‘ঈদচাপে’ ময়মনসিংহ রেঞ্জ পুলিশ

ছয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন শেষ হয়েছে ৪ জুন। গত ২২ মার্চ থেকে শুরু হওয়া এ নির্বাচনে ময়মনসিংহের ১২টি উপজেলায় দিন-রাত দায়িত্ব পালন করেছে ময়মনসিংহ রেঞ্জ পুলিশ। এর রেশ না কাটতেই শুরু হয় রমজান। এ মাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার সার্বিক দায়িত্বও বর্তেছে পুলিশের কাঁধে। এক গুরুদায়িত্ব শেষ না হতেই আরেক দায়িত্ব কাঁধে পড়ায় চাপ বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ময়মনসিংহ রেঞ্জ পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রমজানের শুরু থেকেই ময়মনসিংহ নগরীর ছোট-বড় শপিংমল ও বিপণিবিতানে ক্রমে বাড়ছে ভিড়। বিপণিবিতানগুলোর আশপাশে সক্রিয় হয়ে ওঠা ছিনতাইকারী ও দুর্বৃত্তদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হচ্ছে পুলিশকে। ঈদের কেনাকাটা করতে আসা নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই তৎপর থাকতে হচ্ছে পুলিশকে। অন্যান্য বছরের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে (যেমন : ব্যাংক, বুথ, ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান) অপরাধীদের কাছ থেকে দূরে রাখতে সাদা পোশাকে ছাড়াও ছদ্মবেশে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
এই প্রথম ময়মনসিংহ জেলা সদরে নারী ট্রাফিক পুলিশ নামিয়ে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে পুলিশিং ব্যবস্থায়। বিভাগের চারটি জেলাতেই চলছে এ ধরনের কর্মকাণ্ড।
পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, ঈদের আগে থেকেই ময়মনসিংহের ছয় জেলার মানুষের চলাচলের একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট শুরু হয়েছে। এ মহাসড়ক চার লেন হলেও অব্যাহত যানবাহন বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলাচলও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই সড়ক, মহাসড়ক ও শহরে দায়িত্ব পালন করা সীমিতসংখ্যক ট্রাফিক পুলিশের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, সবচেয়ে বেশি চাপে থাকেন কোতোয়ালি, ভালুকা ও ত্রিশাল থানা পুলিশের সদস্য ও কর্মকর্তারা। পুলিশকে সব সময় ব্যস্ত থাকতে হয় জনগণের সেবায়।
ঈদের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কথা হয় ময়মনসিংহ শহর পুলিশের উপপরিদর্শক (টিএসআই) আশরাফুল আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, শহরের ৩২টি ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ১৯টি বর্তমানে বিকল হয়ে পড়েছে। এ ক্যামেরাগুলো দ্রুততম সময়ে সচল করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম বলেন, গোটা শহরের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, অপরাধ ও অপরাধী দমনে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার সাহায্য নেওয়া হবে। অপরাধ করলে পার পাবে না কেউ।
ময়মনসিংহ রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘চার লেন হওয়ায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে এবার তেমন যানজট হবে না সম্ভবত। তবু আমাদের প্রস্তুতি আছে।’
ঈদ উপলক্ষে বাড়তি চাপের কথা উল্লেখ করে ডিআইজি বলেন, ‘ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও নেপালের মতো পার্শ্ববর্তী দেশে পুলিশ এবং জনগণের আনুপাতিক হার অনেক কম। জাতিসংঘ স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী প্রতি ৪০০ জনে একজন করে পুলিশ। আমাদের দেশে এক হাজার ২০০ লোকের জন্য মাত্র একজন পুলিশ। পুলিশের ওপর মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি।’
‘মানুষের প্রত্যাশার কোনো পরিমাপ নেই। তাই জনস্বার্থে পুলিশ সব সময় দৃশ্যমান কর্মকাণ্ড করলেও জনগণকে খুশি করা যায় না। তাই পুলিশকে বিরামহীন কষ্টের মধ্যেই কাজ করতে হয়।’