উহানের রাস্তায় বৃদ্ধের লাশ, পথচারীরা ছুটছেন যে যাঁর গন্তব্যে

মুখে মাস্ক, হাতে প্লাস্টিকের শপিং ব্যাগ, সাদা চুলের বয়োজ্যেষ্ঠ এক ব্যক্তি মরে পড়ে আছেন। কিন্তু তাঁর কাছে কেউ ঘেঁষছেন না। পথচারীরা যে যাঁর গন্তব্যে চলছেন। এমনই ভীতিকর দৃশ্য দেখা গেছে চীনের উহান শহরের গ্রাউন্ড জিরোতে রাস্তার ধারে একটি দোকানের সামনে।
এক কোটির বেশি মানুষের নগরীর এই রাস্তায় অন্যান্য সময় বেশ জনসমাগম থাকে, কিন্তু মারণঘাতী করোনাভাইরাসের আতঙ্কে রাস্তাঘাট প্রায় খালি। খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হতে পারছেন না। যে গুটিকয়েক লোক ওই পথ ধরে যাচ্ছেন, তাঁদের কেউ ভয়ে মৃতদেহটির খোঁজও নিচ্ছেন না।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির সাংবাদিকরা এমনটি দেখতে পান। কিছুক্ষণের মধ্যেই অবশ্য পুরো শরীর নিরাপদ পোশাকে ঢাকা চিকিৎসাকর্মীরা উপস্থিত হন। পড়ে থাকা ব্যক্তি মৃত কি না, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন। পরে পচননাশক ছিটিয়ে মৃতদেহটি হলুদ ব্যাগে ভরে জায়গাটি পরিষ্কার করে রেখে চলে যান চিকিৎসাকর্মীরা।
পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা মাও টুপি পরা এক নারী বলছিলেন, ‘আমার ধারণা লোকটি করোনাভাইরাসে মারা গেছে।’ উহানের ওই রাস্তায় এএফপির সাংবাদিকরা দুই ঘণ্টা অবস্থান করেন। এর মধ্যে অন্তত ১৫টি অ্যাম্বুলেন্সকে জরুরি গন্তব্যে ছুটে যেতে দেখেন তাঁরা।
চীনে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২১৩ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৯ হাজার ৭০০ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এদিকে করোনাভাইরাসের কিছু লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ায় অন্তত এক লাখ দুই হাজার মানুষকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এ খবর জানিয়েছে।

এরই মধ্যে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে চীনের সব প্রদেশ ও স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে। এর ফলে চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে রেল ও ফেরি যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে হংকং। এ ছাড়া দেশটির সঙ্গে বন্ধ রয়েছে যুক্তরাজ্যসহ জার্মানির লুফথানসা, অস্ট্রিয়ান ও সুইস এয়ারলাইনসের যোগাযোগ।
অন্যদিকে ১৮টি দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৯৮ ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। তবে চীনের বাইরে এই ভাইরাস সংক্রমণে কেউ মারা যাননি। চীনের বাইরে আক্রান্তদের বেশির ভাগই চীনের উহান শহর থেকে আসা। উহানসহ কয়েকটি নগরীতে আটকা পড়ে আছেন অন্তত ৫০ লাখ বাসিন্দা। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ফাঁকা রয়েছে মহাসড়কগুলো। কাজ ছাড়া খুব একটা বাইরে বের হচ্ছেন না কেউ।
চীনের বাইরেও ছড়িয়ে পড়া অব্যাহত থাকায় নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা—ডব্লিউএইচও। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, যেসব দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা তুলনামূলকভাবে দুর্বল, সেসব দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে।