তদন্ত কমিটির সামনে পবিস ডিজিএমের মৃত্যু

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় তদন্ত কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের চাপে মুখে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) দেলোয়ার হোসেন মিয়া। শনিবার দুপুর ১টায় এ ঘটনা ঘটে।
পবিস সূত্রে জানা যায়, মুক্তাগাছা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ সদর দপ্তরে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) থেকে উপপরিচালক মাসুদ রানার নেতৃত্বে একটি দল নিরীক্ষা করতে আসেন। নিরীক্ষার অংশ হিসেবে ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এ কর্মরত অবস্থায় অনিয়মের অভিযোগ থাকায় মো. দেলোয়ার হোসেন মিয়াকে বর্তমানে কর্মরত নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে তলব করা হয়। সে মোতাবেক তিনি শনিবার দুপুরে নিরীক্ষা কমিটির সামনে হাজির হন। এ সময় হঠাৎ দেলোয়ার হোসেন মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১-এর মহাব্যবস্থাপক (জিএম) আবদুর রশিদ মৃধা বলেন, দেলোয়ার হেসেন মিয়া অফিসে এসে কাজ করা অবস্থায় হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হন। তাঁকে দ্রুত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
অভিযোগ উঠেছে, কমিটির প্রধান আরইবির উপপরিচালক মাসুদ রানা মো. দেলোয়ার হোসেনের কাছে ১০ লাখ টাকা উৎকোচ দাবি করেন। দাবি করা টাকা দিতে অস্বীকার করলে তাঁকে চাকরিচ্যুতির ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ বিভিন্নভাবে মানসিক চাপ প্রয়োগ করা হয়। এ ধরনের মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে দেলোয়ার হোসেনের অকাল মৃত্যু ঘটেছে।
দেলোয়ার হোসেন মিয়ার এমন মৃত্যুকে মেনে নিতে না পেরে সাধারণ কর্মচারীরা বেলা ২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত নিরীক্ষা দলের প্রধান মাসুদ রানাসহ অন্য সঙ্গীদের সমিতির একটি ভবনে অবরুদ্ধ করে রাখেন। কর্মচারীরা সদর দপ্তরে বিক্ষোভ করতে থাকলে স্থানীয় সংসদ সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ সুক্তি ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসে তাঁদের উদ্ধার ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ জিএম আবদুর রশিদ মৃধা বলেন, ‘নিহতকে চাকরির ভয় দেখিয়ে ১০ লাখ টাকা উৎকোচ দাবির বিষয়টি আমিও শুনেছি। আসলে এটি ছড়ানো কথা। এ ছাড়া ওই টাকা সংগ্রহের জন্য আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বলে যে খবর প্রচার হচ্ছে সেটিও ঠিক নয়।’
আবদুর রশিদ বলেন, দেলোয়ার হোসেন মিয়ার স্ত্রী মরদেহ বুঝে নিয়েছেন। আজ তাঁকে তাঁর গ্রামের টাঙ্গাইলের সখীপুরের নলুয়া গ্রামে দাফন করে ফিরছি। তা ছাড়া পুরো বিষয়টি মুক্তাগাছার পরিদর্শক (তদন্ত) সামলাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে মুক্তাগাছা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহবুবুল আলম বলেন, ‘উৎকোচ দাবির বিষয়টি আমিও শুনেছি। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ করা হয়নি। এ ব্যাপারে এসআই ওয়াজেদ তদন্ত করছে।’
এসআই ওয়াজেদ আলী বলেন, ‘বিষয়টি মাহবুব স্যার দেখেছেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে আমি শ্রমিকদের কাছে গিয়ে শুনেছি, শ্রমিকরা বলেছেন উৎকোচ দাবির কথা। নিহতের পরিবার কিছু বলে নাই। তাই কিছু করা যায়নি। আবেদন করে ময়নাতদন্ত ছাড়াই নিহতের স্ত্রী নীলুফির ইয়াসমীন ও তাঁর স্বজনরা লাশ নিয়ে গেছেন।’