‘কুমিল্লার পর আর কিছুই বলতে পারি না’

ঘড়ির কাঁটা দুপুর ১টার ঘরে। রাজধানীর কল্যাণপুর হানিফ পরিবহনের বাস কাউন্টার। টিকেটের জন্য ভিড় জমিয়েছেন ঈদে ঘরমুখো মানুষ। উপস্থিত সবাই তখন টিকেটের জন্য মরিয়া। কেবল একজনকেই দেখা যাচ্ছে, যিনি একটু পরপর অন্যদের দিকে নির্বাক তাকাচ্ছেন।
এ ছাড়া একটু পরপর চোখ বন্ধ করছেন। সেইসঙ্গে বারবার বসে পড়ছেন, আবার উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে কল্যাণপুরে হানিফের বাস কাউন্টারে ওই ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, তাঁর নাম প্রবীর কুমার দেব। বাড়ি চট্টগ্রামে। সেখানে তিনি ঠিকাদারি ব্যবসা করেন। সেই ব্যবসার কাজেই প্রবীর কুমারকে মাঝেমধ্যে ঢাকায় আসতে হয়।
প্রবীর কুমার এনটিভি অনলাইনকে জানান, ঢাকায় মতিঝিলের একটি সরকারি অফিসে তাঁর কাজ ছিল। সে কারণে তিনি বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় চট্টগ্রামের শ্যামলী কাউন্টার থেকে টিকেট কেটে বাসে ওঠেন। যেহেতু ঢাকায় মাত্র একদিনের কাজ, তাই ব্যাগে করে বাড়তি পোশাক হিসেবে একটি শার্ট ও জরুরি কাগজপত্র সঙ্গে এনেছিলেন প্রবীর কুমার।
বাসটি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসার পথে কুমিল্লায় যাত্রাবিরতি দেয়। সেখানে নেমে তিনি রেস্তোরাঁ থেকে খাবার খেয়ে আবার বাসে ওঠেন। এর পর আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রবীর কুমার নিজেকে রাজধানীর কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডে হানিফের কাউন্টারে আবিষ্কার করেন। কিন্তু এর মধ্যেই খোয়া গেছে তাঁর মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোন।
প্রবীর কুমার বলেন, ‘কুমিল্লায় গাড়ি দাঁড়ানোর পর নেমে রাতের খাবার খেয়ে আবার আমি গাড়িতে উঠে পড়ি। কুমিল্লার পর থেকে আর কিছুই বলতে পারি না। এখন দেখি, আমার মানিব্যাগ ও মোবাইল কিছুই নেই। ব্যাগে বেশ কিছু টাকা ছিল। আর মোবাইল নেই। তাই বাড়িতে যোগাযোগ করতে পারছি না। কাউকে ফোনও করতে পারছি না, শুধু মাথাটা ঘুরছে, আর ঘুম পাচ্ছে’, বলেন প্রবীর।
এ ঘটনার পর পুলিশের সহযোগিতা চাওয়ার বিষয়ে প্রবীর কুমার বলেন, ‘এখানে দুজন পুলিশ ছিল তাদের বলেছি। তারা বলে, আপনি ভেতরে যান, আমরা দেখব নে, এই বলে চলে যায়।’
প্রবীর কুমার দেবের ঘটনা শোনার পর আশপাশে খোঁজাখুঁজি করতেই দারুস সালাম থানা পুলিশের একটি দলের সঙ্গে দেখা হয়। এর পর বিষয়টি তাদের জানালে তারা গিয়ে প্রবীর কুমার দেবের কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত জেনে নেয়।
এ সময় বাসস্ট্যান্ড এলাকার এক ডাব বিক্রেতা পুলিশ ও সাংবাদিকের কাছে এসে বলেন, ‘স্যার আমি দেখেছি, রাত সাড়ে ৩টার দিকে এই লোককে বাস থেকে এখানে জোর করে নামিয়ে দিয়ে গেছে।’ কারা নামিয়ে দিয়েছে—জানতে চাইলে বলেন, বাসের হেলপার ও সুপারভাইজার।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট মনিরের সহায়তায় দারুস সালাম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাবিউল ইসলাম ওই ব্যক্তিকে নিয়ে শ্যামলীর কাউন্টারে গিয়ে কথা বলেন।
এসআই রাবিউল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ওই ব্যক্তিকে হয়তো কিছু খাইয়ে অজ্ঞান করে তাঁর সব লুট করা হয়েছে। তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থার পাশাপাশি স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে।’
যদিও ওই দিন দুপুরেই রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে বাস মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জমান মিয়া অজ্ঞান পার্টির খপ্পর থেকে মানুষকে সাবধান থাকার জন্য প্রচার চালানোর কথা জানান। এ সময় তিনি দাবি করেন, পুলিশের তৎপরতা দেখে অপরাধীরা গা-ঢাকা দিয়েছে।