নায়কের মুখোমুখি
দুঃখ একটাই, বাংলাদেশ যাওয়া হয়নি : সাতাফ

মাত্র তিনটি ছবিতেই সুপার ডুপার হিট। করপোরেট সংস্থা থেকে কেবল অভিনয়ের টানেই চলে যান মুম্বাই। আর মুম্বাইয়ে পা রেখেই জনপ্রিয়তার মধ্যমণিতে পরিণত হয়েছেন টালিউডের নবাগত নায়ক সাতাফ ফিগার।
গত বছরই মুক্তি পায় সাতাফ অভিনীত প্রথম ছবি মৈনাক ভৌমিকের ‘কলকাতা কলিং’। এরপর মুক্তি পায় মনোজ মিচিগানের ‘৮৯’, আর এবার, বক্স অফিস হিট করা ছবি ‘শেষ অঙ্ক’।
সাতাফের সান্নিধ্য পেতে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। ভাগ্য সুপ্রসন্ন। অবশেষে সময় মিলল। এনটিভি অনলাইনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মনের অনেক কথাই বললেন সাতাফ ফিগার।
সাক্ষাৎকারের প্রশ্নোত্তর পর্বের শুরুতেই সাতাফ বললেন, ‘বাংলাদেশের ছেলে আমি, এ কথা স্বীকার করতে কোনো অসুবিধা নেই।’ ( এটুকু বলেই হেসে ফেললেন)। তারপর আবার শুরু করলেন, ‘আমার পরিবারের সবাই এক সময় বাংলাদেশে থাকতেন। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্ম-কর্ম অবশ্য সবই ভারতে। বাবার কাছে শুনেছি এখনো বাংলাদেশের খুলনায় আমাদের বহু জমিজমা আছে। আমাদের অনেক আত্মীয়স্বজনও সেখানে আছে।’
কোনো রাখঢাক না করেই সাতাফ বললেন, ‘আমার মা-বাবা কিন্তু দেশ ভাগের সময় ভারতে আসেননি। দেশ ভাগের পর বাবা কাজের সূত্রে ভারতে চলে আসেন পরিবার নিয়ে। তবে জানেন তো... আমার কিন্তু দুঃখ একটাই। এখানে জন্মের পর থেকে আজ অবধি বাংলাদেশ যাওয়া হয়ে ওঠেনি। তবে মা-বাবা আর ঠাকুমার কাছে বাংলাদেশ নিয়ে অনেক গল্প শুনেছি। বলতে পারেন, তাঁদের চোখ দিয়েই অর্ধেক বাংলাদেশ আমার দেখা হয়ে গেছে। (এবার আবারও মিষ্টি করে হেসে ফেললেন)।’
সাক্ষাৎকারের শুরুতেই এভাবে এক নবীন অভিনেতার বাংলাদেশ নিয়ে নস্টালজিক ভাবনায় সত্যিই অবাক না হয়ে উপায় ছিল না। তাও আবার তিনি কখনোই বাংলাদেশে যাননি।
এবারে প্রশ্ন করলাম, ‘বাংলাদেশে নিজের ভিটে-মাটিতে যাওয়ার ইচ্ছে আছে?’ বলা যায় এক রকম হামলে পড়ে উত্তর দিলেন, ‘অবশ্যই। নিজেদের ভিটে-মাটিতে যেতে না পারার দুঃখ এক সময় আমার ঠাকুমাও করতেন। আসলে কাজের চাপেই আমার বাংলাদেশ যাওয়া হয়ে ওঠেনি। আমি মুম্বাইয়ে প্রথম কাজ শুরু করি। আর অভিনয় জগতে তো হঠাৎই এসে পড়া। তারপর থেকেই তো কাজের চাপ চলছে ...।’
জিজ্ঞেস করলাম, “আপনার ‘শেষ অঙ্ক’ সিনেমাটি নিয়ে কি টেনশনে আছেন? ঝটপট উত্তর এল, ‘খু...উব। তবে শেষ অঙ্কের বক্স রিপোর্ট ভালোই। সংগীতও সবার পছন্দ হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন অনেকটাই কু...ল...ল লাগছে।”
