‘রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মালয়েশিয়ার প্রভাব কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ’
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের থাকা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক তৎপরতার অংশ হিসেবে মালয়েশিয়ার ভূমিকা বিশেষ করে আসিয়ান সদস্য দেশগুলোর চেয়ার হিসেবে দেশটির ভূমিকা কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ।
সম্প্রতি মালয়েশিয়া সফরের সময় দেশটির সরকারি বার্তা সংস্থা বারনামাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটিই জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার (১৬ আগস্ট) সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করে বার্তা সংস্থাটি।
সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে মালয়েশিয়ার অভিজ্ঞতা বিশেষ করে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের নেতৃস্থানীয় ভূমিকার মাধ্যমে আঞ্চলিক এই সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।
মালয়েশিয়া সফর শেষ করার আগে বারনামাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস আরও বলেন, এই সমস্যা থেকে আমরা যাতে বেরিয়ে আসতে পারি সেজন্য মালয়েশিয়া আলাপ-আলোচনার প্রক্রিয়াগুলোতে তার প্রভাব নিয়ে আমাদের পাশে দাঁড়াবে, আমরা এটাই আশা করছি।
ওই সাক্ষাৎকারে অধ্যাক ইউনূস হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী আরাকান আর্মির মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘাত চলতে থাকায় রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট আরও জটিল ও গভীর হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গত ১৮ মাসে আরও দেড় লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। এটা আগে থেকে দেশে থাকা ১২ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিকের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
ড. ইউনূস বলেন, এই সংকট আগের চেয়ে আরও বেড়েছে। সবচেয়ে খারাপ দিকটি হলো এসব বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের দেখভাল করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সব তহবিল সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। আর এ কারণে এটি এখন আমাদের জন্য বিরাট সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস জানান, আগামী কয়েক মাসে রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে তিনটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এ মাসের শেষভাগে কক্সবাজারে প্রথম সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হবে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার অষ্টম বছর পূর্তি উপলক্ষে। দ্বিতীয় উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনটি হবে সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইডলাইনে। আর তৃতীয় পরিকল্পিত সম্মেলনটি হবে এ বছরের শেষ দিকে কাতারের রাজধানী দোহায়।

ড. ইউনূস উল্লেখ করেন, ২০২১ সালে মিয়ানমারে সশস্ত্র সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে রোহিঙ্গা নাগরিকদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে খুব কমই অগ্রগতি হয়েছে। চলমান সংঘাতময় পরিস্থিতি বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলেছে। তিনি বলেন, চলতে থাকা এই মানবিক সংকট কেবল বাংলাদেশকেই প্রভাবিত করছে না, বরং তা আসিয়ান সদস্যদেশ মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়াতেও প্রভাব ফেলছে।
অধ্যাপক ইউনূস উল্লেখ করেন, মালয়েশিয়া জাতিসংঘের শরণার্থী কনভেনশনের স্বাক্ষরকারী দেশ না হয়েও প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা নাগরিককে মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছে।