গরমে ত্বকে সমস্যা হচ্ছে?

গরমে ত্বকে বিভিন্ন সমস্যা হয়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৪২০তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক নাজমুল করিম মানিক। বর্তমানে তিনি সুমনা হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন।
urgentPhoto
প্রশ্ন : ত্বকের কী কী ধরনের সমস্যা নিয়ে এ সময়ে রোগীরা আপনাদের কাছে আসছে?
উত্তর : এ সময়ে গরম একদিকে যেমন, তেমনি ভ্যাপসা আবহাওয়া। আমাদের কাছে বেশির ভাগ রোগী ছত্রাক বা ফাংগাসের সংক্রমণ নিয়ে আসে। আমরা যারা অফিস-আদালতে কাজ করি, সারা দিন প্যান্ট, জামাকাপড় পরে থাকি, তাদের শরীরের ভেতর, বিশেষ করে যেসব অঙ্গে ভাঁজ, সেসব জায়গায় ঘাম জমে থাকার কারণে এই ছত্রাকের সংক্রমণ বেশি হয়। এ ছাড়া পানিতে কাজ করে বেশি বা রোদ-বৃষ্টিতে ভেজা পড়ে, তাদেরও এই ছত্রাকের সংক্রমণটা বেশি হয়। ছত্রাক বিশেষ করে শরীরের ভাঁজে হয়। এ ছাড়া অনেক সময় দেখা যায়, মাথায় হতে পারে, নখে হতে পারে এবং ভেতরের যেসব অঙ্গে বেশি ঘাম হয়, সেসব অঙ্গে এই ছত্রাকের সংক্রমণ হতে পারে।
প্রশ্ন : আর কী কী ধরনের সমস্যা নিয়ে রোগীরা আপনাদের কাছে আসে?
উত্তর : এ ছাড়া অন্যান্য ত্বকের সমস্যাও গরমে বেশি হয়। গরমে সোরিয়াসিস নিয়ে আসে। গরমে এক্সিমা নিয়ে আসে। গরমে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ নিয়ে আসে জীবাণুর। গরমে নারীরা ব্রণ নিয়ে আসে। বিশেষ করে যেহেতু তারা সাজগোজ করে, এখানে যে কসমেটিকস ব্যবহার করে, এর কারণে মুখে ব্রণের সমস্যা হয়। কসমেটিক ডার্মাটাইটিস নিয়ে আসে।
এ ছাড়া আমরা ঘড়ি পরি, গয়না পরি অথবা বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করি। এসব কারণে কনটাক্ট এক্সিমা বেশি হয়।
প্রশ্ন : ছত্রাকজনিত সমস্যায় আর কী কী ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পায়?
উত্তর : এগুলো বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম দেখা যায়। যদি শরীরে হয় দেখা যায় ছোট ছোট দানা দানা ওঠে গোল চক্রাকারে দেখা যায়। লাল লাল দানা দানা ওঠে এবং মাঝখানে পরিষ্কার থাকে। চারদিকে একটি গোল রিংয়ের মতো হয়। এ জন্য এগুলোকে রিং ওয়ার্ম বলা হয়। এই সংক্রমণ নখেও হতে পারে। এ ছাড়া মাথায় ও শরীরের যেসব জায়গায় ভাঁজ, সেখানেও হতে পারে।
প্রশ্ন : এ জাতীয় সমস্যা নিয়ে যখন রোগীরা আপনাদের কাছে আসছে, তখন কী কী পরামর্শ দিচ্ছেন?
উত্তর : আমরা প্রথমে তাদের পরামর্শ দিই আপনারা হালকা বা পাতলা কাপড়চোপড় পরবেন। বিশেষ করে এখন তো ফ্যাশন দেখা যায়, ভারী ভারী বোরখা পরে আসে। এই বোরখার কারণেও দেখা যায় মানুষের দাদ বা এই ছত্রাকের সংক্রমণটা বেশি হচ্ছে।
আমাদের দেশে যে আবহাওয়া, তাতে সবাইকে পরামর্শ দেওয়া আসলেই সম্ভব নয়। কারণ, উষ্ণতা প্রতিদিন বেড়ে যাচ্ছে। তারপরও আমরা বলি যখন ঘামে ভিজে যায়, এরপর শরীরটা ভালো করে মুছে নিতে হবে। এরপর কাপড় পরতে হবে। কাপড়ের বাড়াবাড়িটা একটু কম রাখতে হবে। তাহলে আমরা এ সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে পারব। বোরখা বা হিজাবও যদি কেউ করে, সেটিও আরামদায়ক কাপড় দিয়ে করতে হবে।
আর অসুখ হলে নিজে নিজে চিকিৎসা না করে, একটি পরামর্শ নিয়ে সুষ্ঠুভাবে চিকিৎসা করলে সংক্রমণটা থেকে ভালো হওয়া যায়। কারণ, ছত্রাকের একটি নির্দিষ্ট চিকিৎসা রয়েছে। চিকিৎসাটা যদি নেওয়া যায়, তাহলে সংক্রমণ থেকে ভালো হয়।
প্রশ্ন : কত দিন ধরে এই চিকিৎসা চলতে থাকে?
উত্তর : একেকজনের ওপর নির্ভর করে। তবে সাধারণত দুই থেকে তিন সপ্তাহ আমরা খাওয়ার ওষুধ দিই এবং লাগানোর জন্যও ওষুধ দিই। দুভাবে আমরা চিকিৎসা করে থাকি।
প্রশ্ন : শিশুদের ক্ষেত্রে কি এর প্রকোপ বেশি থাকে?
উত্তর : শিশুদের এ ধরনের ছত্রাকের প্রকোপ বেশি থাকে না। শিশুদের আবার অন্য ধরনের সমস্যা হয়। যেমন গলার ভাঁজে বা আঙুলের ভাঁজে যেসব জায়গায় পানি জমে থাকে, এসব জায়গায় শিশুদের সমস্যা দেখা যেতে পারে ছত্রাকের সংক্রমণটা। আর ডায়াপার পরার জন্যও রানের ভাঁজে ভাঁজে ছত্রাকের সংক্রমণ হয়।
প্রশ্ন : সেটির মধ্যেও কি একই ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পায়?
উত্তর : একই ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পায়। চুলকাতে থাকে। বেশি ছোট বাচ্চার মায়েরা বা অভিভাবকরা খেয়াল করে তাদের রানের ভাঁজে লাল হয়ে গেছে, সাদা সাদা, গুঁড়া গুঁড়া দেখা যায়। তখন আমরা একটি গায়ে লাগানো ওষুধ দিয়ে বলি এটি ব্যবহার করেন এবং ডায়াপার কম ব্যবহার করেন। বাচ্চা প্রস্রাব করলে যেন বারে বারে পরিবর্তন করা যায়। তাহলে এই সংক্রমণ থেকে বাচ্চাদের রক্ষা করা যায়।
প্রশ্ন : চিকিৎসার পরে আর কোনো পরামর্শ থাকে কি না, যাতে করে এই সমস্যা না হয়?
উত্তর : চিকিৎসার পরে আমরা তাদের বলে দিই যেহেতু বাংলাদেশের আবহাওয়া এমন, তাই আপনারা ঘামবেন। ঘামলে তাদের তাড়াতাড়ি মুছে ফেলতে বলি। শুকনো রাখতে বলি। শুকনো কাপড়চোপড় পরতে বলি। আর শরীরের কোনো অংশ যেন ভেজা না থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখতে বলি। আর যদি সংক্রমণ হয়ে যায়, তাহলে পরামর্শমতো চিকিৎসা নেওয়ার জন্য বলি।
প্রশ্ন : প্রতিরোধের জন্য কী করতে হবে?
উত্তর : ছত্রাক এমন একটি রোগ, যার প্রতিরোধ খুব একটা সম্ভব নয়। এরপরও আমরা রোগীদের বলি আপনারা হালকা কাপড়চোপড় পরবেন। ঢিলাঢালা কাপড়চোপড় পরবেন। গোসল বা শরীর ভিজবে এমন কোনো কাজ করার পর সঙ্গে সঙ্গে শরীর মুছে ফেলবেন। তাহলে আমরা এই সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকতে পারব।
প্রশ্ন : সঠিক সময়ে যদি চিকিৎসা করা না হয়, তাহলে কী কোনো জটিলতা হতে পারে?
উত্তর : একে আমরা সুপার ফেসিয়াল ছত্রাক বলি। এটা চামড়ার ওপরেই সংক্রমণ হয়। এই জন্য এটার কোনো জটিলতা নেই। তবে জটিলতার মধ্যে হলো এটা বিব্রতকর একটি সমস্যা। কোনো সমাজে, মজলিশে গেলে যদি অসম্ভব চুলকায়, এই চুলকানিটা মানুষের সমস্যা। এ জন্য এটা থেকে পরিত্রাণের জন্য আমরা পরামর্শ দিই যেন শুকনা থাকে এবং ভেজা অবস্থায় বেশিক্ষণ যেন অবস্থান না করে।
প্রশ্ন : আরো কিছু সমস্যার কথা বলছিলেন শিশুদের ক্ষেত্রে?
উত্তর : এই সময় অনেক বাচ্চারা চুলকানির সমস্যা নিয়ে আসে। বাচ্চাদের বিশেষ করে যারা ঘনবসতিতে থাকে, তাদের মধ্যে আমরা খোস-পাঁচড়ার প্রকোপ বেশি দেখি এই বর্ষার সময়।
খোস-পাঁচড়া এক ধরনের প্যারাসাইট। এটা হলে হাতের ভাঁজে, রানের ভাঁজে, বগলের ভাঁজে, শরীরে ছোট ছোট দানা দানা ফুসকুরি নিয়ে ওঠতে পারে অথবা পানি নিয়ে ওঠতে পারে। পরে এটা পুঁজও হতে পারে। এটা বিব্রতকর একটা সমস্যা। রাতে প্রচণ্ড চুলকায়। যদি ঘরের একজন আক্রান্ত হয়, দেখা যায় সবাই আক্রান্ত হচ্ছে।