টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল
রাবাদার বোলিং তোপে লণ্ডভণ্ড অস্ট্রেলিয়া, বিপর্যয়ে প্রোটিয়ারাও

আলো-আধারীর খেলায় বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের প্রথম দিন কেটেছে অস্ট্রেলিয়ার। দিনের শুরুতেই দক্ষিণ আফ্রিকার কাগিসো রাবাদা-মার্কো ইয়ানসেনদের তোপের মুখে অসহায় আত্মসমর্পন করেছে অসি ব্যাটাররা। মাঝখানে প্রতিরোধ গড়লেও স্থায়ী হয়নি সেটা। চা বিরতির পরে আরেক দফা বিপর্যয় ডেকে এনে হতাশ করেছে ব্যাটাররা। শেষ বিকেলে আবার আলো ছড়িয়েছেন স্টার্ক-কামিন্সরা। এতে প্রথম দিন শেষে বিপর্যয়ে পড়েছে প্রোটিয়ারাও।
টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে ২১২ রান তুলেছিল অস্ট্রেলিয়া। জবাব দিতে নেমে উইকেট ৪ হারিয়ে ৪৩ রান তুলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এখনো পিছিয়ে ১৬৯ রানে। হাতে উইকেট আছে ৬টি। প্রথম দিন শেষে অপরাজিত আছেন দুই ব্যাটার টেম্বা বাভুমা আর ডেভিড বেডিংহ্যাম। ৩৭ বলে ৩ রান করেছেন বাভুমা। আর ৯ বলে ৮ রান করেছেন বেডিংহ্যাম।
অস্ট্রেলিয়াকে নাকানি-চুবানি খাওয়ানোর নায়ক কাগিসো রাবাদা। ডানহাতি এই বোলারের বিপক্ষে কোনো প্রতিরোধ গড়তে পারেনি অসি ব্যাটাররা। খুঁজে পায়নি কোনো সমাধান। ফাইফার তুলে নিয়ে অনেকটা একাই ধসিয়ে দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনআপ।
শেষ বিকেলে জবাব দিতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকারও। প্রথম ওভারেই কোনো রান না করে ফেরত যান এইডেন মার্করাম। স্টার্কের করা ওভারের শেষ বলে ব্যাটের ভেতরের দিকে লেগে আঘাত হানে স্টাম্পে। আরেক ওপেনার রায়ান রিকেল্টন শুরু পেলেও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। ২৩ বলে ১৬ রান করে তিনিও শিকার হয়েছেন স্টার্কের।
দিন পার করার চেষ্টায় থাকা উইয়ান মুল্ডারও শেষ পর্যন্ত ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন। ৪৪ বলে ৬ রান করে প্যাট কামিন্সের বলে বিদায় নেন তিনি। ট্রিস্টান স্টাবসও ফিরে গেছেন দ্রুতই। তার ব্যাট থেকে এসেছে ২ রান। শেষ বিকেলে মাটি কামড়ে পড়ে থেকে আর উইকেট হারাতে দেননি অধিনায়ক বাভুমা। বেডিংহ্যামকে সঙ্গে নিয়ে দিন পার করে দিয়েছেন তিনি।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা মোটেও ভালো করতে পারেনি অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার উসমান খাজা আর মার্নাস লাবুশেন। সপ্তম ওভারে জোড়া আঘাত হানেন রাবাদা। ২০ বল খেলে কোনো রান না করেই ফিরে যান খাজা। সপ্তম ওভারের তৃতীয় রাবাদার বলে ডিফেন্স করার চেষ্টায় ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় স্লিপে। সেটাকে তালু বন্দি করেন বেডিংহ্যাম। উদ্বোধনী জুটিতে আসে মোটে ১২ রান।
তিন নম্বরে আসা ক্যামেরন গ্রিন এসে প্রথম বলেই রাবাদাকে চার মেরে শুরু করেন। ওভারের শেষ বলে সেটার জবাব দেন রাবাদা। গ্রিনকে ফেরান মার্করামের ক্যাচ বানিয়ে। ফেরার আগে ৩ বলে ৪ রান করেন তিনি।
এরপর অজিদের উপর চড়াও হন মার্কো ইয়ানসেন। দেখেশুনে খেলতে থাকা মার্নাস লাবুশেনকে ফিরিয়ে দেন তিনি। এক চারে ৫৬ বলে ১৭ রান করে ভেরেইনানের কাছে ধরা পড়েন তিনি। ট্রাভিস হেডও আশা দেখিয়ে ফিরে যান মধ্যাহ্ন বিরতির শেষ বলে। এক চারে ১১ বলে ১৩ রান করেন তিনি।
বাকিদের যাওয়া-আসার মিছিলে মাটি কামড়ে পড়েছিলেন অভিজ্ঞ স্মিথ। ওয়েবস্টারকে সঙ্গে নিয়ে দ্বিতীয় সেশনে দাপট দেখাতে থাকেন তিনি। পঞ্চম উইকেটে ম্যাচের সর্বোচ্চ ১১৪ বলে ৭৯ রানের জুটি গড়েন এই দুজন মিলে। মার্করামের বলে ইয়ানসেনের দুর্দান্ত ক্যাচে স্মিথ ফিরলে ভাঙে সেই জুটি। হাফসেঞ্চুরি তুলে অভিজ্ঞ এই তারকা খেলেন ১১২ বলে ৬৬ রানের ইনিংস।
স্মিথ ফিরলেও দলকে বিপদে পড়তে দেননি ওয়েবস্টার। অ্যালেক্স ক্যারিকে নিয়ে জুটি গড়েন তিনি। দ্বিতীয় সেশন নির্বিঘ্নে কাটিয়ে চা বিরতিতে যান তারা। বিরতি থেকে ফিরেই আরেক দফা ব্যাটিং ধ্বসে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। এক রান যোগ করতেই ফিরে যান ক্যারি। কেশব মাহারাজের বলে বোল্ড হওয়ার আগে করেন ২৩ রান।
এরপর দ্রুতই ফিরে যান প্যাট কামিন্স। তিনি করেন এক রান। সেঞ্চুরির দিকে এগুতে থাকা ওয়েবস্টারও এবার ধৈর্য হারিয়ে ফেললেন। রাবাদার বলে ধরা পড়েন বেডিংহ্যামের হাতে। এর আগে ১১ চারে ৯২ বলে করেন ৭৭ রান। দ্রুতই সাজঘরে ফিরে যান নাথান লায়ন আর মিচেল স্টার্ক।
স্টার্ককে ফিরিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৭তম ফাইফার তুলে নেন রাবাদা। ৫১ রনা খরচায় ৫ উইকেট তুলে নেন তিনি। ৩ উইকেট শিকার করেছেন ইয়ানসেন। সমান একটি করে উইকেট পেয়েছেন মার্করাম আর মাহারাজ।