গরমে ত্বকে যেসব সমস্যা হয়

গরমে ত্বকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২৩৮৮তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. তাওহিদা রহমান ইরিন। বর্তমানে তিনি শিওর সেল মেডিকেল বিডির পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।
urgentPhoto
প্রশ্ন : প্রচণ্ড গরম এখন। অসহনীয় তাপমাত্রা। কী কী ধরনের সমস্যা এই সময় ত্বকে হতে পারে? আর কেন হয়?
উত্তর : এখন কিন্তু আবহাওয়ার একটি বিরাট পরিবর্তন হয়েছে। গ্রীষ্মের শুরুতে দেখা যায়, কালবৈশাখী ঝড়, আর্দ্রতা। এর সাথে রয়েছে যানবাহনের দূষণ, পরিবেশ দূষণ, ধুলোবালি, ঘাম। সবকিছু মিলে আমাদের যে বড় অঙ্গ ত্বক, যেটি আমাদের আবৃত করে রাখে—সেখানে নানা ধরনের জীবাণুর সংক্রমণ দেখা দেয়। আর এ ছাড়া কিছু রোগও হয়। গ্রীষ্মে ত্বকে যেই অসুখগুলো বেশি দেখা যায় এগুলো ব্যাকটেরিয়া দিয়ে হয়, একে পায়োড্রামা বলি। পায়োড্রামার অনেক ভাগ আছে।
প্রশ্ন : কীভাবে বুঝব এই সমস্যাটি?
উত্তর : ইমপ্যাটিগো কনটাজিওসা একটি রয়েছে। এটি সাধারণত দুই থেকে ছয় বছরের বাচ্চাদের হয়। বড়দেরও হতে পারে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যদি কম থাকে। যেমন, ডায়াবেটিস। দেখা যায়, নাকে মুখে ঘাড়ে সোর (কালশিটে) হচ্ছে। পরে সেগুলো হলুদাভ হয়ে যায়।
এরপর রয়েছে বুলা সেমপেটিগো। সেটা দুই বছরের নিচের বাচ্চাদের বেশি হয়। সামার বয়েল বলি একে। ছোট ছোট পানির মতো গোটা হচ্ছে। এরপর একটি ঘন হয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।
এরপর ব্যাকটেরিয়া দিয়ে হয় ফলিকোলাইটিস। আমাদের যে লোমকূপগুলো আছে বা আমাদের মাথায় যে চুল আছে, এই ফলিকোলাইটিস চুল থেকে শুরু করে সারা শরীরে হচ্ছে। দেখা যায়, হাতে পায়ে এবং মাথায় এটি হচ্ছে। এর সাথে স্কাল্পে ডার্মাটাইটিস হয়। ইমপেটিগোর আরেকটি বিষয় আছে ইকথাইমা।
প্রশ্ন : কীভাবে যত্ন নিলে এই ধরনের সমস্যা থেকে ত্বক ভালো থাকবে?
উত্তর : গরমে যে সমস্যাগুলো হয় সেগুলোতে প্রচণ্ড অস্বস্তি হয়। প্রতিটা রোগেই হয়। ব্যাকটেরিয়াল, ফাংগাল যাই হোক না কেন। প্রথমে যদি আমি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে চলি, ত্বক পরিষ্কার রাখি তাহলে সুবিধা হয়। এই সময় আমরা দুইবার গোসল করতে পারি। গোসল করে আমরা যদি শরীরকে মুছে একটি ভালো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করি তাহলে ভালো হয়। ফলিকলাইটিস যে সমস্যাটি বললাম, এটি লোমকূপে হয়। তাই ত্বকের আনওয়ানটেড চুলগুলো যদি পরিষ্কার রাখি, তাহলে ভালো হয়। তবে মাথার চুল কিন্তু শেভ করতে বলছি না। সেই ক্ষেত্রে আমরা টপিক্যাল অ্যান্টিবায়োটিক দেই। সাথে সিস্টেমেটিক অ্যান্টিবায়োটিকও খেতে বলি। কারণ এটি দুই তিন সপ্তাহ থাকে।
আর মাথার এই সমস্যা দূর করার জন্য আগে থেকে সপ্তাহে তিনদিন অন্তত শ্যাম্পু করে, চুল পরিষ্কার রেখে ঠিকঠাক রাখতে পারি।
প্রশ্ন : আর কী কী বিষয় মাথায় রাখতে হবে?
উত্তর : প্রিকলিহিট, ঘাম খুব প্রচলিত একটি রোগ। ঘাম হচ্ছে এর কারণে ঘামাচি হচ্ছে। ছোট ছোট র্যাশ সারা শরীরে হচ্ছে, কাটার মতো খোঁচা দিচ্ছে। এটা চার-পাঁচদিনে চলে যায়। কিন্তু অনেক সময় এটি খুব ভোগায়, অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে। সে ক্ষেত্রে প্রিকলিহিট পাউডার ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু এখন আবার দেখা যায়, যাদের অ্যাজমার সমস্যা রয়েছে, প্রিকলিহিট পাউডারের গুঁড়োতে তারা আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে।
সেক্ষেত্রে একটি ভালো উপায় রয়েছে প্রিকলিহিট সাবান। গোসলের সময় আমরা সাবানটা ব্যবহার করলাম। জীবাণুটা মরে গেল। এরপরও যদি থেকে যায় আমরা একটি মাইল্ড টপিক্যাল স্টেরয়েড দেই। এরপরও অস্বস্তি বা চুলকানি থাকলে অ্যান্টি হিসটামিনের একটি ছোট কোর্স দেই। সাতদিন বা ১০ দিন।
প্রশ্ন : ফাঙ্গাল সংক্রমণ কি এই সময়ে ত্বকে বাড়ে?
উত্তর : ফাঙ্গাল মানে ত্বকের ভিতরে ভিতরে গাছ গজিয়ে বিভিন্ন রকম লক্ষণ প্রকাশ করে। এদের মধ্যে একটি আছে ডার্মাটোফাইট। ক্যানডিডাল ইন্টার ট্রিগো। এই ডার্মাটোফাইন নখে শরীরে মাথায়—পুরো শরীরেই প্রভাব ফেলতে পারে। ছোট ছোট রিং তৈরি করে। দানা দানা র্যাশ রিঙের মতো, মাঝখানে পরিষ্কার থাকে। একে রিং ওয়ার্ম বলি। এটা যদি শুধু কিছু জায়গায় হয়, আমরা টপিক্যাল অ্যান্টিফাংগাল দেই। কিন্তু এটা যদি বেশি হয় অন্য ওষুধ দেই।
প্রশ্ন : এর পেছনের কারণ কী?
উত্তর : এর পেছনের কারণ হলো ঘাম। ঘাম জীবাণুকে আকৃষ্ট করছে। তাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা মেনে চলতে হবে। আপনাকে মুছতে হবে। যখন ঘেমে যাবে বা আমরা যখনই ঘামি তখনই রুমাল দিয়ে মুছতে হবে। রুমাল সবসময় কাছে রাখতে হবে। শুকনো রাখতে হবে শরীর। আর এটি যদি বেশি পরিমাণে হয়ে যায়, তখন আমরা সিস্টেমিক অ্যান্টিফাংগাল দিয়ে থাকি। আর নখে যখন হয়, লোশনের মতো আছে সেটা দিয়ে চিকিৎসা দেই। চিকিৎসা এখন অনেক এগিয়েছে। শুধু ক্রিমের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। লোশন ইমালশন, সব কিছুই রয়েছে। যেভাবে ব্যবহার করলে আপনার জন্য সহজ হবে সেভাবে আপনি ব্যবহার করতে পারেন।