বরিশালে ঢুকছে বন্যার পানি

বরিশালের কীর্তনখোলাসহ আশপাশের সব নদ-নদীর পানি বেড়েছে। এরই মধ্যে কীর্তনখোলা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে কীর্তনখোলা নদীর পানি ৮ সেন্টিমিটার বেড়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে বরিশাল নগরীসহ আশপাশের নিম্নাঞ্চল পানিতে ডুবে গেছে।
নগরীর বাণিজ্যিক এলাকা ফড়িয়াপট্টি, পেয়াজপট্টি ও পোর্টরোড বাজারসহ আশপাশের এলাকা তলিয়ে গেছে। ফড়িয়াপট্টি এলাকায় ১০টি চালের আড়তে পানি ঢুকেছে। চালের আড়ত হাওলাদার বাণিজ্যালয়ের জহিরুল ইসলাম জানান, তাদেরসহ ১০টি আড়তে পানি প্রবেশ করেছে। রাস্তায় প্রায় হাঁটু পর্যন্ত পানি উঠেছে। এতে বিকেলের পর থেকে বেচাকেনা তেমন হয়নি। আড়তে পানি প্রবেশ করায় চাল ভিজে যায়। এই কারণে চাল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় করছেন আড়ত মালিকরা।
নগরীর আমানতগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা নূরনবী জানান, নদীর পানি বেড়ে পুকুর ডোবা, নালা ক্ষেত ডুবে গেছে। এভাবে পানি বাড়ার কারনে এলাকার প্রায় সকল বাসা বাড়ীতে পানি উঠেছে। পানি বাড়ার কারণে সৃষ্ট তীব্র স্রোতে নদী ভাঙন বেড়েছে। কীর্তনখোলা নদীর তীরবর্তী গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে ভাঙন আতঙ্কে পড়েছেন। সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের চরআবদানী গ্রামের ফসলি জমি, বসতঘরসহ প্রায় তিন একর জমি বিলীন হয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মঙ্গলবার রাতের ভাঙ্গনে আনিচ হাওলাদার, দেলোয়ার খলিফা, শুক্কুর হাওলাদার, আমজেদ হাওলাদার, মোখলেছ হাওলাদার, জব্বার ও আশরাফ হাওলাদারসহ ১০/১২ জনের বসত ঘর বিলীন হয়ে গেছে। চরআবদানী গ্রামের বাসিন্দারা গাছ-পালা কেটে নিয়ে যাচ্ছে। সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে একের পর এক বসত ঘর। কীর্তনখোলায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নগরীর জিয়ানগর, রূপাতলী, পলাশপুর, চাঁদমারি, কাশিপুর, রায়পাশা-কড়াপুর, মোহম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে রাস্তা ঘাটসহ বাড়ির উঠান। নগরীর রসুলপুর কলোনীর সহস্রাধিক মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। সকল ঘর অর্ধেক পানিতে ডুবে গেছে। নগরীর ২৪ নং ওয়ার্ড জিয়ানগর এলাকার বাসিন্দা মো. মিরাজ হোসেন জানান, আগে বাড়ির সামনের রাস্তা পানিতে তলিয়ে ছিল। গত দুই দিন ধরে তার বাড়ীতে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। রায়পাশা কড়াপুরসহ নগরীর পাশ্ববর্তী ইউনিয়নগুলোতে রাস্তাঘাট ও বাগান বাড়ি প্লাবিত হয়েছে।
কেবল কীর্তনখোলা নয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, পানি বৃদ্ধি পেয়েছে মেঘনা, কালাবদর, তেঁতুলিয়া নদীরও। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রমজান আলী জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে কীর্তনখোলা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বরিশাল আবহাওয়া দপ্তরের কর্মকর্তা মিলন হাওলাদার জানান, গত কয়েকদিন ধরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে এ অঞ্চলে। এখানকার নদী বন্দর সমূহকে ১নং সতর্ক সংকেত ও সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর সর্তক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘন্টায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি অথবা বজ্রপাত বয়ে যেতে পারে। সাগরে নিম্নচাপের সৃষ্টি হওয়ার কারণে বৃষ্টিপাত ও উজানের পানি নামতে শুরু করেছে। এ কারণে নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।