ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সিল মারা চেয়ার রেস্তোরাঁয়!

রাজধানীর মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় তামান্না পার্কের সামনের রাস্তার ঠিক পাশেই রয়েছে বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁ! সুন্দর সুন্দর চেয়ার-টেবিল আর বড় বড় ছাতা দিয়ে সাজানো হয়েছে এসব হোটেল। তামান্না পার্ক বা বেড়িবাঁধ এলাকায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা খাবারের জন্য বা বিশ্রামের জন্য খোলা জায়গার এসব হোটেলে বসেন।
সেখানে একটি হোটেলে চোখে পড়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সিল মারা বেশ কিছু চেয়ার। এতে লেখা আছে, ‘মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম (ষষ্ঠ পর্যায় প্রকল্প), ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ঢাকা জেলা কার্যালয়’।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সিল মারা এসব চেয়ার সাধারণত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থাকার কথা। কিন্তু তা ভাতের হোটেলে এলো কীভাবে?
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হোটেল মালিকের ছেলে মো. দীন ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে জানান, এসব চেয়ার তাঁরা মিরপুর ১ নম্বরের তানিন প্লাস্টিকের শোরুম থেকে কিনে এনেছেন। ৪৫০ টাকা দরে ৫০টি চেয়ার কিনেছেন। কর্তৃপক্ষ নিজ দায়িত্বে এসব চেয়ার হোটেলে পাঠিয়েছে। ৫০টির মধ্যে সাত-আটটি চেয়ারে এই সিল মারা ছিল।
সরকারি সিল মারা এসব চেয়ারের বিষয়টি তানিনকে জানানো হয়েছি কি-না জানতে চাইলে দ্বীন ইসলাম জানান, তাঁরা ভেবেছেন, এগুলো হয়তো ভুলে চলে এসেছে। তাই জানানো হয়নি।
তানিনের শোরুমের বক্তব্য
সরকারি সিল দেওয়া চেয়ারের ব্যাপারে মিরপুর-১-এর তানিন প্লাস্টিকের শোরুমে যোগাযোগ করা হলে সেখানকার ব্যবস্থাপক জোবায়ের হোসেন প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরে প্রমাণ দেওয়া হলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেন এবং ভুল স্বীকার করেন।
ওই শোরুমের সেলসম্যান আতিকুর রহমান সিল মারা চেয়ার বিক্রির ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন আমাদের ২৭ হাজার চেয়ারের অর্ডার দেয়। আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ১৭ হাজার চেয়ার সরবরাহ করতে পেরেছি। বাকিগুলো আমাদের কাছে ছিল। সেখানে তো ওই সিল রয়ে গেছে। সেগুলো বিক্রির সময় বিভিন্ন জনের কাছে ১০, ২০, ৫০টা চলে গেছে।’
ব্যবস্থাপক জোবায়ের হোসেন বলেন, ‘চেয়ারগুলো বাইরে বিক্রি করাটা সত্যি ভুল হয়েছে। এটা মিসটেক হইছে ভাই, মিসটেক হইছে।’
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বক্তব্য
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক এ বি এম সফিকুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে জানান, বিষয়টি তিনি প্রথম জানলেন। এরপর তিনি বিষয়টি তদন্ত করার জন্য ঢাকা জেলা কার্যালয়ের এক কর্মকর্তাকে আদেশ দেন।
এ বি এম সফিকুল ইসলাম আরো বলেন, ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অধীনে এই চেয়ারগুলো বিতরণ করা হয়েছে। তা হোটেলে ব্যবহার হতে পারে না। আর যদি কোনো কোম্পানি এই সিলযুক্ত চেয়ার বিক্রি করে থাকে, তবে তাদের বিরুদ্ধেও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কোনো কর্মকর্তা বা অন্য কেউ শোরুমের মাধ্যমে চেয়ারগুলো বিক্রি করছে না বলেও মন্তব্য করেন এ বি এম সফিকুল ইসলাম।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ঢাকা জেলার কর্মকর্তার ভাষ্য
ঢাকা জেলা কার্যালয়ের পরিচালক নূর মোহাম্মদ আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘হেড অফিস থেকে ঘটনা শোনার পর আমি একটা টিম পাঠাইয়া দিছি। ওরা এলে আমরা বিস্তারিত বলতে পারব।’
নূর মোহাম্মদ আলম আরো জানান, তাঁরা এক হাজার ৭৫০টি লাল রঙের চেয়ারের আদেশ দিয়েছিলেন। তানিন এর মধ্যে আড়াইশ নীল রঙের চেয়ার দেয়। সেগুলো পরে ফেরত দিয়েছি। সেগুলোতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সিল মারা ছিল। সেই চেয়ার বিক্রি করলে সিল উঠিয়ে বিক্রির প্রয়োজন ছিল। কোম্পানির লোকদের ডেকে এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে বলে জানান তিনি।