতিলের ঘোষণা দেন। বর্তমানে মাসে ৩৫ টাকা পিটিভি ফি বিদ্যুৎ বিলের মাধ্যমে আদায় করা হয়।
তিনি বলেন, “প্রতি বছর ৫০০ বিলিয়ন রুপির বিদ্যুৎ চুরি আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, যা রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেন, সরকার সোলার পাওয়ারকে নিরুৎসাহিত করবে না। “সোলার সবচেয়ে সস্তা বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা। পাকিস্তান বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল সোলার উৎপাদক দেশগুলোর একটি।”
তিনি বলেন, “এই অ্যাপের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হবেন বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। এটি একটি বিপ্লবী প্রযুক্তি, যা দেশের প্রতিটি পরিবারের উপকারে আসবে।” বিদ্যুৎ বিভাগকে গ্রাহকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর নির্দেশও দেন তিনি। অ্যাপটি ৫টি ভাষায় চালু করা হয়েছে।
জ্বালানি মন্ত্রী আওয়াইস আহমেদ লেঘারি অনুষ্ঠানে বলেন, “এই উদ্যোগের মাধ্যমে মিটার রিডারের দায়িত্ব গ্রাহকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।”
তিনি জানান, সুরক্ষিত ক্যাটাগরির আওতায় ১০০ ইউনিটের কম বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীরা বিলম্বিত বা ভুল মিটার রিডিংয়ের কারণে বেশি বিল পেতেন। গত বছর সরকার ১০ বিলিয়ন রুপি অতিবিল ফেরত দিয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ এক বিবৃতিতে জানায়, “নতুন এই অ্যাপের মাধ্যমে নির্দিষ্ট তারিখে মিটারের ছবি তুলে অ্যাপে আপলোড করলে সেটির ভিত্তিতেই মাসিক বিল তৈরি হবে।”
এই ব্যবস্থার মাধ্যমে অতিবিল, রিডিংয়ে ভুল ও রিডিং দেরির সমস্যার সমাধান হবে। “এটি শুধুমাত্র প্রযুক্তি নয়, বরং শাসন ব্যবস্থার একটি বাস্তব সংস্কার, যা গ্রাহকদের ক্ষমতায়ন করবে,” বিবৃতিতে বলা হয়।
অ্যাপের মূল বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী, নির্ধারিত দিনে গ্রাহক রিডিং দিলে তার পরের রিডিং গ্রহণযোগ্য হবে না, গ্রাহকের দেওয়া রিডিংই চূড়ান্ত ধরা হবে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের বিল প্রায় ২ হাজার ৩৩০ টাকা, কিন্তু এক ইউনিট বেশি হলে বিল বেড়ে প্রায় ৮ হাজার ১০৪ টাকা হয়ে যায়। সঠিক সময়ে রিডিং দিয়ে তারা সরকারি ভর্তুকির সুবিধা নিশ্চিত করতে পারবেন।
বিবৃতিতে জানানো হয়, “এই অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহকরা তাদের বিল পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন, বাড়বে স্বচ্ছতা, কমবে অতিবিল এবং অপ্রয়োজনীয় ঝামেলা ও অভিযোগ।”