এয়ার ইন্ডিয়া বিমান দুর্ঘটনা
বেঁচে ফেরা সেই ব্যক্তির সিটই কি সবচেয়ে নিরাপদ

এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার ২৪২ জন আরোহী নিয়ে গত বৃহস্পতিবার (১২ জুন) বিধ্বস্ত হয়। উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই আহমেদাবাদে বিধ্বস্ত হয় বিমানটি। এতে প্রাণ হারান ২৪১ জন। অলৌকিকভাবে বেঁচে যান ৪০ বছর বয়সী ব্রিটিশ-ভারতীয় নাগরিক বিশ্বাস রমেশ কুমার। তার আসন নম্বর ছিল ১১এ। বিমানে কি তবে এই আসনটিই সবচেয়ে নিরাপদ?
আজ শনিবার (১৪ জুন) এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, সিটটি ছিল ইকোনমি ক্লাসের প্রথম সারিতে, বিজনেস ক্লাসের ঠিক পেছনে, বিমানের বাম পাশের ইমার্জেন্সি এক্সিটের কাছাকাছি। বিমানটি মাটি ছোঁয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার সামনের বাম অংশ ভেঙে পড়ে, কিন্তু মাঝ বা পেছনের অংশ ভয়াবহভাবে ধ্বংস হয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণভাবে বিমানের পেছনের আসনগুলো তুলনামূলক নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে এই দুর্ঘটনায় সেটি প্রযোজ্য হয়নি। ১১এ সিট মাঝখানে হলেও অলৌকিকভাবে বেঁচে যান যাত্রীটি।
অ্যাভিয়েশন সেফটির ওপর গবেষণা করা বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সমীক্ষা বলছে, বিমান দুর্ঘটনায় সাধারণত বিমানের পেছনের অংশে বসা যাত্রীদের বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে বেশি। ২০০৭ সালে পপুলার মেকানিক্স পত্রিকার এক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৯৭১ সালের পর থেকে হওয়া বিভিন্ন দুর্ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণ করে পাওয়া গেছে যে বিমানের পেছনের ৪০% অংশে বসা যাত্রীরা সামনের বা মাঝের আসনের তুলনায় ৬৯% বেশি বেঁচে থাকার সম্ভাবনা পান।

বিমান বিশ্লেষক অঙ্গদ সিং এনডিটিভিকে বলেন, ১১এ সিটটি বিমানের মাঝ বরাবর, উইংয়ের আগেই অবস্থিত। সাধারণভাবে একে নিরাপদ বলা যায় না। এখানে একমাত্র ব্যাখ্যা হচ্ছে—এটি একটি অলৌকিক ঘটনা।
তিনি আরও বলেন, ‘বিমানের যে আগুনে বিস্ফোরণ আমরা দেখেছি, এবং ধ্বংসস্তূপের যা অবস্থা হয়েছে, তাতে করে ওই সিটে বসে কেউ জীবিত বের হয়ে আসতে পারবে—এটা শুধু ঈশ্বরের আশীর্বাদ ছাড়া কিছুই নয়।’
ফ্লাইট সেফটি ফাউন্ডেশনের পরিচালক মিচেল ফক্স বলেন, প্রত্যেকটি বিমান দুর্ঘটনা একেক রকম। সেজন্য নির্দিষ্ট করে বলা যায় না যে একটি নির্দিষ্ট সিট সব সময় নিরাপদ। বিমানের কাঠামো, দুর্ঘটনার ধরন, আগুন কোথা থেকে শুরু হলো, ফুয়েল ট্যাংক কোথায় ছিল—এসব অনেক বিষয় মিলে একজন যাত্রীর বেঁচে থাকা নির্ধারণ করে।
সেদিনের দুর্ঘটনায় বেঁচে ফেরা রমেশ কুমার বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম—আমি মারা যাব। কিন্তু যখন আমি চোখ খুললাম, তখন আমি দেখতে পেলাম আমি বেঁচে আছি। আমি আমার সিট বেল্ট খুলে সেখান থেকে বেরিয়ে এলাম। এয়ারহোস্টেস ও চাচা-চাচী সবাই আমার চোখের সামনে মারা গেছেন।’
রমেশ কুমারের আসনটি জরুরি দরজার ঠিক পাশে ছিল। বিমানটি হোস্টেলে আঘাত করার সময় সেই দরজাটি খুলে গিয়েছিল।
হোস্টেলে অবতরণ করেছেন কিনা জানতে চাইলে রমেশ কুমার বলেন, ‘না, আমি মাটির কাছাকাছি ছিলাম, নিচতলায়, যেখানে জায়গা ছিল। তাই আমি সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছি। ভবনের দেয়ালটি বিপরীত দিকে ছিল। আমার মনে হয় না কেউ এভাবে বেরিয়ে আসতে পেরেছে।’
কিছুক্ষণ পরেই বিমানে আগুন লেগে যায় ও তার বাহু পুড়ে যায়। সেই ভয়াবহ স্মৃতি স্মরণ করে রমেশ কুমার বলেন, ‘আমার চোখের সামনে দুই বিমানসেবিকা...’ এই কথা বলতে গিয়ে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
দুর্ঘটনাটি কীভাবে ঘটল জানতে চাইলে রমেশ কুমার বলেন, ‘উড্ডয়নের এক মিনিট পর মনে হয়েছিল বিমানটি আটকে গেছে। তারপর সবুজ ও সাদা আলো জ্বলে উঠল। তারা (পাইলটরা) বিমানটি ওপরে ওঠার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু এটি পূর্ণ গতিতে গিয়ে ভবনে বিধ্বস্ত হয়।’
উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যের গ্যাটউইক বিমানবন্দরে যাওয়ার সময় আহমেদাবাদ থেকে উড্ডয়নের মাত্র ১ মিনিটের মধ্যেই এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ বিমানটি দুপুর ১টা ৩৯ মিনিটে উচ্চতা হারিয়ে মেঘানী নগর এলাকার একটি মেডিকেল কলেজ হোস্টেল ভবনে বিধ্বস্ত হয়। এর ফলে ব্যাপক আগুন লাগে ও এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, দুপুর ১টা ৩৮ মিনিটে আহমেদাবাদ থেকে উড্ডয়ন করা বোয়িং ৭৮৭-৮ বিমানটিতে ২৪২ জন যাত্রী ও ক্রু ছিলেন। এর মধ্যে ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, এক জন কানাডিয়ান ও সাতজন পর্তুগিজ নাগরিক। এদের মধ্যে বিশ্বাস রমেশ কুমার ছাড়া বাকি ২৪১ জন যাত্রী নিহত হন।