মুভি রিভিউ
নীল গল্পে এই প্রজন্মকে সচেতন করবে ‘নীলচক্র’

দিন যত গড়াচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তত বাড়ছে। যুগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিত্যনতুন প্ল্যাটফর্ম গড়ে তো উঠছে, আমরা কতটা সামাজিক হচ্ছি? বরং, তথাকথিত এসব প্ল্যাটফর্মে ভিউ ও লাইকের নেশায় উন্মাতাল হচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। যার পরিণতি ডেকে আনে অন্ধকার। বর্তমান সময়ে যখন তথাকথিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে এবং এসবের নেশা নতুন এক সামাজিক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন পরিচালক মিঠু খান ’নীলচক্র’ হাজির হয়েছে বিশেষ বার্তা নিয়ে।
সিনেমার মূল গল্প আবর্তিত হয়েছে সামাজিক প্রেক্ষাপটে, যেখানে টিকটক-সদৃশ প্ল্যাটফর্মে ভিউয়ের উন্মত্ততা কীভাবে একজন মানুষের জীবনকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয় এবং একটি হাসিখুশি পরিবারকে শেষ করে দিতে পারে, সেই ভয়াবহ বাস্তবতাকে বেশ দক্ষতার সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে। এর শেষ বার্তা এতটাই শক্তিশালী ও প্রাসঙ্গিক যে, এই সময়ে এর গুরুত্ব কতটা, তা বোধহয় মাপা যাবে না।
অভিনয়ের দিক থেকে আরিফিন শুভ অনবদ্য। পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের একজন কর্মকর্তার চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। সাম্প্রতিক টানা সমালোচনার মাঝে এমন একটি কামব্যাক তার জন্য জরুরি ছিল। সুযোগটি দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন শুভ। তার চরিত্রের গভীরতা ও সূক্ষ্ম অভিব্যক্তি দর্শককে মুগ্ধ করবে।
মন্দিরা চক্রবর্তীর সঙ্গে শুভর দুষ্টু-মিষ্টি রসায়ন পর্দায় এক সতেজতা এনেছে, যা চোখের আরাম। তাদের যুগলবন্দী ছবির গতিশীলতা বাড়িয়েছে। গল্পের উল্লেখযোগ্য অংশ ছিলেন মন্দিরা। বাকিদের অভিনয়ও চরিত্র অনুযায়ী যথেষ্ট ভালো ছিল। ছবির গানগুলো শ্রুতিমধুর, যা গল্পের বিভিন্ন মোচড়ে আবেগ তৈরি করতে সাহায্য করেছে। এই ধরণের সাসপেন্স থ্রিলার সিনেমায় ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক খুব বড় দায়িত্ব রাখে। নীলচক্রের ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর ছিল চমৎকার। দৃশ্য ও পরিস্থিতি অনুযায়ী বিজিএম, সঙ্গে সিনেমাটোগ্রাফি তৈরি করেছে কৌতূহল।
তবে কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। ফজলুর রহমান বাবুর চরিত্রটি কিছুটা একঘেয়ে এবং গৎবাঁধা মনে হয়েছে। তার মতো একজন অভিনেতার কাছ থেকে দর্শক আরও বৈচিত্র্যপূর্ণ কিছু প্রত্যাশা করেন। এছাড়া, সিনেমার শেষ মুহূর্তের ক্যামিও চরিত্রটি হতাশাজনক ছিল। সিনেমার গল্প অনুযায়ী এই চরিত্রের আগমন দর্শকের আগ্রহ বাড়িয়ে দিলেও মঞ্চায়ন হয়নি ঠিকঠাক। গল্পের মূল আবেদনকে কিছুটা হলেও ম্লান করেছে।
সব মিলিয়ে নীলচক্র সময়োপযোগী কাজ। এটি কেবল একটি বিনোদনমূলক কাজ নয়, বরং ডিজিটাল দুনিয়ার ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। বিশেষত তরুণ প্রজন্মের এই সিনেমাটি দেখা উচিত। ভিউজের ক্ষণস্থায়ী মোহে পড়ে কীভাবে নিজের জীবন ও ভবিষ্যতকে অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে তারা, তা ফুটে উঠেছে পুরো সময়জুড়ে। সিনেমার বিচারে নীলচক্রকে দুর্দান্ত বলা না গেলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এমন কাজ প্রশংসার দাবি রাখে।