মানিকগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত

পদ্মা-যমুনার পানি কমলেও অপরিবর্তিত রয়েছে শাখা নদী ইছামতি, কালীগঙ্গা, ধলেশ্বরী ও গাজীখালী নদীর পানি। এ কারণে মানিকগঞ্জে এসব নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে গেছে বাড়িঘর ও ফসলি জমি, ভেঙে গেছে রাস্তাঘাট, বাঁধ। ফলে পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে জেলার ছয়টি উপজেলার প্রায় চার লাখ মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বন্যার কারণে ২৫৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। অনেক পুকুর বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে মৎস্যচাষিরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছে কৃষকরা। বাড়িঘর ডুবে বিশেষ করে নিম্নাঞ্চলে বিশুদ্ধ পানির অভাবে পড়েছে অনেক পরিবার।
শিবালয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার (জিআর) রিমন শিকদার জানান, যমুনা নদীর এ পয়েন্টে গত সপ্তাহে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার ওপর দিকে প্রবাহিত হচ্ছিল। গত সোমবার থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। প্রতি তিন ঘণ্টা পরপর এই পয়েন্টে পানির স্তর পরিমাপ করা হচ্ছে।
বাঘুটিয়া এলাকার বাসিন্দা আবদুল আজিজ জানান, বন্যার পানিতে তাঁর বাড়িঘর ডুবে গেছে। কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য চারটি গরু পালন করছেন তিনি। পরিবার পরিজন ও এই গরু নিয়ে কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তিনি।
তেওতা ইউনিয়নের আলোকদিয়া চরাঞ্চলের সাইদুর রহমান বলেন, বন্যার পানিতে ঘর তলিয়ে গেলেও গরু নিয়ে ডাকাত আতঙ্কে ও নিরাপত্তাহীনতায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আছেন তিনি। তাঁদের মতো আরো অনেকে গৃহপালিত পশু-পাখি নিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহানোর কথা জানিয়েছেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আলেয়া ফেরদৌসী জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়ে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ব্যাহত হচ্ছে। বন্যা শেষে ছুটির দিনেও পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ব্যবস্থা করা হবে।
মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আলিমুজ্জামান মিয়া জানান, বন্যার পানিতে ১৬ হাজার ২৩৫ হেক্টর ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে রোপা আমনের বীজতলা ৭০ হেক্টর, রোপা আমন ৯৫০ হেক্টর, বোনা আমন ১৪ হাজার ৫০ হেক্টর, আউস ২০০ হেক্টর, সবজি ৩৫০ হেক্টর, ভুট্টা ১৬৫ হেক্টর ও ৪৫০ হেক্টর অন্যান্য ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা নূরতাজুল হক জানান, বন্যাকবলিত ছয়টি উপজেলার দুই হাজার ৬৩৬টি পুকুর ও মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। এতে ৬৬২ মেট্রিক টন মাছ ও ৯০ লাখের বেশি পোনা বের হয়ে মৎসচাষিরা প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মানিকগঞ্জ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী গাউস-উল-হাসান মারুফ জানান, বানিয়াজুরী-হরিরামপুর সড়কের প্রায় ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে ১৪ কিলোমিটারে এলাকাজুড়ে বন্যার পানি উঠেছে। ভাঙন রক্ষায় ও দুর্ঘটনা এড়াতে মঙ্গলবার সকাল থেকে এই সড়কে বাস ও ট্রাকসহ ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ জানান, শহর রক্ষা বাঁধের বেউথায় ও সদর উপজেলার হাটিপাড়া ইউনিয়নের কাইশাখালী এলাকায় ঢাকা-মানিকগঞ্জ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। দুটি স্থানে বালুর বাস্তা ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া, বন্যাকবলিত অসংখ্য বসতভিটা ও ঘরবাড়িরও ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা হক পাটোয়ারী জানান, বন্যার পানিতে প্রতিনিয়তই রাস্তাঘাট এবং স্কুল-কলেজের ক্ষয়-ক্ষতির খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে, বন্যা পরবর্তী সময়ে সঠিক ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে।
মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মাহফুজুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, বন্যাকবলিত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানমালের নিরাপত্তায় কাজ করছেন। বিশেষ করে চরাঞ্চলে মানুষের গরু-ছাগল চুরি-ডাকাতি যাতে না হয়, সেখানে পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) রাশিদা ফেরদৌস সাংবাদিকদের জানান, বন্যাদুর্গতদের জন্য ৩৭৫ মেট্রিক টন চাল ও ৩২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত রোববার দুপুর থেকে দুর্গতদের মধ্যে এই ত্রাণসামগ্রী বিতরণ শুরু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দুর্গতদের সবার কাছে এসব ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে।