মোহাম্মদ আলীর মৃত্যু হয়েছে সংক্রমণ জটিলতায়

কিংবদন্তি মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীর মৃত্যু হয়েছে সংক্রমণ জটিলতা বা সেপটিক শকে। স্থানীয় সময় শুক্রবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের ফনিক্সের এক হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ওই সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।
সেপটিক শক বা সংক্রমণ জটিলতায় পুরো শরীরে বিষাক্ত বস্তুর উপস্থিতি দেখা যায়। সাধারণত বয়স্ক ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে এই জটিলতা দেখা দেয়। চিকিৎসকরা ধারণা করছেন, প্রকৃতিগতভাবেই মোহাম্মদ আলীর শরীরে সংক্রমণ জটিলতা সৃষ্টি হয়।
মোহাম্মদ আলী শ্বাস-প্রশ্বাস জটিলতায় ভুগছিলেন। এ সমস্যার কারণেই সম্প্রতি তাঁকে ফনিক্সের এক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পারকিনসন রোগের কারণে শ্বাস-প্রশ্বাস জটিলতা গুরুতর হয়ে দেখা দেয়।
মোহাম্মদ আলীর পরিবারের পক্ষ থেকে শুক্রবার রাতে তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়। তিনবারের এই হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নের জানাজা আগামী শুক্রবার তাঁর জন্মস্থান কেন্টাকি অঙ্গরাজ্যের লুইসভিলে অনুষ্ঠিত হবে।
মোহাম্মদ আলীর পরিবারের মুখপাত্র বব গানেল বলেন, মোহাম্মদ আলী ছিলেন বিশ্ব নাগরিক। তাই বিশ্বের অনেক স্থান থেকেই মানুষ তাঁর শেষকৃত্যে অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
মোহম্মদ আলীর মৃত্যুর খবর গতকাল শনিবার সারা বিশ্বের সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয়। প্রায় সব বিশ্বনেতাই মোহাম্মদ আলীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। তাঁর স্মরণে বাণী দিয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, ব্রাজিলের কিংবদন্তি ফুটবলার পেলে।
১৯৬০ সালে রোম অলিম্পিকে লাইট হেভিওয়েড বক্সিংয়ে সোনা জয়ের মধ্য দিয়ে মোহাম্মদ আলী খ্যাতি অর্জন করেন। এর পরপরই পেশাদার মুষ্টিযুদ্ধে লড়েন আলী। ‘দ্য গ্রেটেস্ট’ বলে খ্যাত এই মুষ্টিযোদ্ধা ১৯৬৪ সালে মার্কিন মুষ্টিযোদ্ধা সনি লিস্টনকে হারিয়ে মাত্র ২২ বছর বয়সে হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হন। প্রথম মার্কিন মুষ্টিযোদ্ধা হিসেবে তিনবার হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হন আলী। ৬১টি মুষ্টিযুদ্ধের ৫৬টিতেই জয় পান তিনি, এর মধ্যে ৩৭টিই ছিল নকআউট (প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী)। ১৯৮১ সালে অবসর নেন মোহাম্মদ আলী।
১৯৯৯ সালে ক্রীড়া সাময়িকী ‘স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড’ মোহাম্মদ আলীকে ‘স্পোর্টসম্যান অব দ্য সেঞ্চুরি’ ঘোষণা করে। একই বছর বিবিসি তাঁকে ঘোষণা করে ‘স্পোর্টস পার্সোনালিটি অব দ্য সেঞ্চুরি’।
মুষ্টিযুদ্ধের বাইরেও বিখ্যাত ছিলেন মোহাম্মদ আলী। নাগরিক অধিকারকর্মী এবং কবি হিসেবে খেলা, বর্ণ ও জাতিসত্তার ঊর্ধ্বে ছিলেন তিনি। ১৯৬৪ সালে ইসলামী সংগঠন নেশন অব ইসলামে যুক্ত হন মোহাম্মদ আলী এবং ১৯৭৫ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে তাঁর নাম পরিবর্তিত হয়।