খানিকটা ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ছবিতে তো আপনাকে একেবারে সালমান খানের ট্রেড মার্ক সেই শার্ট খুলে ফেলার মতো দৃশ্যে দেখা গেছে?’ মুখটা নিচু করে প্রথমেই মুচকি হাসলেন। তারপর বললেন, ‘দেখুন ভালো ফিগার হলে কে না দেখতে চায়? (এবারে হো হো করে হেসে উঠলেন) আরে না, না, এটা তেমন কোনো ব্যাপার নয়। সিনেমায় আমার চরিত্র অনুযায়ী পরিচালক তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে ফিগার দেখানোর কথা বলেছিলেন। তাই দেখিয়েছি। অহেতুক কিছু নয়। চরিত্রটা ডিমান্ড করছিল।’
‘এবার তাহলে চাকরি ছেড়ে পাকাপাকিভাবে সিনেমায় চলে এলেন?’ প্রশ্ন করতেই বললেন ‘একেবারে...করপোরেট ট্রেনার তো আছি। অবশ্য তার সঙ্গে মডেলিংও করি।’
এবারে বেশ বুকে খানিকটা সাহস নিয়ে প্রশ্ন করলাম, সেই মডেলিং করতে গিয়েই তো আলাপ আপনার প্রিয় বান্ধবী বাংলার আর এক হিট অভিনেত্রী মুমতাজের সঙ্গে...’ প্রশ্নের মাঝখানে থামিয়ে দিয়ে সাদাত বললেন, ‘বিষয়টি নিয়ে ফালতু কথা হচ্ছে। মানে আপনাদের মিডিয়ারই বাড়াবাড়ি। হ্যাঁ, অবশ্যই মুমতাজ আমার ভালো বন্ধু। আপনার পরের প্রশ্ন?’
যে সন্দেহ করেছিলাম সেটাই সত্যি হলো। এ প্রশ্নের পর সাতাফ যে রেগে গেছেন সেটা বুঝেই বললাম, ‘আরে শুধু শুধু রাগ করছেন, আপনার ফ্যানেরা তো জানতে চাইবেই আপনার ব্যক্তিগত কিছু কিছু কথা?’ এবারে সাতাফের সাফ উত্তর, ‘আমি কোন দিনই ব্যক্তিগত মন্তব্য ও ব্যক্তিগত কথা বলতে ভালোবাসি না। এ ক্ষেত্রে আমার ফ্যানেরা নিরাশই হবেন।’
বললাম, ‘আপনার পরের ছবি কী?’ উত্তর এলো, ‘এখনো কথা চলছে। তবে বলার সময় আসেনি। সঠিক সময়ে জানতে পারবেন।’
বুঝতে পারছি আর বেশি সময় সাতাফ আমাদের দেবেন না। সেটা বুঝেই চটজলদি বললাম, ‘ঝটপট শর্টকার্টে আপনাকে কয়েকটা প্রশ্ন করব?’ একটু ভেবে মুচকি হেসে ঘাড় কাত করলেন।
টেনশন কমাতে ছবি মুক্তির আগে কী করেন?
সাতাফ : ঈশ্বরের সামনে বসে ধ্যান করি। আমি ধর্মে বৌদ্ধ।
আপনার লাকি নাম্বার কত?
সাতাফ : ৮ ও ৯। পরিচালক মনোজ মিচিগানের ‘৮৯’ ছবিটাও হিট।
কোন রঙ পছন্দ?
সাতাফ : ব্রাউন।
প্রিয় বার?
সাতাফ : শনিবার। কারণ, তার পরের দিনই তো রবিবার। (অর্থাৎ ছুটির দিন)
প্রিয় নায়িকা?
সাতাফ : রাইমা সেন।
প্রিয় বেড়াতে যাওয়ার জায়গা?
সাতাফ : হিমাচল প্রদেশ।
কী খেতে সব থেকে ভালোবাসেন?
সাতাফ : থাই ফুড।
এবারে বিদায় নেওয়ার পালা। উঠবার আগে বাংলাদেশ যাওয়ার আমন্ত্রণ জানালাম। প্রত্যুত্তরে সাতাফ বললেন, ‘অবশ্যই যাব। আরে বাংলার এত দর্শক আছেন আমাদের, তাঁদের কাছে না পৌঁছালে হয়! সবে কাজ শুরু করেছি। আপনাদের আশীর্বাদ ও ভালোবাসা চাই। ধন্যবাদ।’