‘ইমো’ দিয়ে যেভাবে টাকা হাতিয়ে নিত প্রতারকরা

মোবাইল ফোন ঠিক করার জন্য কেউ তা দোকানে দিলে ব্যক্তিগত তথ্য ও ছবি হাতিয়ে নেওয়া হয়। ওই মোবাইলে কল করার অ্যাপ ‘ইমো’ অ্যাকাউন্ট থাকলে তা ব্যবহার করা হয়। ওই মোবাইলের ইমো অ্যাকাউন্টধারীর হয়ে টাকাও আদায় করা হয়।
এভাবেই প্রতারক চক্র ‘ইমো’র মাধ্যমে হাতিয়ে নেয় টাকা। শুধু তাই নয়, ব্যক্তিগত তথ্য ও গোপন ছবি চুরি করে তা ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করে।
এমনই এক চক্রের দুই ব্যক্তিকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। আজ সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, আটক দুই ব্যক্তির নাম আলামিন শেখ ওরফে সবুজ (২৬) ও শাহাদাত হোসেন ওরফে মধু (২৫)। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ওই দুই ব্যক্তির কাছ থেকে শতাধিক নারীর প্রায় ১৫ হাজার ব্যক্তিগত ছবি উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব ৩-এর কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ আরো জানান, একাধিক ব্যক্তি র্যাবের কাছে অভিযোগ করেছে, এক শ্রেণির প্রতারক চক্র তাদের ইমো অ্যাকাউন্ট ও মোবাইল থেকে ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি হাতিয়ে নিয়েছে এবং তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা দাবি করছে।
এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব তদন্ত শুরু করে এবং অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত হয়ে গতকাল রোববার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা থেকে আলামিন শেখ ওরফে সবুজকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যমতে আজ সকালে গোপালগঞ্জ থেকে শাহাদত হোসেন ওরফে মধুকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে প্রতারক চক্র সম্পর্কে ধারণা দেন র্যাব ৩-এর কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ। তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই দুই ব্যক্তি এসব তথ্য দেন।
মোবাইল ফোন থেকে ছবি ও তথ্য চুরি
লেফটেন্যান্ট কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ জানান, প্রতারণার জন্য মোবাইল সারানোর দোকান ব্যবহার করে প্রতারকচক্র। এসব দোকানে কেউ মোবাইল ফোন ‘সার্ভিসিং’-এর জন্য নিয়ে গেলে তাঁরা দ্রুত ওই মোবাইল ফোন থেকে সব তথ্য ও ছবি নিজেদের ব্যক্তিগত কম্পিউটার বা ল্যাপটপে নিয়ে নেয়। পরে ওই ব্যক্তিগত ছবি বা তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করে ওই চক্র।
‘ইমো’ ব্যবহার করা
‘সার্ভিসিং’-এর জন্য দেওয়া ওই মোবাইল ফোনের মালিকের ‘ইমো’ অ্যাকাউন্ট থাকলে ওই নম্বর দিয়ে প্রতারকচক্রের নিজস্ব মোবাইলে নতুন ইমো অ্যাকাউন্টের ‘রিকোয়েস্ট’ পাঠানো হয়।
ওই ‘রিকোয়েস্টে’র বিপরীতে মোবাইল ফোনের মালিকের ফোনে ইমোর ‘ভেরিফিকেশন কোড’ আসে। তা সঙ্গে সঙ্গে প্রতারকচক্রের মোবাইলে স্থাপন করে এবং ওই মালিক বা ব্যক্তির মোবাইলের মেসেজ অপশন থেকে ভেরিভিকেশন কোড মুছে ফেলা হয়। তখন ওই ব্যক্তির অ্যাকাউন্টের মতো আরেকটি ইমো অ্যাকাউন্ট প্রতারকচক্রের মোবাইল ফোনে তৈরি হয়। এর ফলে একই সময়ে একটি ইমো অ্যাকাউন্ট দুটি মোবাইল ফোনে চলতে থাকে।
এরপর প্রতারক চক্র ওই ব্যক্তির ইমোর সব কার্যকলাপ অনুসরণ করে। গোপন আলাপচারিতা ও ছবি গোপনে ডাউনলোড করে নেয়। আর তা দেখিয়ে পরবর্তীকালে ওই ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা আদায় করে।
অফলাইনে থেকেও অনলাইনে
ইমোর অ্যাকাউন্ট হয়ে যাওয়ার পর প্রতারকচক্র ইচ্ছামতো ওই অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে। এমনকি ওই ব্যক্তি ইমোতে না থাকলেও (অফলাইনে) প্রতারক চক্র তা ব্যবহার করে। ওই ব্যক্তির স্বজনদের সঙ্গে ‘চ্যাট’ করে, বার্তা আদান-প্রদান করতে থাকে। এমনকি স্বজনদের কাছ থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টাকাও আদায় করে।
এছাড়া ওই চক্র ‘হ্যাক’ করেও তথ্য ও ছবি চুরি করে বলে জানান র্যাবের ওই কর্মকর্তা।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ জানান, তরুণ-তরুণী, প্রবাসী এবং উচ্চবিত্তশালী ব্যক্তিদের তাঁরা ‘টার্গেট’ করত। আটক শাহাদাত ওরফে মধু দীর্ঘদিন ধরে গোপালগঞ্জের মকসুদপুর থানার দিগনগর বাজারে একটি ‘মোবাইল সার্ভিসিং’য়ের দোকানে কাজ করত। তাঁর দোকানে যারা মোবাইল সারাতে আসত তাঁদের মোবাইল থেকে ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি এবং ইমো অ্যাকাউন্ট হাতিয়ে নিত। পরে তা তাঁর বন্ধু আলামিন শেখকে দিয়ে দিত। বাকি কাজগুলো আলামিন শেখই করত।