টক খেলে কি গলা ভাঙে?

অনেক কণ্ঠশিল্পী আছেন, যারা গলা ভাঙার আশঙ্কায় টক খান না। তাঁদের ধারণা, টক খেলে গলা ভাঙ্গে। আসলেই কি টক খেলে গলা ভাঙ্গে? না, টক খেলে গলা ভাঙ্গে না। টক খাওয়ার সঙ্গে গলা ভাঙ্গার কোনো সম্পর্ক নেই।
তবে সব কণ্ঠশিল্পীই যে টক খান না, তা কিন্তু নয়। টক খান এমনও অনেকে আছেন। সঙ্গীতশিল্পী আশা ভোঁসলে দূরদর্শনের এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি আচার খেতে ভীষণ পছন্দ করেন এবং নিয়মিত খেয়েও থাকেন। কাজেই বুঝতে পারছেন, গলা ভাঙার সাথে টকের কোনো সম্পর্ক থাকলে তিনি নিশ্চয়ই টক খেতেন না।
গলা প্রধানত ভাঙে চিৎকার চেঁচামেচি, অত্যাধিক কথা বলা, হঠাৎ ঠাণ্ডা লাগা, আইসক্রিম বা ফ্রিজের ঠাণ্ডা খাবার খাওয়া, ধূমপান, শ্বাসনালির তীব্র প্রদাহ, কর্ডের নডিউলসহ আরো কিছু অসুস্থতার কারণে। এখানে টকের কোনো ভূমিকা নেই।
অনেক সময় শ্বাসনালির মারাত্মক কিছু অসুস্থতার কারণেও গলার স্বর ভেঙে যায়। কাজেই গলা ভাঙ্গা দীর্ঘদিন স্থায়ী হলে, সেই ক্ষেত্রে সেটি হালকাভাবে নেওয়া ঠিক নয়। সাধারণ কারণে গলা ভাঙলে সাত থেকে ১০ দিন কথা বলা সম্পূর্ণ বন্ধ করে রাখলেই সেটি ভালো হয়ে যায়।
তবে কথা বলা বন্ধ না রাখলে স্বরের তো উন্নতি হবেই না, বরং গলার স্বর আরো ভেঙে যাবে। এভাবে গলার স্বর মাসখানেক ধরে ভাঙ্গা থাকলে তার পরিণতি মোটেই ভালো হবে না। অর্থাৎ সে ক্ষেত্রে গলার স্বর স্থায়ীভাবে ভেঙে যেতে পারে।
কিন্তু কথা বলা বন্ধ রাখার পরও যদি গলার স্বর ভাঙা রয়েই যায়, তবে নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিলে রোগ দ্রুত ভালো করা সম্ভব।
অনেকে আবার ভাঙা স্বর ঠিক করার জন্য গড়গড়া করেন। এতে গলা ভাঙা উপশমে কোনো কাজই হয় না। কাজেই গলা ভেঙে গেলে কথা বলা বন্ধ রাখুন, লিখে লিখে কথা বলুন। টক খাওয়ার ব্যাপারে বলি- টক অবশ্যই খাবেন। কারণ, যেকোনো টক জাতীয় ফলেই ভিটামিন সি থাকে। মাঢ়ির সুস্থতার জন্য ভিটামিন সি খুবই প্রয়োজন। এ ছাড়া শরীরের ক্ষত নিরাময়ের জন্য ভিটামিন সি প্রয়োজন। কাজেই গলা ভাঙ্গার মিথ্যা ভয়ে টক খাওয়া বন্ধ করবেন না।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, নাক কান গলা বিভাগ, হলি ফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট হাসপাতাল