ভ্রমণে সুস্থ থাকতে কী করবেন?

ঈদের ছুটিতে ঘরমুখো মানুষ গ্রামের বাড়ি ফিরছে বা এই ছুটির সময়কে ভালো করে উদযাপন করতে বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যাচ্ছে। তবে ভ্রমণের সময় অসচেতনতার কারণে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই উৎসবকে আনন্দমুখরভাবে পালন করতে এ সময়টায় সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ জানান, ভ্রমণের সময় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়া হয়। তখন আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে শরীরে সমস্যা হয়। এ ছাড়া অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলাফেরা বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করে। তাই কিছু বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখা জরুরি।
অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ আরো জানান, ধুলাবালি আছে এমন এলাকায় যাওয়া এড়িয়ে যেতে হবে। ভ্রমণে গেলে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ সাথে রাখতে হবে। অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। নয়তো এ থেকে ডায়ারিয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। বিশুদ্ধ পানি না পাওয়া গেলে বোতলজাত পানি পান করা যেতে পারে। তবে সেটাও যেন ভালো প্রতিষ্ঠানের তৈরি হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিকেল অফিসার ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু বলেন, ভ্রমণের সময় প্রচলিত সমস্যা হলো মোশন সিকনেস বা ভ্রমণ সংক্রান্ত বমি। আমাদের অন্তঃকর্ণে শরীরের ভারসাম্য রক্ষার বিষয় রয়েছে। যখন শরীর নড়াচড়া করে তখন অন্তঃকর্ণ বুঝিয়ে দেয় আমরা নড়ছি। তবে বাসে, ট্রেনে বা মাইক্রোতে থাকলে কখনো কখনো অন্তঃকর্ণ বিষয়টিকে বোঝাতে পারে না। এতে বমি বমি ভাব হয়। এই বমি প্রতিরোধে বাসের ভেতর না তাকিয়ে বাইরের দিকে তাকাবেন। তাহলে অন্তঃকর্ণ বুঝবে শরীর চলমান। তবে কেউ যদি গাড়ির ভেতরে দিকে তাকান বা গাড়ির ভেতরে টিভির দিকে তাকান এই বমিভাব বেড়ে যায়। তাই যাদের এই সমস্যা হয় তারা এটা করবেন না। এধরনের সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ডমপিরিডন ওষুধ ভ্রমণের বেশ কিছুক্ষণ আগে খেয়ে নেবেন।
ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু আরো বলেন, ভ্রমণের সময় অনেকেরই ডায়ারিয়া,বদহজম হয়। নতুন এলাকায় গিয়ে নতুন খাবার বা স্থানীয় খাবার- এগুলোর কারণে পেটে সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া পানি ঠিকমতো না খাওয়ার কারণেও এই সমস্যা হতে পারে। এজন্য বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। কক্সবাজার, টেকনাফ এসব অঞ্চলে গিয়ে অনেকের সি ফুড খেয়ে ডায়ারিয়া হয়। তাই কোনো খাবারও বেশি না খেয়ে একটু একটু করে খাওয়া যেতে পারে। ভাজাপোড়া বা তেলজাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে বুক জ্বালাপোড়া ভাব হতে পারে। তাই এসব খাবার এড়িয়ে যেতে হবে। এ ছাড়া জাঙ্ক ফুড অবশ্যই এড়িয়ে যেতে হবে।
বেড়াতে গেলে অনেকে রোদের মধ্যে থাকেন। তখন গায়ের ত্বক লালচে হয়ে যায়, র্যাশ পড়ে জানিয়ে ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু আরো বলেন, তাই বেশিক্ষণ এভাবে ঘোরাঘুরি করা যাবে না। সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। সানস্ক্রিন যেন এসপিএফ ৩০-এর বেশি হয়। রোদে গেলে অবশ্যই্ ছাতা ব্যবহার করবেন। স্কার্ফ ব্যবহার করা যেতে পারে।
ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু আরো বলেন, হাতের কাছে ফার্স্ট এইড বক্স রাখতে হবে। এতে প্রয়োজনীয় ওষুধগুলো রাখতে হবে। তুলা ব্যান্ডেজ এসব রাখতে হবে। এ ছাড়া হাতের কাছে পরিচিত চিকিৎসকের ফোন নম্বর রাখতে হবে, যেন প্রয়োজনের সময় চিকিৎসককে দ্রুত ফোন করা যায়।
এ ছাড়া বেড়াতে গেলে, বিশেষ করে পার্বত্য অঞ্চল বা চট্টগ্রাম- এসব জায়গায় ম্যালেরিয়া হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এসব এলাকায় গেলে অ্যান্টি রিলিপেন্ট জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। শোয়ার সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে।
বেশি হাঁটা চলা করলে ল্যাকটিক এসিড উৎপন্ন হয়ে পেশিতে ব্যথা হতে পারে জানিয়ে ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু বলেন, তাই বেশি হাঁটাহাটি করলে অবশ্যই বিশ্রাম নিন। কম সময় নিয়ে সারাদিন ঘোরাঘুরি করলে বিশ্রাম নিতে হবে। ভ্রমণ শুরু করলে চার-পাঁচ ঘণ্টা পরপর সম্ভব হলে বিরতি দিতে হবে। একটানা ভ্রমণ করা যাবে না। একটানা ভ্রমণ করলে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন।
আটসাঁট জুতার কারণে পায়ে ফোসকা পড়তে পারে। এ সমস্যা বিশেষ করে মেয়েদের বেশি হয়। তাই বাতাস ঢোকে এমন খোলা জুতা ব্যবহার করুন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, গ্রামের বাড়ি গেলে অনেক বড় বা শিশুরা গোসলের জন্য পুকুরে নামেন। অনেকে হয়তো সাঁতার জানেন না। পানিতে ডুবে গিয়ে বিপত্তি ঘটতে পারে। তাই এসব বিষয়ে সতর্ক হতে হবে।