রোহিঙ্গাদের ফেরত না পাঠানোর আহ্বান ব্রিটেনের

নির্যাতনের শিকার হয়ে আশ্রয়ের খোঁজে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত না পাঠাতে বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্য।
গত মঙ্গলবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডসে এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে দেশটির আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক (ডিএফআইডি) প্রতিমন্ত্রী মাইকেল ওয়ালটন বেইটস এ আহ্বান জানান। আশ্রয়প্রার্থী রোহিঙ্গাদের যাতে আবার বিপদের দিকে ঠেলে দেওয়া না হয়, সে জন্য বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের গণহত্যা বন্ধের দাবিতে ব্রিটেন থেকে দেশটির রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের পক্ষে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে একটি পিটিশন দাখিল করা হয়েছে। এতে এ পর্যন্ত ৬১ হাজারের বেশি স্বাক্ষর জমা পড়েছে।
হাউস অব কমন্সের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো পিটিশনে এক লাখ স্বাক্ষর জমা পড়লেই পার্লামেন্টে সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানরত ৩৪ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য যুক্তরাজ্য সবচেয়ে বেশি খাদ্য সাহায্য দিচ্ছে জানিয়ে ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী মাইকেল ওয়ালটন বলেন, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) মাধ্যমে সাহায্য অব্যাহত রাখবে দেশটি। বাংলাদেশে অবস্থানরত শরণার্থীদের জন্য যুক্তরাজ্য স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও শিক্ষাবিষয়ক সেবার ক্ষেত্র বৃদ্ধি করছে বলেও জানান তিনি।
হাউস অব লর্ডসের লেবার পার্টির সদস্য গ্লেনিস এলিজাবেথ কিনক এক লিখিত প্রশ্নে দেশটির আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রীর কাছে জানতে চান, ‘প্রাণে বাঁচতে মিয়ানমার থেকে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলমানের বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়ার যে খবর আসছে, এ নিয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের বক্তব্য কী?’ এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়েই দেশটির আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশ প্রসঙ্গে উপরোক্ত কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বেইটস বলেন, রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাজ্য গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা বন্ধ করতে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত করতে যুক্তরাজ্য মিয়ানমার সরকারকে একাধিকবার আহ্বান জানিয়েছে। সেই সঙ্গে রাখাইন রাজ্যে মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার দ্বার উন্মুক্ত করার জন্যও আহ্বান জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন দপ্তরের আরেক প্রতিমন্ত্রী রোরি স্টুয়ার্ট দুই দফা সাক্ষাতে বিষয়গুলো মিয়ানমারের মন্ত্রীর কাছে ব্যক্তিগতভাবে তুলে ধরেছেন বলে জানান তিনি।
এদিকে, মিয়ানমারের রাখাইন রোহিঙ্গা নিরীহ অসহায় জনগণকে নির্বিচারে গণহত্যা, খুন, ধর্ষণ বন্ধ এবং অং সান সুচিকে দেওয়া নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রত্যাহারের দাবিতে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ব্রিটিশ বাংলাদেশি যুবসমাজ ও ফ্রেন্ডস সোসাইটি ইউকে।
মঙ্গলবার গ্রিনপার্কের মিয়ানমার দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভকারীরা দুপুর ২টা থেকে জড়ো হয়ে, মিয়ানমার সরকারের নিষ্ঠুর ও অমানবিক নির্যাতনের তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানান। গণহত্যা বন্ধে বিশ্ব সম্প্রদায় নীরব ভূমিকা পালন করায় ক্ষোভ জানান বিক্ষোভকারীরা।