৬৮ মোমবাতির আলোয় স্বাগতম ‘স্বাধীনতা’

কোথাও সামিয়ানা টানানোর কাজ চলছে। আবার কোথাও চলছে কাঠ পাটাতন দিয়ে মঞ্চ তৈরির কাজ। দিনরাত খেটে এভাবেই এখন উৎসবের প্রস্তুতিতে মেতেছে ভারত ও বাংলাদেশের ছিটমহলের মানুষজন।
বিগত ৬৮ বছর ধরে নাগরিকত্বহীন অবস্থায় থাকা এখানকার বাসিন্দাদের অনেকেই এ দিন রাতে ৬৮টি মোমবাতি জ্বালিয়ে এত দিনের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার আনন্দে মেতে উঠবেন। কেউবা ওই রাতে মশাল জ্বালিয়ে দীর্ঘ দিনের কালিমা ঘুচিয়ে নতুন আলোর বার্তাকে উপভোগ করবেন।
আর মাত্র কিছু সময়, তারপরই আসবে সেই প্রত্যাশিত মুহূর্ত। রাত পোহালেই স্বাধীনতার স্বাদ পাবেন ছিটমহলের মানুষ।
৩১ জুলাই মধ্যরাতে ইতিহাসের পাতা থেকে চিরতরে অবসান ঘটবে ছিটমহলের। এ দিন মধ্যরাত থেকেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতীয় ছিটমহলের বাসিন্দারা যেমন বাংলাদেশের নাগরিক বলে গণ্য হবেন, তেমনি ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশি নাগরিকরাও ভারতীয় বাসিন্দা বলে গণ্য হবেন। এ ছাড়া যারা দেশ পরিবর্তন করতে চান তারাও তাঁদের ইচ্ছানুযায়ী দেশের বাসিন্দা হিসেবে পরিচিতি পাবেন। ফলে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যরাতকে স্মরণীয় করে রাখতে এখন থেকেই উৎসাহ ও উদ্দীপনার পারদ চড়ছে ভারত বাংলাদেশ দুই পারের ছিটমহলে। চলছে নানা অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি।
দুই দেশের ১৬২টি ছিটমহলে ৩১ জুলাই রাত ১২টা বেজে ১ মিনিটে একযোগে পালিত হবে নানা কর্মসূচি। ৬৮ বছর ধরে নাগরিকত্বহীন অবস্থায় থাকা এখানকার বাসিন্দাদের অনেকেই এদিন রাতে ৬৮টি মোমবাতি জ্বালিয়ে এত দিনের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার আনন্দে মেতে উঠবেন। কেউ বা ওই রাতে মশাল জ্বালিয়ে দীর্ঘ দিনের কালিমা ঘুচিয়ে নতুন আলোর বার্তাকে উপভোগ করবেন। এ ছাড়া ওইদিন রাতভর দুই দেশের ছিটমহলগুলোতে চলবে নানা ধরনের গান-বাজনাসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। স্থানীয় মন্দির, মসজিদ ও গীর্জাতেও চলবে প্রার্থনা। ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির তরফেও ওই দিন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে বলে জানালেন, কমিটির সহসম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘দুই পারের ছিটমহলেই আমাদের অনুষ্ঠান করা হবে। ভারতের কোচবিহার জেলার দিনহাটা মহকুমার মশালডাঙ্গাতে করা হবে মূল অনুষ্ঠান। রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত চলবে ওই অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে তথ্যচিত্রের মাধ্যমে ছিটমহলের অতীত ইতিহাস, সেখানকার মানুষের এত দিনকার জীবনযাত্রা, আন্দোলনের কাহিনী তুলে ধরা হবে। তবে ছিটমহলের বাসিন্দারা এখন থেকে ভারত ও বাংলাদেশের বাসিন্দা হয়ে গেলেও তাদের সুবিধা-অসুবিধায় পাশেই থাকবে ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি। আগামী দিনে এই কমিটি দুই দেশের ছিটমহলবাসীর সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে সবসময়ই পাশে থাকবেন বলে জানিয়ে দেন দীপ্তিমান সেনগুপ্ত।