সাকার আপিলের যুক্তিতর্ক কাল শেষ করার নির্দেশ

মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর আপিলের ওপর আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক আগামীকাল মঙ্গলবারের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
আজ সোমবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের বেঞ্চ আপিলের ১২তম দিনের শুনানির সময় এ নির্দেশ দেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
সাকা চৌধুরীর পক্ষে তাঁর আইনজীবী অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। এ বিষয়ে তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ট্রাইব্যুনাল নয়টি অভিযোগে সাজা দিয়েছেন। এসব অভিযোগ খণ্ডন করে আমরা যুক্তিতর্ক তুলে ধরার চেষ্টা করছি। আশা করি, তিনি খালাস পাবেন। আদালত আগামীকালের মধ্যে আমাদের শেষ করতে বলেছেন।’
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপিলের যুক্তিতর্ক আসামিপক্ষকে আগামীকালের মধ্যে শেষ করতে বলা হয়েছে।’ এর আগে গত ১ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। ফাঁসির দণ্ড বহাল রাখার বিষয়ে দুই দিনব্যাপী এই যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন তিনি।
মাহবুবে আলম আরো বলেন, ট্রাইব্যুনাল বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে চারটি অপরাধে ফাঁসি দিয়েছিলেন। তিনটিতে ২০ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন। তার মধ্যে তিন নম্বর অভিযোগে নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং চট্টগ্রামের রাউজানে ঊনসত্তরপাড়া এলাকায় শান্তি কমিটির মিটিংয়ে সংখ্যালঘুদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মোজাফফর আলী এবং ছেলে শেখ আলমগীরকে গুম করা হয়। তাঁদের আর হদিস পাওয়া যায়নি। শেখ আলমগীরের স্ত্রী উম্মে হাবিবা তাঁর শ্বশুর ও স্বামীকে গুম করার বিষয়ে সাক্ষ্য দেন, যা ছিল খুবই হৃদয়বিদারক।’ এর আগে আসামিপক্ষ ট্রাইব্যুনালের রায় আদালতে পড়ে শোনান এবং তাঁদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।
গত ৩০ মে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপিলের শুনানি শুরু হয়। সালাউদ্দিনের পক্ষে খন্দকার মাহবুব হোসেন ও অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান শুনানিতে অংশ নেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদেরের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। তাঁর বিরুদ্ধে আনা ২৩ অভিযোগের মধ্যে ১৭টিতে সাক্ষ্যপ্রমাণ হাজির করে রাষ্ট্রপক্ষ। এর মধ্যে নয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। আটটি অভিযোগ থেকে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়। এ ছাড়া ছয়টি অভিযোগের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ কোনো প্রমাণ হাজির না করায় ওই সব অভিযোগ থেকেও তাঁকে খালাস দেওয়া হয়। প্রমাণিত নয়টি অভিযোগের মধ্যে গণহত্যার চারটি অভিযোগে সালাউদ্দিন কাদেরকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। এগুলো হলো রাউজানের মধ্যগহিরা, জগৎমল্লপাড়া, রাউজানের ঊনসত্তরপাড়া ও শাকপুরা গ্রামে গণহত্যা। সালাউদ্দিন কাদেরকে তিনটি অভিযোগে ২০ বছর করে ৬০ বছর ও দুটি অভিযোগে পাঁচ বছর করে ১০ বছরসহ মোট ৭০ বছর কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। এসব অভিযোগ থেকে খালাস চেয়ে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২৯ অক্টোবর আপিল করেন বিএনপি নেতা।
হরতালের আগের রাতে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার হন বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। এরপর ১৯ ডিসেম্বর তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।