দুই হেনস্তাকারীকে একাই পেটাল মেয়েটি

একদিন সন্ধ্যায় ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরী একা একা ঘরে ফিরছিল। স্বভাবতই হয়রানিকারীদের সহজ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হলো সে। দুই মাতাল ব্যক্তি তাকে একা পেয়ে পথরোধ করে এবং যথারীতি তাকে ধরতে আসে।
এবার ওই কিশোরীর পালা। দুই ব্যক্তির মুখে ঘুষি মারে সে। এর পর ওই ব্যক্তিদের শরীরের এমন স্থানে লাথি মারে যেখানে মারলে সবচেয়ে বেশি ব্যথা লাগে। একপর্যায়ে মারতে মারতে রক্তাক্ত করে ফেলে দুই ব্যক্তিকে। শেষ পর্যন্ত কোনোরকমে প্রাণ নিয়ে পালায় সেই দুই ব্যক্তি।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার উত্তর দিকে মধ্যমগ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। অথচ এই এলাকায় যৌন হেনস্তা ও ধর্ষণের ঘটনা খুবই স্বাভাবিক। প্রায় প্রতিদিনই এই ভয়াবহ ঘটনার মধ্য দিয়ে যেতে হয় স্থানীয় মেয়েদের। সেখানে এভাবে হেনস্তাকারীদের সঙ্গে লড়াই করে রীতিমতো নায়ক হয়ে গেছে ওই ১৬ বছর বয়সী মেয়েটি।
এ বিষয়ে ভারতের জনপ্রিয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে আলাপচারিতার সময় আত্মবিশ্বাসে ভরপুর ছিল মেয়েটি। সে বলে, ‘মেরে মুখ ফাঠিয়ে দিয়েছি। তাদের যা প্রাপ্য সেটাই তারা পেয়েছে। আমি তাদের ভয় পাই না। এক বছর আগে আমি কারাতে শিখতে শুরু করি এই ভয়ে যে, হয়তো কোনো একদিন আমি যৌন হেনস্তার শিকার হব। কারণ আমাদের শহরে নারীদের বিরুদ্ধে হওয়া অপরাধের সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে। আমি সবসময় চাইতাম যেন নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারি। আমি সত্যি খুব আনন্দিত যে এটা আমি করতে পেরেছি।’
ওই মেয়েটিকে হেনস্তা করতে আসা দুই ব্যক্তি সম্পর্কে জানা যায়, এরা স্বভাবগতভাবেই অপরাধী। দোলতলা এলাকায় এদের পাঁচজনের একটি দল আছে যারা প্রায়ই রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া নারীদের দেখলে আজেবাজে মন্তব্য করে। এ বিষয়ে কিশোরীটি বলে, ‘গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই এরা আমাকে আর আমার বন্ধুদের উদ্দেশ্য করে আজেবাজে মন্তব্য করছিল। আমি এ বিষয়ে স্থানীয়দের কাছে অভিযোগও করেছিলাম। কিন্তু কেউ এদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। এরা স্থানীয় নারীদের জন্য আতঙ্কের মতো। কিন্তু সেদিন সন্ধ্যায় এরা মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে এদের সঙ্গে লড়াই করব।’
সোমবার সন্ধ্যায় কারাতে ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরছিল মেয়েটি। পরনে ছিল ট্র্যাক স্যুট। এমন সময় ওই দুই ব্যক্তি তাকে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করে। টাইমস অব ইন্ডিয়াকে মেয়েটি আরো বলে, ‘ওরা দুজন সাইকেল নিয়ে আমার পথরোধ করে। এরপর আমাকে টানতে থাকে। একপর্যায়ে আমি পড়ে যাই। তারা দুজনেই মাতাল অবস্থায় ছিল এবং আমাকে নিয়ে অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলছিল। যখন আমি প্রতিরোধ করি তখন তারা আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকে।’
এরপর মারপিটের বর্ণনা দেয় ওই কিশোরী। সে বলে, ‘আমি একজনের কপালে এবং অন্যজনের মুখে ঘুষি মারি। এর ফলে প্রথমজন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় এবং দ্বিতীয় ব্যক্তি মুখে হাত দিয়ে মাটিতে পড়ে যায়। আমি তার আঙুলের ফাঁক দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়তে দেখছিলাম। প্রথম ব্যক্তি আমাকে ঘুষি মারতে চেষ্টা করে কিন্তু আমি তাকে পাল্টা ঘুষি মারলে দুজনেই মাটিতে পড়ে যায়।’
এ সময় আশপাশের পথচারীরা দাঁড়িয়ে পুরো দৃশ্য দেখছিল। কিন্তু কেউ মেয়েটিকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। মেয়েটির কাছে মার খেয়ে দুই হেনস্তাকারী সাইকেলে করে পালিয়ে যায়। তবে যাওয়ার সময় মেয়েটিকে দেখা নেবে বলে শাসিয়ে যেতে ভোলেনি তারা।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দা শংকরি হালদার বলেন, ‘মেয়েটির সাহস দেখে আমি অবাক। তার লাথি ও ঘুষি খেয়ে দুই ব্যক্তি ধরাশায়ী হয়ে গেল। তবে এটা দুর্ভাগ্যজনক যে অপরাধীরা পালিয়ে গেছে। আমি মনে করি অন্য মেয়েদেরও মার্শাল আর্ট শেখা উচিত- যাতে এ রকম ব্যক্তিদের তারা শায়েস্তা করতে পারে।’
এ ঘটনায় মেয়েটি থানায় একটি এজাহার দায়ের করেছে। পুলিশ বলছে, অভিযুক্তদের একজনকে তারা শনাক্ত করেছে এবং এদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান চলছে।
সবশেষে মেয়েটি বলে, ‘যখন আমি কারাতে শিখতে শুরু করি তখন আমার বাবা-মা আমাকে সমর্থন করেননি। কিন্তু এখন থেকে আর কখনো মার্শাল আর্ট অনুশীলন বন্ধ করব না আমি।’