শুধু অভিনেতা নয়, মানুষ হিসেবেও অসাধারণ ছিলেন ইরফান খান

হলিউড-বলিউডের পাশাপাশি বাংলাদেশের একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন ইরফান খান। ‘ডুব’ শিরোনামের এই চলচ্চিত্র ভারতের এস কে মুভিজ ও ইরফান খান ফিল্মসের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছিল। বাংলাদেশে প্রযোজনা করেছিল জাজ মাল্টিমিডিয়া। চলচ্চিত্রের বেশ কিছু দৃশ্যের শুটিং হয় বাংলাদেশে। এই চলচ্চিত্রের জন্য জাজের অফিসে গিয়েছিলেন ইরফান খান।
ইরফান খানের সঙ্গে আলাপচারিতার স্মৃতিচারণা করলেন জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রধান নির্বাহী (সিইও) আলিমুল্লাহ খোকন। এনটিভি অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘অভিনেতা হিসেবে ইরফান খান কেমন, তা বিশ্বের সবাই জানে। এ নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। সব দেশের মতো বাংলাদেশের সবাই তাঁর অভিনয় দেখেছেন, আমি নিজেও তাঁর অনেক বড় ফ্যান। তাঁর মৃত্যুর খবর শোনার পর বাকরুদ্ধ হয়ে যাই। প্রিয় মানুষের মৃত্যু যে কতটা কষ্টের, তা বুঝতে পারি!
আলিমুল্লাহ খোকন বলেন, ‘অভিনেতা হিসেবে যেমন অসাধারণ, তেমনি মানুষ হিসেবেও অসাধারণ ছিলেন ইরফান খান। সবাইকে অনেক বেশি সহযোগিতা করতেন। কাজের ফাঁকে সবাইকে নিয়ে আনন্দ করতেন। অনেক বেশি পজিটিভ (ইতিবাচক) মানুষ ছিলেন ইরফান খান।’
‘যৌথ প্রযোজনার বিষয়ে জাজের অফিসে মিটিংয়ে দেখেছি, উনি অনেক বেশি পজিটিভ ছিলেন। ভালো কিছু করার জন্য অনেক বেশি আগ্রহ তাঁর। উনার কথায় উৎসাহিত হয়েছি আমরাও,’ যোগ করেন খোকন।
খোকন আরো বলেন, “আমি কখনো শুটিংয়ে পরিবার নিয়ে যাই না। আমার পরিবারের কেউ শুটিংয়ে যেতে আগ্রহী নয়। তবে ‘ডুব’ ছবির শুটিং যখন হচ্ছিল ৩০০ ফিটের পাশে জিন্দা পার্কে, তখন আমরা সপরিবারে গিয়েছিলাম। সেখানে তিনি সবার সঙ্গে অনেক আন্তরিক ছিলেন। শুটিংয়ের ফাঁকে ফাঁকে আশপাশে শুটিং দেখতে আসা সবাইকেই তিনি সময় দিয়েছেন। শুটিং ইউনিটকে তিনি সব সময় চাঙ্গা রাখতেন। দু-তিন ঘণ্টা ব্রেক থাকলে ইউনিটের সবাইকে নিয়ে তিনি ক্রিকেট খেলা শুরু করতেন। সবার সঙ্গে এমন আচরণ করতেন, যেন সবাই আগ্রহ নিয়ে কাজটি করেন। সত্যিই আমরা অসাধারণ এক মানুষকে হারালাম।”
২০১৭ সালের ২৭ অক্টোবর মুক্তি পেয়েছিল চলচ্চিত্র ‘ডুব’। বাংলাদেশ, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ায় একযোগে মুক্তি পায় ছবিটি। ছবিটি পরিচালনা করেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
পরিচালনার পাশাপাশি চলচ্চিত্রটির গল্প ও চিত্রনাট্য করেছেন ফারুকী। চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেছে বাংলাদেশের জাজ মাল্টিমিডিয়া, ভারতের এস কে মুভিজ ও ইরফান খান ফিল্মস। প্রযোজনার পাশাপাশি ছবিটিতে অভিনয় করেন ইরফান খান।
কোলন ইনফেকশন নিয়ে গতকাল মুম্বাইয়ের কোকিলাবেন ধিরুবাই আম্বানি হাসপাতালে ভর্তির কয়েক ঘণ্টা পর মারা গেছেন ব্যতিক্রমী ধারার বলিউড-হলিউড অভিনেতা ইরফান খান। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ছবিতে অভিনয় ও তাঁর প্রতি বিশ্বাস রেখে বিনিয়োগ করেছিলেন ইরফান খান। সকালে উঠেই তাঁর মৃত্যুর খবর যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না ফারুকী। নিজের ফেসবুকে লেখেন, ‘অবিশ্বাস্য খারাপ খবর দিয়ে দিনটা শুরু হলো।’
২০১৬ সালের মার্চ মাসে ছবির শুটিং শুরু হয়। চলচ্চিত্রটির মূল শুটিং হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট ও ঢাকায়। শুটে অংশ নিতে ২০১৬ সালের ১৭ মার্চ বলিউড ও হলিউড চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা ইরফান খান ভারত থেকে ঢাকায় আসেন। ইরফান খান তখন জানিয়েছিলেন, ফারুকীর গল্পটি পড়ার পর তিনি চলচ্চিত্রটির ব্যাপারে আগ্রাহী হন। তিনি ফারুকীর পরিচালনা, স্টাইল ও কাজের ধরন দেখে বিস্মিত হয়েছেন। তাঁর কাজ আলাদাভাবে মানবিক দিক তুলে ধরে, যা তাঁকে সবার চেয়ে আলাদা করেছে।
মাত্র তিন দিন আগে ইরফান খানের মা সাইদা বেগম মারা যান। লকডাউনের কারণে তিনি মায়ের শেষকৃত্যে সশরীরে অংশ নিতে পারেননি। তবে ভিডিওকলে অংশ নিয়েছিলেন। ইরফানের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বিশ্ব বিনোদন অঙ্গনে।