‘২৬ দিনের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র না এলে আবারও রাস্তায় নামব’

আওয়ামী লীগের টাকায় বিএনপিসহ সব দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম চলছে। আওয়ামী লীগের অর্থনৈতিক কাঠামো ঠিক রেখে ভালো নির্বাচন হতে পারে না। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি আরও বলেন, ‘আগামী ২৬ দিনের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র না এলে ও আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন না ঘটলে, আমরা আবারও রাস্তায় নামব।’
আজ শুক্রবার (১৬ মে) কুমিল্লায় আহত-শহীদ ও বীর সন্তানদের সম্মানে জুলাই সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান হাসনাত আব্দুল্লাহ।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগ যেভাবে ঘোরাঘুরি করত, এখনও সেভাবে ঘোরাঘুরি করছে। এটা আমাদের ব্যর্থতা, আসিফ নজরুল স্যারেরও ব্যর্থতা। কোন কোন বিচারপতি আওয়ামী লীগের লোকজনকে জামিন দিচ্ছেন তাদের চিহ্নিত করুন। কেন দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল ঘঠন করা হচ্ছে না জবাব দিন। না পারলে কাদের কারণে পারছেন না, জাতির কাছে পরিষ্কার করেন। স্যার, আমরা আপনার ওপর আস্থা রাখতে চাই। আপনি সে আস্থা নষ্ট করবেন না।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, কুমিল্লার অনেক উপজেলা রয়েছে, আওয়ামী লীগের টাকায় বিএনপিসহ সব দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম চলছে। আওয়ামী লীগের অর্থনৈতিক কাঠামো ঠিক রেখে ভালো নির্বাচন হতে পারে না। তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করুন। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, জাপাসহ ১৪ দল সরকারের বিষয়ে কী চিন্তা, তা স্পষ্ট করতে হবে। আমরা রাস্তায় না নামার আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেননি। নিজ উদ্যোগে আপনারা কিছুই করছেন না। মানবিক করিডর নিয়ে যেসব প্রশ্ন উঠছে, সে বিষয়ে আপনাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করুন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের উদ্দেশ করে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, বৈষম্যবিরোধীদের অনেকে তদবির বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছেন, এটা আপনাদের কাজ না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আমাদের সাহায্য চাইলে করব, কোনোভাবেই তাদের কাজে ইন্টারফেয়ার করা যাবে না। আপনারা আহতদের পরিবারের কাছে যান, কথা বলুন। সংস্কার নিয়ে কথা বলেন। অন্য কাজে জড়াবেন না।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আগামী ২৬ দিনের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র না এলে ও আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন না ঘটলে, আমরা আবারও রাস্তায় নামব। আমাদের যেকোনো প্রশ্নে, কুমিল্লার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমার রেসপনসিবিলিটি আছে, অথরিটি নাই। কোথাও গেলে বলেন আসলেন কেন? না গেলে বলেন গেলেন না কেন? আপনাদের দাবি কুমিল্লা বিভাগ। আশা করছি, অন্তর্বর্তী সরকার কুমিল্লাকে বিভাগ করে যাবেন।
হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, আমাদের যখন দেওয়ার সময় হয় উজাড় করে দিই। কিন্তু প্রাপ্তি শূন্য। আওয়ামী লীগ যদি আবার ফেরত আসে, কুমিল্লাকে আলাদা স্টেট করে দেবে। কারণ হাসিনা ও তার বাবার দুঃস্বপ্নের কারণ ছিল কুমিল্লা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক, তা বাস্তবায়ন করুন। আমাদের প্রধান দাবি ছিল বিচার। নির্বাচন কমিশনকে আগে সংস্কার করতে হবে। দোসররা যদি নির্বাচন করতে চায়, তারা সশরীরে হাজির হতে সমস্যা কোথায়? তাদের সশরীরে হাজিরের বিধান রাখুন।
সভায় জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারের সঙ্গে কুশল বিনিময় ও সম্মাননা প্রদান করা হয়।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে ফেস দ্য পিপলসের সম্পাদক সাইফুর রহমান সাগর বলেন, শহীদের পরিবার কান্নাকাটি করছে। কান্নাকাটি করার জন্য শহীদরা রক্ত দিয়েছেন? কুমিল্লাতে নদী আছে মাটি নেই। বিমানবন্দর আছে বিমান নেই, পুলিশ আছে অ্যাকশন নেই, সমন্বয়ক আছে সমন্বয় নেই, উপদেষ্টা আছে উন্নয়ন নেই। বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল যা কিছু আছে, তার পেছনে কুমিল্লার ভূমিকা ছিল। কিন্তু কুমিল্লা বলার মতো কিছুই পায়নি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন এনসপির যুগ্ম সদস্য সচিব নাভিদ নওরোজ শাহ, জয়নাল আবেদীন শিশির,শহীদ সাদমানের মা কাজী শারমিন, শহীদ ইমাম হাসানের ভাই রবিউল আউয়াল, ড. ফয়জুল ইসলাম, ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজের পরিচালক শাহ মো. সেলিম, শহীদ রবিনের মা পারভীন আক্তার, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আশিকুর রহমান ওয়াসিম, সাংবাদিক শাহাজাদা এমরান প্রমুখ।