ভারতে জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন করা উচিত : বাবা রামদেব

ভারতের যোগগুরু হিসেবে পরিচিত রামদেব বলেছেন, জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য দেশটিতে আইন তৈরি করা উচিত। ভারতের উচিত জন্ম নিয়ন্ত্রণে চীনের মতো এক সন্তান নীতি অনুসরণ করা। আজ রোববার ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের কুরুক্ষেত্রে এক অনুষ্ঠানে গিয়ে রামদেব এমন মন্তব্য করেন।
রামদেবের উল্লিখিত মন্তব্য জন্মহার নিয়ে ভারতের হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে বিতর্ক আবার উসকে দিয়েছে। অনেকের মতে, বিহারে বিধানসভা নির্বাচনের আগে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে হাওয়া তুলে ভোট ব্যাংক শক্ত করতে চাইছেন যোগগুরু।
মুসলমান সম্প্রদায়ের নাম না করে রামদেব বলেন, ‘২০১১ সালের ধর্মভিত্তিক জনগণনায় দেখা গেছে ভারতে বিশেষ এক ধর্মের মানুষ হিন্দুদের চেয়ে বেশি সন্তানের জন্ম দিচ্ছে। এটা কখনোই উচিত নয়। এর ফলে আগামী দিনে ভারত অপুষ্টি, অশিক্ষা, কুসংস্কার আর ক্ষুধার অন্ধকারে ডুবে যাবে। তাই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত অবিলম্বে জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন প্রণয়ন করা।
রামদেব আরো বলেন, ভারতে হিন্দুদের পাশাপাশি শিখ ও অন্যান্য কিছু সম্প্রদায়ের জন্মহার যেখানে কমেছে, সেখানে বিশেষ সম্প্রদায়ের জন্মহার কীভাবে বাড়ছে তাও গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা প্রয়োজন। জন্ম নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ভারতকে অনুসরণ করতে হবে চীনের নীতি। এক সন্তান নীতির কারণে চীন অনেক উন্নতি করেছে, তাই ভারতেরও সেই পথে হাঁটা উচিত।
২০০১ সাল থেকে ২০১১ সালের মধ্যে ভারতে হিন্দুদের জন্মের হার তার আগের দশকের থেকে কমে গেছে। ২০০১ সালের হিসাবে হিন্দুদের হার ছিল মোট জনসংখ্যার ৮০ দশমিক ৫ শতাংশ, সেটাই ২০১১ সালে কমে হয়েছে ৭৯ দশমিক ৮ শতাংশ।
জনসংখ্যার হারের পরিসংখ্যান সামনে আসার পর অবশ্য অনেকে মনে করছেন, স্বাধীনতার পর থেকে কখনোই এত কম হারে মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্ম হার বাড়েনি ভারতে। অথচ এক শ্রেণীর বিজেপি নেতারা সেই হিসাব দেখিয়েই প্রমাণ করতে চাইছেন, আগামী দিনে গোটা ভারতের দখল নেবে মুসলিম সম্প্রদায়। ওই মহল প্রচারও চালাচ্ছে, আগামী দিনে জন্ম হারের হিসাবেই মুসলিমরা নাকি হিন্দুদের ছাপিয়ে ভারতকেও আর একটি মুসলিমপ্রধান দেশ হিসেবে গড়ে তুলবে। অথচ বাস্তব তথ্য বলছে, ২০০১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ভারতে মুসলমান জনসংখ্যা বেড়েছে ২৪.৬ শতাংশ। আর হিন্দুদের সংখ্যা বেড়েছে ১৬.৭৬। এই হার মুসলিম সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে যদি আর না বেড়ে যায় তাহলে ধরে নেওয়া যায়, এই হার আগামীতে অপরিবর্তিত থাকলেও জনসংখ্যার বিচারে ভারতের মাটিতে হিন্দুদের টপকে যেতে মুসলমানদের সময় লাগবে আরো প্রায় ২০০ বছর। অথচ গেরুয়া শিবির-ঘনিষ্ঠ একটি মহল ‘গেল গেল’ রব তুলে প্রচারে নেমেছে ২০৫১ সালেই নাকি ভারত মুসলিম প্রধান রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
জনসংখ্যার হার নিয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যেও ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে বিভাজন রেখা। বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছে, আসলে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণের বেড়ি পরাতে এই প্রচারকে আরো উসকে দেওয়া হচ্ছে। সেখানে দাঁড়িয়ে বিজেপি ঘনিষ্ট রামদেব বাবার জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন তৈরি এবং বিশেষ সম্প্রদায়ের জন্মহার কীভাবে বাড়ছে তা নিয়ে মন্তব্য ফের বিতর্কে পানি ঢেলে দিয়েছে।