নেত্রকোনায় ৪০০ বছরের পুরোনো সালিশখানা

নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া উপজেলার শুনই গ্রামে অবস্থিত প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো এক সালিশখানা আজ সময়ের অবহেলায় বিলুপ্তির পথে। একসময় ন্যায়বিচারের কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত এই স্থাপনাটি এখন ধ্বংসপ্রায়। স্থানীয়রা চান, এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি সংরক্ষণ করে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হোক।
স্থানীয়রা জানান, মুঘল আমলের সেনানায়ক ঈসা খাঁর বংশধর আছালত খাঁ সিংহের বাংলা এলাকা থেকে এসে শুনই গ্রামে বসতি গড়েন প্রায় ৪০০ বছর আগে। তিনি শুধু শুনই নয়, আশপাশের কয়েকটি গ্রামের শাসনভারও পালন করতেন। সে সময় থানার অস্তিত্ব না থাকায় আছালত খাঁ জনগণের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এই সালিশখানা নির্মাণ করেন। তিন কক্ষবিশিষ্ট এই স্থাপনায় সপ্তাহে একদিন বিচারসভা বসত। অপরাধ প্রমাণিত হলে তাৎক্ষণিক দণ্ড কার্যকর করা হতো এখানেই। তখনকার মানুষের কাছে এটি ছিল ন্যায়বিচারের একমাত্র ঠিকানা।
কিন্তু সময়ের পালাবদলে সালিশখানার কদর কমেছে। আধুনিক থানা-পুলিশ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এর প্রয়োজনীয়তাও কমে যায়। বর্তমানে স্থাপনাটি জরাজীর্ণ, দেওয়াল ভেঙে পড়ছে, ইতিহাসের সাক্ষী ইটগুলো জীর্ণ-শীর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।
বর্তমানে আছালত খাঁর অষ্টম বংশধরেরা শুনই গ্রামে বসবাস করছেন। তার নবম বংশধর ও বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইং এবং মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই সালিশখানার প্রতি আবেগী ছিলাম। সুযোগ পেলে এটিকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেব বলে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। এখন গণমাধ্যমের মাধ্যমে ইতিহাসটি তুলে ধরা হচ্ছে, এজন্য স্থানীয় সাংবাদিকদের কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি সরকারের কাছে আবেদন জানাবো, এটি যেন ঐতিহাসিক স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।’
স্থানীয় তরুণ আল আকরাম মুন্না বলেন, আমরা চাই সরকার এটিকে সংরক্ষণ করুক। পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠলে বাইরের মানুষ আসবে, আমাদের ইতিহাস জানবে। আমরা গর্ব করতে পারবো।
আটপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুয়েল সাংমা বলেন, আমরা স্থানটির ইতিহাস ও গুরুত্ব যাচাই করে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে পাঠাবো। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।