মেয়ের সঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন বাবা

পড়াশোনায় বয়স নয়, দরকার ইচ্ছে শক্তি আর চেষ্টা—এই বাক্যটির বাস্তব প্রমাণ হয়ে উঠেছেন নাটোরের লালপুর উপজেলার ৪২ বছর বয়সী আবদুল হান্নান। চা-দোকানি মানুষটি মেয়ের সহপাঠী। এবার তিনি মেয়ের সঙ্গে দিচ্ছেন এইচএসসি পরীক্ষা।
হান্নান পরীক্ষা দিচ্ছেন বাঘা কাকড়ামারী কলেজ থেকে। আর তাঁর মেয়ে হালিমা খাতুন (১৭) পরীক্ষা দিচ্ছে গোপালপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে। আবদুল হান্নানের বাড়ি উপজেলার গোপালপুর পৌরসভার নারায়ণপুর মহল্লায়। তিনি মৃত লাল মিয়ার ছেলে।
আবদুল হান্নান জানান, ১৯৯৮ সালে তিনি নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস হাই স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু পাস না করায় হতাশ হয়ে লেখাপড়া ছেড়ে দেন। এরপর চায়ের দোকান দিয়ে জীবন চালাতে থাকেন। কিন্তু মনের ভেতরে লেখাপড়ার প্রতি একটা সুপ্ত বাসনা থেকেই যায়। ২০১৯ সালের দিকে সেই টান আবার জোরালো হয়। কাউকে কিছু না জানিয়ে তিনি ২০২১ সালে রুইগাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে (ভোকেশনাল) ভর্তি হন। দুই বছর পর তাঁর মেয়ে হালিমার সঙ্গে পরীক্ষায় বসে এসএসসি পাস করেন।
এবারের এইচএসসি পরীক্ষার অভিজ্ঞতা নিয়ে আবদুল হান্নান বলেন, লেখাপড়ার কোনো বয়স হয় না। আমি চাই মাস্টার্স পর্যন্ত পড়তে। মেয়ের সঙ্গে প্রতিদিন পড়ি, আলোচনা করি, প্রতিযোগিতা করি। এতে ওরও ভালো হয়, আমারও।
মেয়ে হালিমা খাতুন বলেন, ‘বাবার মেধা আছে, ইচ্ছেশক্তি আছে। সবচেয়ে বড় কথা, তাঁর জেদ আছে। আমি গর্বিত যে আমার বাবা এখন আমার সহপাঠী।’
হান্নানের প্রতিবেশী মোহাম্মদ আলী বলেন, শিক্ষার জন্য বয়স কোনো বাধা নয়, এই কথাটা উনি নিজের জীবনে প্রমাণ করেছেন। উনি এখন সবার অনুপ্রেরণা।
এ বিষয়ে লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, বাবা-মেয়ের একসঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত প্রশংসনীয়। উচ্চ শিক্ষার পথে তাঁদের পাশে উপজেলা প্রশাসন সব সময় থাকবে।