ডিস্ক প্রলেপস কী, হলে করণীয়

মেরুদণ্ডের হাড় বা কশেরুকাকে ম্যাডিকেলের পরিভাষায় বলা হয় ভাট্রিব্রা। মেরুদণ্ডের দুটি কশেরুকার মধ্যে ফাঁকা থাকে যেখানে এক ধরনের ডিস্ক থাকে, যাকে – ইন্টার ভার্টিব্রাল ডিস্ক বলে। এই ডিস্ক যখন তার জায়গা থেকে সরে যায় তখন তাকে ডিস্ক প্রলেপস বলা হয়।
ডিস্ক প্রলেপস কেন হয়
বিভিন্ন কারণে ডিস্ক প্রলেপস হতে পারে। যেমন :
-আমাদের মেরুদণ্ডের সঙ্গে যে স্পাইনাল লিগামেন্ট ও মাংসপেশি থাকে এগুলো দুর্বল হয়ে গেলে।
-অসচেতনভাবে সামনের দিকে ঝুকে ভারী কিছু উঠাতে গেলে।
-আঘাত পেলে বা উঁচু স্থান থেকে পড়ে গেলে।
-দীর্ঘক্ষণ নিচে বসে কাজ করলে।
-এমনকি সামনের দিকে ঝুঁকে জুতার ফিতা বাঁধতে গেলে অথবা বেসিনে মুখ ধুতে গেলেও ডিস্ক প্রলেপস হতে পারে।
ডিস্ক প্রলেপস কোথায় হয়
সাধরণত ডিস্ক প্রলেপস আমাদের ঘাড় বা সারভাইক্যাল স্পাইন ও কোমর বা লাম্বার স্পাইনে বেশি হয়। সারভাইক্যাল স্পাইনের সি ৫-৬ ও সি ৬-৭ লেভেলে ও লাম্বার স্পাইনে এল ৪-৫ ও এল ৫ – এস ১ লেভেলে বেশি হয়।
কাদের বেশি হয়
এই সমস্যা নারী ও পুরুষ উভয়েরই হয়। তবে পুরুষের তুলনায় নারী এই রোগে বেশি ভুগে থাকে।
লক্ষণ
ঘাড় বা সারভাইক্যাল স্পাইন
-ঘাড়ে ব্যথা হয়।
-ব্যথা ঘাড় থেকে হাতের দিকে ছড়ায় ও হাতে তীব্র ব্যথা হয়।
-হাত ঝুলিয়ে রাখলে ও বিছানায় শুলে বেশি ব্যথা করে।
-হাত ঝিনঝিন করে বা অবশ অবশ মনে হয়।
-হাতের শক্তি কমে যায় বা হাত দুর্বল হয়ে আসে
-অনেকক্ষেত্রে হাতের মাংসপেশি শুকিয়ে আসে ইত্যাদি।
কোমর বা লাম্বার স্পাইন
-কোমরে ব্যথা হয়।
-ব্যথা কোমর থেকে পায়ের দিকে ছড়ায়।
-পা ঝিন ঝিন করে, অবশ অবশ মনে হয়।
-খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে কিংবা হাটলে আর হাঁটার ক্ষমতা থাকে না। তবে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলে আবার হাঁটতে পারে।
-পা ভারী বা অধিক ওজন মনে হয়।
-পায়ে জ্বালাপোড়া অনুভূত হয়।
-পায়ের শক্তি কমে যায় এবং অনেক ক্ষেত্রে মাংসপেশী শুকিয়ে যায়।
-অনেক ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রসাব ও পায়খানায় নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
ডিস্ক প্রলেপস নির্ণয়
একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ক্লিনিক্যালি পরীক্ষার পাশাপাশি আক্রান্ত স্পাইনের এম আর আই বা ম্যাগনেটিক রিজোনেনস ইমেজিং পরীক্ষার মাধ্যমে কোনো লেভেলে কতটুকু ডিস্ক প্রলেপস তা সঠিকভাবে নির্ণয় করে থাকেন।
চিকিৎসা
এর চিকিৎসা হল ওষুধের পাশাপাশি সম্পূর্ণ বিশ্রাম। অর্থাৎ হাঁটাচলা বা মুভমেন্ট করা যাবে না।পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা করা হয়। এ ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা অনুযায়ী দুই চার সপ্তাহ ফিজিওথেরাপি হাসপাতালে ভর্তি থেকে, দিনে দুই তিন বার চিকিৎসা নিতে হয়। পাশাপাশি চিকিৎসক নির্দেশিত থেরাপিউটিক ব্যায়াম করতে হয়।
সুস্থ হওয়ার পর যেসব সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। যেমন :
১. সামনের দিকে ঝুকে ভারী কাজ করা যাবে না।
২. ভারী জিনিস তোলা যাবে না।
৩. শক্ত বিছানায় শুতে হবে।
৪. ভ্রমণ ও হাঁটা-চলার সময় কোমড় বন্ধনী বা লাম্বার করসেট ব্যবহার করতে হবে।
৫. নিয়মিত চিকিৎসকের নির্দেশিত ব্যায়াম করতে হবে।
ডা. এম ইয়াছিন আলী : বাত, ব্যথা, পারালাইসিস ও ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ, চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমণ্ডি, ঢাকা ।