‘খোকা ৪২০’
ঢাকার বাজারে কলকাতার ছবি

আবারও ঢাকায় মুক্তি পেতে যাচ্ছে কলকাতার বাংলা চলচ্চিত্র। এবার ছবির সংখ্যা ছয়টি। কিছুদিনের মধ্যে আইনি প্রক্রিয়া শেষ হলেই বাংলাদেশে ওই সব ছবি প্রদর্শনে আর কোনো বাধা থাকবে না। তবে এর পাশাপাশি বাংলাদেশের ছবিও পশ্চিমবঙ্গে প্রদর্শিত হবে বলে জানা গেছে।
এই বিষয়ে এনটিভি অনলাইনের সাথে কথা হয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিয়া আলাউদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সিনেমা হলের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে, ১৩০০ সিনেমা হলের জায়গায় এখন ২০০ সিনেমা হলও টিকে নেই। আমাদের দেশে যে পরিমাণ ছবি মুক্তি পায়, তাতে বাকি হলগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা যেহেতু সিনেমা হলের ব্যবসা করি, তাই আমাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে আমাদেরই কাজ করতে হবে।’
ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্র আমদানি বিষয়ে পরিকল্পনা কী তা জানতে চাইলে প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা বছরে কলকাতার বাংলা ১২টি ছবি আনব আমাদের প্রেক্ষাগৃহে চালানোর জন্য। আর আমাদের ১২টি ছবি তাদের ওখানে চালাব। এর আগে আমরা হিন্দি ছবি চালিয়ে দেখেছি দর্শক ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। কিন্তু টিভিতে বসে সারা দিনই বাংলা ছবি দেখছে দর্শক। আমরা আশা করি কলকাতার বাংলা ছবি আমাদের হলে চালাতে পারলে দর্শক আসবে।’
ঢালিউডের কোন ধরনের ছবি পশ্চিমবঙ্গে যাচ্ছে আর ওপারের কোন ধরনের ছবি এ দেশে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে আলাউদ্দিন বলেন, “আমরা ইতিমধ্যে কলকাতার এসকে মুভিজ প্রযোজিত রাজীব বিশ্বাসের ‘খোকা ৪২০’ ছবিটি ২৪ এপ্রিল সারা দেশের প্রায় ৭০টি হলে মুক্তি দেব। এ ছবি ছাড়া আমরা আরো বেশ কিছু নতুন ভারতীয় ছবি আনব, বাংলাদেশি ছবির বিনিময়ে। আপাতত আমরা আমাদের চার বছর আগের ছয়টি ছবির বিনিময়ে তাদের ছয়টি ছবি নিয়ে আসছি। বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়াধীন আছে। এই মাসেই এর ফয়সালা হয়ে যাবে। এরপর আর কলকাতার ছবি আমাদের হলে চলতে কোনো সমস্যা থাকবে না। আমাদের ছবিও তাদের হলে চালিয়ে বাড়তি কিছু টাকা দেশে আসবে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে প্রক্রিয়া শুরু হবে।”
ইন-উইন এন্টারপ্রাইজ তাদের আমদানীকৃত চারটি হিন্দি ছবির মাঝে ‘ওয়ান্টেড’ ও ‘ডন-২’ এরই মধ্যে মুক্তি দিয়েছে। কথা ছিল ২৪ এপ্রিল ‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবিটি মুক্তি দেওয়া হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা ‘খোকা ৪২০’ ছবি মুক্তি দিচ্ছে। ২০১৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘খোকা ৪২০’ ছবিতে অভিনয় করেছেন দেব, শুভশ্রী গাঙ্গুলী, নুসরাত জাহান, রজতাভ দত্ত, তাপস পাল প্রমুখ।
এর আগে জানুয়ারি মাসে হিন্দি চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী ঠেকাতে মাঠে নামেন বাংলাদেশের চিত্রপরিচালক ও কলাকুশলীরা। হিন্দি চলচ্চিত্র আমদানি ও প্রদর্শনীর প্রতিবাদে ২০ জানুয়ারি এফডিসির সামনে চলচ্চিত্র ঐক্য পরিষদের ব্যানারে মানববন্ধন করেন সংশ্লিষ্টরা। এ সময় হিন্দি চলচ্চিত্র প্রদর্শনী বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত শুটিংসহ সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণা দেন তাঁরা।
এমন আন্দোলনের মুখে গত ২৩ জানুয়ারি শুক্রবার দেশের ৫৬ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় হিন্দি চলচ্চিত্র ‘ওয়ান্টেড’। সে সময় সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্রের অপেক্ষায় ছিল আরো তিনটি হিন্দি চলচ্চিত্র : ‘থ্রি ইডিয়টস’, ‘তারে জমিন পার’ ও ‘ধুম ২’। আন্দোলনের কারণে এসব ছবির প্রদর্শনী এখন অনিশ্চিত।
আমদানীকৃত ওই বাকি তিনটি ছবি সিনেমা হলে চালানোর অনুমতি দেওয়া হবে না বলে চলচ্চিত্র ঐক্যজোটের নেতাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। ২৬ জানুয়ারি সোমবার দুপুরে তথ্য মন্ত্রণালয়ে তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পর পরিচালক সমিতির মহাসচিব মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেছিলেন, ‘তথ্যমন্ত্রী ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী দুজনই আমাদের সাথে একমত হয়েছেন এবং আমাদের কথা দিয়েছেন বাকি যে তিনটি ছবি থ্রি ইডিয়টস, তারে জমিন পার ও ডন টু রয়েছে- এগুলো চালানোর অনুমতি দেওয়া হবে না।’ এরপরই ওই তিন হিন্দি ছবির প্রদর্শনী স্থগিত রয়েছে।
বছরের শুরুতে আন্দোলন করে হিন্দি ছবি ঠেকালেও ভারতীয় বাংলা ছবির আমদানি ও প্রদর্শন কি ঠেকাতে পারবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ঐক্যজোট?