এফডিসির প্রধান ফটকে হাতাহাতি, উত্তেজনা

বেলা গড়াতেই কিছুটা উত্তেজনা ছড়িয়েছে সিনেমাপাড়ায়। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দ্বিবার্ষিক এই নির্বাচনকে ঘিরে সকাল থেকেই সরগরম ছিল এফডিসি এলাকা। শুরুতে পরিবেশ বেশ শান্ত থাকলেও সকাল ১০টার কিছুক্ষণ পরে কিছুটা উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
জানা যায়, ঘটনার সূত্রপাত হয় এফডিসিতে প্রবেশ করা নিয়ে। এ দিন সহকারী পরিচালক সমিতি ও সহকারী প্রযোজক সমিতিসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের সদস্যদের এফডিসিতে প্রবেশে বাধা দেয় পুলিশ। ওই সংগঠনগুলোর সদস্যদের সঙ্গে পুলিশের বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়।
এতে করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন লাঞ্ছনার শিকার হওয়া অনেকেই। তাঁরা জানান, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির মতোই আরো বেশ কয়েকটি সংগঠন রয়েছে এফডিসিতে। প্রতিটি সংগঠন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এসব সংগঠনের প্রত্যেক সদস্যের কাছেই এফডিসিতে প্রবেশের পাস রয়েছে। অথচ তাঁদেরই এফডিসিতে প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এমনকি তাঁদের লাঞ্ছিত করা হয়েছে।
সহকারী পরিচালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী মনির বলেন, ‘এফডিসিতে প্রবেশ করা আমাদের অধিকার। কিন্তু আজ আমাদের অপমান করা হয়েছে।’
হেনস্তার শিকার হয়েছেন জনপ্রিয় চলচ্চিত্র পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু। এ দিন তিনি এফডিসিতে প্রবেশ করতে চাইলে কর্তব্যরত পুলিশ তাঁকে বাধা দেয় এবং চলে যেতে বলেন। এমনকি তাঁকে লাঠিপেটা করার হুমকি দেওয়া হয়। অবশ্য পরবর্তী সময়ে তাঁকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়।
এ ঘটনা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন পরিচালক ঝন্টু। এনটিভি অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘আমি আড়াইশটিরও বেশি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছি, যা এশিয়া মহাদেশে সর্বাধিক। এফডিসির প্রতিটি মানুষ আমাকে চেনে, অথচ আমার সঙ্গে এ রকম আচরণ করা হলো। এতে আমি বিরক্ত। নির্বাচন কমিশনার হিসেবে যিনি আছেন, তিনি অনেক কিছু বোঝেন না। তাঁর অজ্ঞতার কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে।’
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন অভিনেতা ওমর সানী। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আজকের দিনটি এফডিসির সবার জন্য মিলনমেলার। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি ছাড়াও এখানে বেশ কিছু সংগঠন রয়েছে। আমরা সবাই মিলে একটি পরিবার। অথচ ওই সব সংগঠনের সদস্যদের এফডিসিতে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে। এটি মোটেই উচিত হয়নি। আমি তীব্র ক্ষোভ জানাচ্ছি।’
উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি বলেন, ‘তাঁদের বাধা দেওয়ার তো কোনো কথা ছিল না। হয়তো কোথাও ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। পুরো ঘটনাটি সম্পর্কে আমি খোঁজ নিচ্ছি।’
এবারের নির্বাচনে মিশা-জায়েদ প্যানেল করে নির্বাচন করছেন। অন্যদিকে জনপ্রিয় নায়িকা মৌসুমী স্বতন্ত্র হিসেবে সভাপতি পদে লড়ছেন, তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী খলনায়ক মিশা সওদাগর। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইলিয়াস কোবরা, তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী চিত্রনায়ক জায়েদ খান। তবে নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মিশা-মৌসুমীর।
গত ৫ অক্টোবর ২০১৯-২১ মেয়াদের শিল্পী সমিতির আসন্ন নির্বাচনের খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হয়। তালিকা থেকে জানা যায়, সভাপতি পদে লড়াই করছেন মৌসুমী ও মিশা সওদাগর। সহসভাপতির দুটি পদে রুবেল ছাড়াও প্রার্থী হয়েছেন মনোয়ার হোসেন ডিপজল ও নানা শাহ। সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খানের প্রতিদ্বন্দ্বী ইলিয়াস কোবরা। সহসাধারণ সম্পাদক পদে লড়ছেন আরমান ও সাংকো পাঞ্জা। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে অভিনেতা সুব্রতর বিপরীতে কোনো প্রার্থী নেই। আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক পদে লড়ছেন নূর মোহাম্মদ খালেদ আহমেদ ও চিত্রনায়ক ইমন। দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক পদে একাই রয়েছেন জ্যাকি আলমগীর। সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে লড়বেন জাকির হোসেন ও ডন। কোষাধ্যক্ষ পদে অভিনেতা ফরহাদের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। অর্থাৎ সুব্রত, জ্যাকি, আলমগীর ও ফরহাদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
এবারের নির্বাচনে কার্যকরী পরিষদ সদস্যের ১১টি পদের জন্য প্রার্থী হয়েছেন ১৪ জন। তাঁরা হলেন অঞ্জনা সুলতানা, রোজিনা, অরুণা বিশ্বাস, আলীরাজ, আফজাল শরীফ, বাপ্পারাজ, রঞ্জিতা, আসিফ ইকবাল, আলেকজান্ডার বো, জেসমিন, জয় চৌধুরী, নাসরিন, মারুফ আকিব ও শামীম খান (চিকন আলী)।