ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে বাকবিতণ্ডা

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাত নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এক জরুরি বৈঠকে তুমুল বাকবিতণ্ডা হয়েছে। উভয় পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক মন্তব্য ও গুরুতর অভিযোগ তুলেছে। খবর সিএনএনের।
এই বাকবিতণ্ডা এমন এক সময়ে হলো যখন ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও পাল্টাপাল্টি আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে। ইসরায়েল দাবি করেছে যে, তারা আইআরজিসির দ্বিতীয় ড্রোন যুদ্ধ কমান্ডারকে হত্যা করেছে। ইরান ইসরায়েলে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
নিরাপত্তা পরিষদে বৈঠকে ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাইদ ইরাজাভানি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি ইসরায়েলকে একটি ‘সন্ত্রাসী শাসনব্যবস্থা’ হিসেবে আখ্যায়িত করে ‘তথাকথিত পূর্ব-পরিকল্পিত হামলা ও অস্তিত্বের হুমকির অজুহাত ব্যবহার করে আগ্রাসনকে ন্যায্যতা দেওয়ার অভিযোগ করেন। ইরাজাভানি ইসরায়েলকে ‘নিরীহ মানুষকে হত্যা করা ও রাষ্ট্রের আঞ্চলিক অখণ্ডতা লঙ্ঘনকারী’ দেশ হিসেবে অভিহিত করেন। ইসরায়েলি হামলায় নিহত শিশুদের ছবি প্রদর্শন করে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ হলেই ইরান কূটনীতি বিবেচনা করতে প্রস্তুত, নয়তো তাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা নিয়ে কোনো আলোচনা হবে না।
ইসরায়েল এই সংঘর্ষে তাদের আত্মরক্ষার অধিকারের ওপর জোর দিয়ে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতও ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করে ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। তারা ইরানকে তাদের কার্যক্রমের গতিপথ পরিবর্তনের আহ্বান জানান।
রাশিয়ার পশ্চিমা দেশগুলোর নিন্দা
রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজ্যা—যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি এই দেশগুলোর বিরুদ্ধে ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের পরিকল্পনা নিয়ে ভিত্তিহীন মিথ্যাচার ছড়ানোর অভিযোগ আনেন। পশ্চিমা শক্তিগুলোকে ইসরায়েলি হামলার সহযোগী ও সবচেয়ে মারাত্মক অস্ত্রের মতোই বিপজ্জনক বলে উল্লেখ করেন। তিনি আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সাম্প্রতিক একটি প্রস্তাবনার কথাও উল্লেখ করেন, যেখানে ২০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ইরানের বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব পাশ করা হয়েছে।
জাতিসংঘের শান্তির আহ্বান
জাতিসংঘের আন্ডার-সেক্রেটারি-জেনারেল ফর পলিটিক্যাল অ্যান্ড পিসবিল্ডিং অ্যাফেয়ার্স রোজমেরি এ. ডিকার্লো ও জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস উভয়ই পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা সংঘাত নিরসন, আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলা ও কূটনৈতিক সমাধানের জন্য আবেদন জানান।

গুতেরেস সতর্ক করে বলেন, বিশ্ব ‘সংকটের দিকে ছুটছে না, বরং এর দিকে দ্রুত গতিতে ধাবিত হচ্ছে’। এই সংঘাতের বিস্তার এমন এক আগুন জ্বালাতে পারে যা কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধবিরতি ও কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার ওপর জোর দেন।