রঙিন আলো, চিয়ারিং দর্শক আর উচ্ছ্বাসে ভরা মঞ্চ—শেষ হলো ‘কনকা সেরা পরিবার’ সিজন ৩-এর দীর্ঘ যাত্রা। পারিবারিক রিয়্যালিটি গেম শোর ইতিহাসে আরও একটি উজ্জ্বল অধ্যায় রচনা করল এবারের সিজন। আজ, ৬ জুন, অনুষ্ঠিত হলো বহুল প্রতীক্ষিত গ্র্যান্ড ফিনালে। চূড়ান্ত লড়াইয়ের শেষে বিজয়ীর মুকুট উঠেছে ঢাকার কামরুল হাসান শাহিদিন ও ফারজানা আহাম্মেদের পরিবারের মাথায়।

দুই সিজনের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এবারও দর্শকপ্রিয়তার নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে অনুষ্ঠানটি। ঘরোয়া পারিবারিক মুহূর্ত, হাসি-কান্না, মজার খেলা আর তারকাদের উপস্থিতিতে প্রতিটি পর্ব হয়ে উঠেছিল দর্শকদের জন্য আনন্দের উৎসব।

সারা দেশের ৯০ পরিবারের মধ্যে চূড়ান্ত পাঁচে লড়াই

এবারের সিজনে সারাদেশ থেকে অংশগ্রহণ করে মোট ৯০টি পরিবার, যার মধ্য থেকে ১৮টি পরিবার টিভি রাউন্ডে জায়গা পায়। টিভি পর্বগুলোয় নানা ধাপে উত্তীর্ণ হয়ে গ্র্যান্ড ফিনালের মহামঞ্চে পৌঁছায় সেরা ৫টি পরিবার। চূড়ান্ত পর্বে প্রতিযোগিতার ছিল তীব্র উত্তেজনা, হাসি-ঠাট্টা, আবেগ আর পারস্পরিক শ্রদ্ধা। তবে শেষ হাসি হেসেছেন।

চ্যাম্পিয়ন: কামরুল হাসান সাহেদিন ও ফারজানা আহম্মেদ (ঢাকা)

প্রথম রানার আপ: আসিব আবদুল্লাহ ও জেবুন্নেসা বিনতে জামান সিসিলি (চট্টগ্রাম)

দ্বিতীয় রানার আপ: শাহরিন ইয়াসমিন ও ফারজানা আদসানা (রাজশাহী)

চতুর্থ স্থান: চাঁদ মিঞ্চা ও রাইতাই বিনতে হাসান (সিলেট)

পঞ্চম স্থান: রিফাত হানাস অনিক ও সাবিনা ইয়াসমিন অন্সরা (ঢাকা)

বিজয়ীর চোখে এই জয়

চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর শাহিদিন বলেন,“আমাদের জীবনে অনেক ছোট ছোট জয়ের মুহূর্ত আছে, কিন্তু ‘কনকা সেরা পরিবার’ আমাদের সেই জয়গুলোকে উদযাপনের সুযোগ দিয়েছে। এটা শুধু ট্রফি জেতা নয়, বরং পরিবার হিসেবে একসঙ্গে বেড়ে ওঠার স্মারক হয়ে থাকবে।”

ফারজানা বলেন,“আমার পরিবার—সবাই একসঙ্গে প্রতিটা রাউন্ডে মজা করে খেলেছে। এই শো আমাদের আবার মনে করিয়ে দিয়েছে, পরিবার মানে বন্ধন, আনন্দ, সহযোগিতা আর ভালোবাসা।”

তারকা ও উচ্ছ্বাসে রঙিন গ্র্যান্ড ফিনালে

গ্র্যান্ড ফিনালের আসরে অতিথি হিসেবে হাজির ছিলেন জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিম ও রোবেনা রেজা জুঁই দম্পতি। ছিলেন উপস্থাপক আবু হেনা রনি, গায়িকা রাহিমা সুলতানা রিতা, সংগীত পরিচালক মুহিন খান, গায়িকা লিজা, আরও অনেকে।

