কেন জুবিন গর্গের ‘ইয়া আলি’ আজও মন ছুঁয়ে যায়?

২০০৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত গ্যাংস্টার সিনেমার গান ‘ইয়া আলি মদতওয়ালি’ মুক্তির পর থেকে প্রায় দুই দশক পেরিয়ে গেছে। তবু আজও এই গান শুনলে এক অদ্ভুত আবেগে ভেসে যান শ্রোতারা। কারণটা শুধু সিনেমার সঙ্গে যুক্ত স্মৃতি নয়, গানটির গভীরে লুকিয়ে থাকা গানটির প্রতিটি লাইনেই রয়েছে ভক্তি, আস্থা আর ভালোবাসার সুর। জীবনের দুঃসময়ে যেমন মানুষ স্রষ্টার কাছে আশ্রয় খোঁজে, তেমনই গানটির প্রতিটি শব্দ মনে করিয়ে দেয় ভরসার ঠিকানার কথা।
জুবিনের গায়কী ছিল সরল অথচ প্রবল আবেগময়। তাঁর কণ্ঠে ছিল কষ্ট, আর্তি, অনুরাগ—যা গানকে শুধু শোনার নয়, অনুভব করার অভিজ্ঞতা বানিয়ে তোলে। শ্রোতা বুঝতে পারেন, তিনি গানটিকে নিছক গাইছেন না, বরং নিজের ভেতরের বিশ্বাস থেকে উৎসর্গ করছেন।
গানটি হিন্দি সিনেমার হলেও জনপ্রিয় হয়েছিল পুরো দক্ষিণ এশিয়ায়—ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল থেকে শুরু করে প্রবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে। এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের অনেক তরুণও গানটির সুরে মুগ্ধ হয়েছিল। এভাবেই ‘ইয়া আলি’ হয়ে ওঠে এক আন্তর্জাতিক সাফল্য।
প্রীতমের সুর করা গানটি কুয়েতি ব্যান্ড গুইতারা-র ‘ইয়া ঘালি’ থেকে কপি করা অভিযোগে বিতর্কে জড়ালেও সেই আলোচনা গানটিকে আরও জনপ্রিয় করে তোলে।
একদিকে মৌলিকতা নিয়ে সমালোচনা, অন্যদিকে ভক্তদের আবেগ দুই মিলে গানটি সাংস্কৃতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল।
অনেক গান জনপ্রিয় হলেও সময়ের সঙ্গে ম্লান হয়ে যায়। কিন্তু ‘ইয়া আলি’ আজও নতুন প্রজন্মের প্লেলিস্টে জায়গা করে নেয়। এর পেছনে কারণ, গানটি শুধু প্রেমের গল্প নয়, বরং মানুষের বিশ্বাস, আর্তি ও আধ্যাত্মিক আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। এটাই গানটিকে চিরন্তন করে তুলেছে।
আজ যখন জুবিন গর্গ আর নেই, তখন তাঁর গাওয়া ‘ইয়া আলি’ আরও গভীরভাবে ছুঁয়ে যায় হৃদয়। মনে হয়, তিনি যেন নিজের জীবনকেই গানটির সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছিলেন—একটি গান হয়ে উঠেছিল তাঁর পরিচয়, আর তাঁর মৃত্যুর পরও সেটিই তাঁকে অমর করে রাখবে।