গ্রেনফেল টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে নিহত বেড়ে ১২

যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের গ্রেনফেল টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১২ জনের পৌঁছেছে। স্থানীয় সময় বুধবার ওই ভবন থেকে ১২টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ভবন থেকে উদ্ধার হওয়া বাসিন্দারা জানিয়েছে, অনেকেই আগুনের মধ্যে সেখানে আটকা পড়েছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দিবাগত রাত সোয়া ১টার দিকে শহরের উত্তর ক্যানসিংটন এলাকার ওই ভবনে আগুন লাগে। ভবনটি গত শতাব্দীর সত্তরের দশকের। সেখানে অনেক আবাসিক ফ্ল্যাট রয়েছে। আগুন লাগার পর উদ্ধারকর্মীরা সেখান থেকে ৬৫ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। এদের মধ্যে ১৮ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাঁরা মোট ৬৮ জনকে লন্ডনের ছয়টি হাসপাতালে ভর্তি করেছে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ভবন থেকে ‘উল্লেখযোগ্য সংখ্যক’ লোককে সরিয়ে নেওয়ার কথা জানালেও লন্ডনের মেয়র সাদেক খান জানিয়েছেন, এখনো সেখানে ‘অনেক লোক’ আটকা পড়ে আছে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, ভবনের দ্বিতীয় থেকে সর্বশেষ তলা পর্যন্ত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের ৪০টি ইঞ্জিন ও ২০০ কর্মী ঘটনাস্থলে আছেন। আগুন লাগার সময় ভবনের বাসিন্দাদের অনেকেই ঘুমে ছিল।
লন্ডন পুলিশ জানায়, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। উদ্ধারকাজ চলছে। কালো ধোঁয়া শরীরের ভেতরে ঢুকে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তা স্টুয়ার্ড ক্যান্ডি ১২টি লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, হতাহতের ঘটনা আরো বাড়তে পারে। এখানে জটিল পরিস্থিতির মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাতে হচ্ছে। নিহতদের শনাক্তের পাশাপাশি খুব দ্রুতই আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধান করবে পুলিশ।
লন্ডন ফায়ার ব্রিগেডের সহকারী কমিশনার স্টিভ অ্যাপটার জানিয়েছেন, এখনো ওই ভবনের কিছু স্থানে আগুন জ্বলছে। সেসব জায়গায় প্রবেশ করা খুব কষ্টসাধ্য। তারপরেও সমস্ত ভবনে কাজ করে যাচ্ছে উদ্ধারকর্মীরা।
এ ঘটনার পর পরই পুলিশের পক্ষ থেকে সহযোগিতার জন্য তথ্যকেন্দ্র খোলা হয়েছে। গভীর শোক প্রকাশ করে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে।
ফাবিও ববলার নামের একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আগুন লাগার পর ভবনের বাসিন্দারা জানালার কাছে এসে সাহায্য চেয়ে চিৎকার করছিলেন। সময় বাড়ার সঙ্গে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আগুন। সঙ্গে বাড়তে থাকে মানুষের আর্তনাদ। গ্রেনফেল টাওয়ারে এমনটি হচ্ছে, তা বিশ্বাস করা যায় না।
পল মনার্ক ওই ভবনের সপ্তম তলার বাসিন্দা। আগুন লাগার পর পরই তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন। তিনি ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, আগুন লাগার পর পরই আমি নেমে আসার চেষ্টা করি। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা ছিলেন। তারা আটকেপড়া লোকদের উদ্ধারে কাজ করছিলেন।
এ সময় অনেকেই ভবন থেকে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাচ্ছিলেন, বাইরে থাকা লোকজন তাদের ঝাঁপ দিতে নিষেধ করেন বলেও জানান পল মনার্ক।
প্রত্যক্ষদর্শী জুডি মার্টিন বলেন, ‘আমি এক ব্যক্তিকে ভবন থেকে লাফিয়ে পড়তে দেখেছি। আরেকজন মা তাঁর শিশু সন্তানকে নিয়ে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি বেরিয়ে আসার জন্য চিৎকার করছিলেন।
১৯৭৪ সালের ২৪ তলা গ্রেনফেল টাওয়ার তৈরি হয়। এর মধ্যে ২০তলা আবাসিক আর চারতলা বাণিজ্যিক। এখানে ১২০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। ২০১৬ সালেই এর সংস্কারকাজ করা হয়।