ভারতে সৌদি কূটনীতিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ

ভারতে সৌদি আরবের দূতাবাসের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তা ও ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন দুই নেপালি নারী। গুরগাঁওয়ে নিজের ফ্ল্যাটে আটকে রেখে ওই দুই নারীকে খেতে না দিয়ে ওই কর্মকর্তা বারবার ধর্ষণ করেছেন বলে তাঁরা অভিযোগ করেছেন।
চার মাস আগে ওই সৌদি কর্মকর্তার বাসায় গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজে যোগ দেন ওই দুই নারী কর্মী। একটি বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে খবর পেয়ে গত সোমবার রাতে সৌদি কর্মকর্তার বাসায় অভিযান চালিয়ে ওই দুই নারীকে উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার গণধর্ষণ ও অন্যায়ভাবে আটকে রাখার অভিযোগ এনে গুরগাঁওয়ের ডিএলএফ-দুই থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবে অভিযোগে ওই সৌদি আরবের নাগরিকের নাম উল্লেখ করেনি পুলিশ। কারণ, কূটনৈতিক দায়মুক্তির কারণে পুলিশ তাঁকে সম্ভবত গ্রেপ্তার করতে পারবে না।
এ ক্ষেত্রে পুলিশ অভিযোগপত্র দেওয়ার পর ভারত সরকার সৌদি সরকারকে অভিযুক্ত কর্মকর্তার দায়মুক্তি রদ করতে অনুরোধ করতে পারে। তবে যদি সৌদি সরকার কূটনৈতিক সমাধান চায় এবং ওই কর্মকর্তাকে সোজা প্লেনে তুলে রিয়াদে পাঠিয়ে দেয়, তাহলে ভারত আর কোনোভাবেই আইনের আশ্রয় নিতে পারবে না।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে একটি সংবাদ সংস্থার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, এ অভিযোগকে মিথ্যা বলে জানিয়েছে সৌদি দূতাবাস। তারা এটাও বলেছে যে, কূটনৈতিক নিয়ম অনুযায়ী ভারত সরকার এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেয়, তা দেখতে অপেক্ষা করবে সৌদি দূতাবাস।
দূতাবাসের এক কর্মকর্তা বলেছেন, এভাবে তৃতীয় পক্ষের কাছ থেকে অভিযোগ শুনে একটি দেশ ও তার নাগরিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা ও তাদের সম্মান নষ্ট করছে পুলিশ। এটাকে কূটনীতিক ও তাঁর পরিবারের জন্য যে আইন আছে, তার লঙ্ঘন বলেও মনে করেন তিনি।
বেসরকারি সংস্থা মাইতি ইন্ডিয়ার প্রধান কৃষ্ণ পান্ডে জানান, ১০ দিন আগে ওই সৌদি কূটনীতিকের বিলাসবহুল ফ্ল্যাট থেকে মাত্র তিন দিন কাজ করে পালিয়ে চলে আসে এক নেপালি গৃহকর্মী। তবে পালিয়ে আসার আগে নিজের টেলিফোন নম্বর দিয়ে আসে ফ্ল্যাটে থাকা অন্য দুই কর্মীকে। পরে ওই পালিয়ে আসা কর্মীর কাছ থেকে খবর পেয়ে মাইতি ইন্ডিয়া বিষয়টি পুলিশকে জানায়।
কৃষ্ণ পান্ডে আরো বলেন, ‘বিষয়টি আমরা প্রথমে নেপাল দূতাবাসকে জানাই। এর পরে সোমবার গুরগাঁও পুলিশের একটি দল নিয়ে আমরা ওই বাসায় যাই। দরজায় ঘণ্টা বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে এক নারী দরজা খুলে আমাদের সঙ্গে থাকা নারী পুলিশ সদস্যের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় শুরু করেন। ঘরের ভেতরে আমরা ওই দুই নেপালি গৃহকর্মীকে সৌদি পরিবারটি দ্বারা নিপীড়িত হতে দেখলাম। এর পর পুলিশ ওই গৃহকর্মীকে উদ্ধার করে।’
এর পর ওই দুজনের শারীরিক পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষায় তাঁদের ওপর যৌন হেনস্তার প্রমাণ পাওয়া যায়।
এ দুই গৃহকর্মীর মধ্যে একজন পুলিশকে জানিয়েছেন, চার মাস আগে নেপালের পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার পর তাঁর পরিচিত কল্পনা নামের এক নারী তাঁকে আনোয়ার নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে নতুন চাকরি দেওয়ার কথা বলে দিল্লি পাঠায়। সেখানে নেপালের আরো এক নারী কর্মীসহ আনোয়ার তাঁদের দুজনকে ওই সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তার বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজে নিয়োগ দেয়।
প্রায় এক মাস আগে এ দুই গৃহকর্মীকে জেদ্দায় নিয়ে যান ওই দূতাবাসের কর্মকর্তা। সেখানে একটি হোটেলে জোর করে কাজ করতে বাধ্য করা হয় তাঁদের। তবে সেখান থেকে গুরগাঁওয়ে ফিরে আসার পর তাঁদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা ভয়ংকরভাবে বেড়ে যায়। দুই গৃহকর্মী জানান, তাঁদের দুজনকেই বারবার ধর্ষণ করেছেন ওই কর্মকর্তা। কখনো কখনো ছুরি দিয়ে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়েও ধর্ষণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে ওই বাড়িতে আসা অতিথিদের শরীর টিপে দিতে হতো তাঁদের। সে সময়ও তাঁরা অতিথিদের দ্বারা ধর্ষিত হয়েছেন।
গুরগাঁওয়ের সহকারী পুলিশ কমিশনার রাজেশ কুমার টাইমস অব ইন্ডিয়াকে জানান, গতকাল আদালতে নির্যাতিত দুই গৃহকর্মীর জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশ তদন্ত অব্যাহত রেখেছে।
ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩২৩, ৩৪২, ৩৭৬-এর ২, ৩৭৬-এর ডি, ৩৭৭, ৫০৬ এবং ১০২-এর বি ধারা অনুযায়ী অন্যায়ভাবে বন্দি করে রাখা, হেফাজতে থাকা নারীকে জোর করে ধর্ষণ, গণধর্ষণ, হত্যার হুমকি এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়েছে।
পুলিশ কমিশনার নবদ্বীপ সিং জানিয়েছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সৌদি দূতাবাসকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছে পুলিশ। অভিযুক্ত ব্যক্তি কূটনৈতিক দায়মুক্তি পাবেন কি না, খতিয়ে দেখতে সৌদি সরকারের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী এ ঘটনার তদন্ত চলবে বলেও জানান তিনি।