চীনে করোনাভাইরাসে ১০৬ জনের মৃত্যু, ছড়াচ্ছে অন্য দেশেও

চীনে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের আতঙ্কে একরকম ভুতুড়ে পরিবেশে দিন যাপন করছে মানুষ। সেইসঙ্গে দিন যত যাচ্ছে, ততই বাড়ছে প্রাণহানির সংখ্যা। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আজ মঙ্গলবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১০৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার হাজারেরও বেশি। তাঁদের মধ্যে অন্তত ৭০০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
এদিকে চীন থেকে এ ভাইরাস অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ছে। এখন পর্যন্ত মোট ১৭টি দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, কানাডা, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, নেপাল, ভিয়েতনাম, হংকং, ম্যাকাউ, কম্বোডিয়া, জার্মানি ও শ্রীলঙ্কায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।
এরই মধ্যে ভাইরাসটির সংক্রমণের আতঙ্কে হংকংয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ও সিডনিতে কয়েকজন রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে ফ্রান্সে তিনজন, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রেও বেশ কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। যুক্তরাজ্য ও স্কটল্যান্ডে ৩০ জনেরও বেশি মানুষকে সন্দেহমূলকভাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ভারতের কেরালা ও মহারাষ্ট্রে অন্তত ২০০ জনকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
এদিকে জার্মানির বাভারিয়া প্রদেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত এক ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। এই প্রথম দেশটিতে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত কাউকে শনাক্ত করা হলো। বাভারিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
বাভারিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার রাতে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আক্রান্ত ব্যক্তিকে একটি পৃথক ওয়ার্ডে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তবে বাভারিয়া প্রদেশে করোনাভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি ‘কম’ বলে দাবি স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে এমন ব্যক্তিদের করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য উপসর্গ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার পন্থা এবং ভাইরাসটি সংক্রমণের সম্ভাব্য উপায়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়েছে।’
এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত চীনের কয়েকটি শহরে যাতায়াতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। রাজধানী বেইজিং, শি-য়ান ও তিয়ানজিনের সঙ্গে ইন্টারসিটি বাস সার্ভিস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ভাইরাসটির উৎসস্থল হুবেই প্রদেশের উহান শহরের গণপরিবহন, ট্রেন ও বিমান চলাচল কয়েক দিন আগে থেকে বন্ধ করার রোববার থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলও নিষিদ্ধ হয়েছে। বলা হচ্ছে, উহান শহরের পরিস্থিতি ভুতুড়ে। বাজারঘাট ও যান চলাচল সব বন্ধ রয়েছে। শুধু দু-একটি সুপারশপ খোলা রয়েছে। সেখানেও শুকনো খাবার ছাড়া আর কিছু পাওয়া যাচ্ছে না।
এরই মধ্যে চীনের চলমান এ পরিস্থিতিকে গুরুতর বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তিনি বলেন, ‘ভয়াবহ নতুন ভাইরাসটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। দেশ গুরুতর পরিস্থিতির মুখোমুখি।’
এদিকে রোববার দুপুরে সাপ, বাদুর, কুমির, ময়ূরসহ বন্যপ্রাণী কেনাবেচার ওপর দেশজুড়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করে চীনা কর্তৃপক্ষ।
চীনা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মাও জিয়াউই বলেন, ‘ক্লিনিক্যাল ডাটা নিয়ে আমরা গবেষণা করছি। এই ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা ধারণার চেয়েও বেশি। আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আশাবাদী।’
এদিকে, নতুন রোগীদের সামাল দিতে চীনে জরুরি ভিত্তিতে দ্বিতীয় হাসপাতাল নির্মাণের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। এটি নির্মাণে ১৫ দিনের মতো সময় লাগতে পারে। এর আগে এক হাজার শয্যার হাসপাতালের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে।
কয়েকটি গণমাধ্যম বলছে, উহানে অবস্থান করা চার শতাধিক বাংলাদেশির মধ্যে কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি। তাঁদের সুরক্ষা দিতে বাংলাদেশ দূতাবাস ২৪ ঘণ্টার হটলাইন চালু করেছে।