রংতুলির মাধ্যমে অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়েছে ‘তারুণ্য কথা’

নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ভুগছে গোটা বিশ্ব। কর্মহীন হয়ে পড়েছে অসংখ্য মানুষ। স্থবির হয়ে আছে অর্থনীতির চাকা। ঠিক তখনই একঝাঁক খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী হাতে তুলে নিয়েছেন রংতুলি, আঁকছেন জগদ্বিখ্যাত ব্যক্তি আর প্রকৃতির ছবি। আর এসব ছবি বিক্রির টাকা পৌঁছে যাবে করোনা মহামারিতে ক্ষুধার্ত অসহায় মানুষের কাছে। আর এ কাজে এগিয়ে এসেছে দেশের চিত্রশিল্পীদের সংগঠন ‘তারুণ্য কথা’।
সে লক্ষ্যে গত ৬ এপ্রিল থেকে ‘তারুণ্য কথা’ আয়োজন করেছে ‘আর্ট অ্যাগেইনস্ট কোভিড-১৯’ চিত্র প্রদর্শনী। সেখানে অংশ নিতে শিল্পীদের কাছে আবেদন করা হয়। প্রদর্শনীতে ছবি বিক্রির অর্থ দিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে চায় ‘তারুণ্য কথা’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের অধ্যাপক একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী জামাল আহমেদ বলেন, “একজন শিল্পী হিসেবে দেশ ও জাতির প্রতি আমার কিছু দায়িত্ব আছে। সে দায়িত্ববোধ থেকে ‘তারুণ্য কথা’র এই মানবিক আয়োজনের সঙ্গে আমি আছি, আপনিও থাকুন অসহায় মানুষের পাশে, দেশের সঙ্গে।” মৎস্যজীবী শিরোনামে তাঁর একটি শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে।
ঢাবির চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন নিজেও একটি ছবি এ প্রদর্শনীতে দেন। তিনি বলেন, ‘খ্যাতিমান শিল্পীরা সব সময় দেশের দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় সাধারণ মানুষে পাশে দাঁড়িয়েছেন। ঠিক তেমনি এখনো সাধারণ মানুষের কল্যাণে, দেশের কল্যাণে তাঁদের চিত্রকর্ম দেবেন।’

এ ছাড়া ‘তারুণ্য কথা’র প্রদর্শনীতে এখন পর্যন্ত যেসব শিল্পীর শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে, তাঁরা হলেন—শিল্পী ওয়াদুদ কাফিল, অভিজিৎ চৌধুরী, সঞ্জীব দাস অপু, নাজিব তারেক, রেজাউল হক লিটন, শাহানূর মামুন, কাদিমুল ইসলাম জাদু, কারু তিতাস, আফরোজা খন্দকার, রনি চন্দ্র মণ্ডল, প্রদ্যুৎ কুমার দাস, মুক্তি ভৌমিক, ফারজানা ইসলাম মিল্কি, ফারহানা আফরোজ বাপ্পি, ঝোটন চন্দ্র রায়, বিপ্লব সরকার, সিগমা হক অংকন, কিরীটি রঞ্জন বিশ্বাস, সুকান্ত ভৌমিক, রেহানা শিলা, মণিদীপা দাশগুপ্ত, রিফাত জাহান কানতা, মাহবুবুর রশিদসহ অন্তত ৪০ জন শিল্পী। তাঁদের প্রায় প্রায় ৭০টি শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে।
একটি ছবি বিক্রির পর শিল্পী নাজিব তারেক ফেসবুকে পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লেখেন, “বরাবরের মতোই এ কোভিডেও শিল্পীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। আমিই বিবিধ কারণে বহুদিন এমন কোনো উদ্যোগে জড়াইনি। ‘তারুণ্য কথা’র উদ্যোগে না জড়িয়ে পারলাম না। সন্ধ্যায় যখন এ জড়িয়ে পড়ার ফলস্বরূপ জানলাম, আমার ছবিটি বিক্রি হয়েছে এবং বিক্রির অর্থ এক বিপন্ন নারীকে আপাত স্বস্তিও দিয়েছে, তখন সে অনুভূতি আশা করি সকলের অনুমেয়। আপনি ‘তারুণ্য কথা’র এ উদ্যোগে কীভাবে শামিল হবেন, সে আপনাদের ভাবনা, আমি শুধু আশা করতে পারি।”
‘তারুণ্য কথা’র আহ্বায়ক আতিকুর রহমান দিপু এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সারা দেশের মানুষকে আর্থিক ও খাবারের সহায়তা দিয়ে আসছেন। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে শিল্পীসমাজও এগিয়ে এসেছে। আমরা আমাদের সাধ্যের মধ্যে শিল্পীর ছবি বিক্রির সীমিত টাকা দিয়ে যতটুকু পারছি, সহযোগিতা করে আসছি।’

আতিকুর রহমান দিপু আরো বলেন, “আমি মনে করি, প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করা। তাই ছবি বিক্রির টাকায় বিশেষ পরিস্থিতির কারণে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে চায় ‘তারুণ্য কথা’। আমরা যেখানে শিল্পকর্ম বিক্রির জন্য প্রচারণা চালাচ্ছি, ওখান থেকে অনেকে আমাদের কাছে সাহায্য চেয়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি, কিছু মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে।”
শিল্পী আতিকুর রহমান দিপুর নেতৃত্ব ২০১৮ সালে একঝাঁক শিল্পীর সমন্বয়ে গঠিত হয় ‘তারুণ্য কথা’। এর অভিষেক হয় গত জাতীয় নির্বাচনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের পক্ষে শিল্পীর তুলিতে নৌকার প্রচারণার মাধ্যমে।
এরপর ২০১৯ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বর্ণাঢ্য ও সংগ্রামী জীবনকে উপজীব্য করে আঁকা চিত্রকর্ম নিয়ে জাতীয় জাদুঘরে ‘আছো সত্তায় আছো চেতনায়’ শিরোনামে চিত্র প্রদর্শনী করে ‘তারুণ্য কথা’।
এরপর ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর অনুকরণীয় জীবনাদর্শ বর্তমান প্রজন্মের মাঝে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে তাঁর সংগ্রামী জীবনকে উপজীব্য করে আঁকা ১০০টি সৃজনশীল চিত্রকর্ম নিয়ে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করে তারা।
‘শতাব্দীর মেলবন্ধন’ শীর্ষক ফিঙ্গারপ্রিন্টভিত্তিক ‘ইন্টারঅ্যাকটিভ পেইন্টিং’ করছে ‘তারুণ্য কথা’। যেখানে রাজনৈতিক নেতা, শিল্পী-সাহিত্যিক, নতুন প্রজন্ম ও সাধারণ মানুষের আঙুলের ছাপে সৃষ্টি হবে বঙ্গবন্ধুর অনবদ্য প্রতিকৃতি।
সমাজের উচ্চবিত্ত মানুষের প্রতি ‘তারুণ্য কথা’র আহ্বান—একটি শিল্পকর্মের বিনিময়ে হাত বাড়িয়ে সাধারণ অসহায় মানুষের কল্যাণে এসে দাঁড়ান।