উপস্থাপনায় প্রাণশক্তি জুগিয়েছেন চমৎকারভাবে জনপ্রিয় মৌসুমী মৌ। সব মিলিয়ে প্রতিটি মুহূর্তই ছিল প্রাণবন্ত, আবেগী ও স্মরণীয়।

আয়োজকদের কণ্ঠে গর্বের ধ্বনি

গ্র্যান্ড ফিনালেতে উপস্থিত ছিলেন এনটিভির পরিচালক আলহাজ্ব নুরুদ্দিন আহমেদ, ইলেক্ট্রোমার্ট লিমিটেডের ডিরেক্টর সিনথিয়া কায়নাথ নূর, প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার মাহমুদুন্নবী চৌধুরী, ন্যাশনাল সেলস ম্যানেজার জুলহক হোসাইন ও মিডিয়াকম লিমিটেডের অ্যাসোসিয়েট এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মোঃ রাকিবুল হাসান।

এনটিভির পরিচালক আলহাজ্ব নুরুদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা গর্বিত এমন একটি পরিবারকেন্দ্রিক কনটেন্ট এনটিভির দর্শকদের উপহার দিতে পেরে। টেলিভিশনের পর্দায় শুধু বিনোদন নয়, পারিবারিক মূল্যবোধ ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরা আমাদের অন্যতম দায়িত্ব। ‘কনকা সেরা পরিবার’ সেই দায়িত্ব পালনেরই এক সফল অধ্যায়।”

ইলেক্ট্রো মার্ট লিমিটেডের ডিরেক্টর সিনথিয়া কায়নাথ নূর বলেন,“কনকা সবসময়ই পরিবারবান্ধব পণ্য এবং পারিবারিক সম্পর্কের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়ে কাজ করে। আমাদের এই আয়োজন শুধু একটি শো নয়, প্রতিটি পরিবারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের এক মাইলফলক।”

নির্মাতাদের চোখে অভিজ্ঞতার গল্প

এই সিজন যৌথভাবে পরিচালনা করেছেন জাহাঙ্গীর চৌধুরী ও মোহাম্মদ নুরুজ্জামান।তাঁরা বলেন,“পরিবার মানে কেবল একত্রে থাকা নয়—একত্রে হাসা, শেখা, লড়াই করাও। এই অনুষ্ঠান আমরা এমনভাবে তৈরি করেছি, যেন প্রতিটি পর্বে দর্শক নিজেকে খুঁজে পান। পরিবার মানেই গল্প, আর সেই গল্পগুলোকে মঞ্চে তুলে ধরাই ছিল আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।”

পিছনে যারা ছিলেন

অনুষ্ঠানটি প্রযোজনা করেছে কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্স ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স ব্র্যান্ড ‘কনকা’। বাংলাদেশে এই ব্র্যান্ডের একমাত্র পরিবেশক, উৎপাদক ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান ইলেক্ট্রো মার্ট লিমিটেড। পুরো আয়োজনের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ছিল এনটিভি, আর বিপণন ও মিডিয়া পার্টনার মিডিয়াকম লিমিটেড।

শেষ নয়, শুরু এক নতুন গল্পের

‘কনকা সেরা পরিবার’ সিজন ৩ দেখিয়ে দিয়েছে—একটি রিয়্যালিটি শো শুধু বিনোদনের নয়, হতে পারে পরিবারের গল্প বলার মঞ্চ। জয়-পরাজয়ের বাইরেও এ অনুষ্ঠান ছুঁয়েছে হাজারো হৃদয়, বুনেছে স্মৃতির জাল। এই যাত্রা হয়তো শেষ, কিন্তু স্মৃতি হয়ে থাকবে প্রতিটি অংশগ্রহণকারী পরিবারের জীবনে।