নারীরা কাকে বিয়ে করবে ও কখন গর্ভধারণ করবে, সেটা সম্পূর্ণ নারীর অধিকার : প্রতিমন্ত্রী

মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেছেন, নারীরা কখন বিয়ে করবে, কাকে বিয়ে করবে, কখন গর্ভধারণ করবে, এগুলো সম্পূর্ণ ওই নারী সিদ্ধান্ত নিবে। এসব সিদ্ধান্ত নেওয়ার তার অধিকার আছে। এটা নারীর মানবাধিকার। কিন্তু বর্তমানে দেশের অনেক অঞ্চলে নারীরা এসব অধিকার থেকে বঞ্চিত।
ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আজ শনিবার এক অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা, গণমাধ্যমকর্মী, সুশীল সমাজ, এনজিও ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দকে অবহিতকরণ এবং ১০ লাখ মানুষের গণস্বাক্ষর নেয় ইউএসএআইডি উজ্জীবন এসবিসিসি প্রকল্প। মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরার হাতে এগুলো হস্তান্তর করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, যে দেশে অর্ধেক নারী সে দেশে নারীকে বাদ দিয়ে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। বাল্যবিয়ে একটি সামাজিক সমস্যা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ নারী উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বে রোল মডেল সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘের ৭৫তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাপী ২০৪১ সাল নাগাদ কর্মস্থলে নারীর কর্মসংস্থান ফিফটি-ফিফটি উন্নীত করার অঙ্গীকার করেছেন। প্রধানমন্ত্রী আরও ঘোষণা দেন ২০৪১ সালের মধ্যে বাল্যবিয়ের হার শূন্যতে নিয়ে আসবেন। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে।
ইন্দিরা বলেন, নারীরা সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। জাতির পিতা সর্বপ্রথম নারীদের গুরুত্ব অনুধাবন করেন। জাতির পিতা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধানে নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত করেন। এরই ধারাবাহিকতায় জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে নারী উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন, নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মুহিবুজ্জামান ডিজিটাল লাইব্রেরি সম্পর্কে তার মতামত ও অভিজ্ঞতা উপস্থাপন করেন।
ইউএসএআইডি উজ্জীবন এসবিসিসি প্রকল্প মা, নবজাতক ও শিশু-কিশোর স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা, পুষ্টি এবং যক্ষ্মা বিষয়ে সচেতনতামূলক কাজের একটি সমন্বিত প্রয়াস। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে উজ্জীবন প্রকল্প বাংলাদেশের সকল সম্প্রদায়ের মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার নিমিত্ত স্বাস্থ্য বিষয়ে কাজ করছে। এলক্ষ্যে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে দেশব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধিতে উজ্জীবন প্রকল্পের আওতায় ১০ লাখ গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়েছে। এ কার্যক্রমে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভিন্ন ভিন্ন পেশা ও বয়সের জনসাধারণ অংশগ্রহণ করেছেন।
এ কার্যক্রমের জন্য হপকিন্স সেন্টার ফর কমিউনিকেশন প্রোগ্রামস, ইউএসএআইডি-র উজ্জীবন প্রকল্পের আওতায় মা, নবজাতক ও শিশু-কিশোর স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও পুষ্টি ক্ষেত্রে সাফল্য আনয়নের লক্ষ্যে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধেও বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে। এ কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ সংক্রান্ত একটি ডিজিটাল লাইব্রেরি তৈরি করা হয়েছে যা মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত ডিজিটাল লাইব্রেরিতে, মন্ত্রণালয়ের বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং অধীনন্থ দপ্তর বা সংস্থা কর্তৃক গৃহীত কার্যক্রমের তথ্য ও উপকরণ সন্নিবেশ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ইউএসএআইডির মিশন ডিরেক্টর স্টিভেনস বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরী, মা-বাবা, ধর্মীয় নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং নীতি নির্ধারকদের দ্বারা স্বাক্ষরিত ১০ লাখ অঙ্গীকারের তাৎপর্য তুলে ধরেন।
তিনি জোর দিয়ে উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশ সরকার এবং তাদের অন্যান্য অংশীদারদের সহায়তা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ; যেন সবাই মিলে এমন একটি দেশ গড়ে তোলা যায়, যেখানে বাংলাদেশের শিশুরা তাদের মেধা ও দক্ষতা বিকাশের সকল সুযোগ পাবে এবং তারা নিজেদের, পরিবারের ও নিজ নিজ এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইউএসএআইডির ডেপুটি পরিচালক মিরান্ডা বেকম্যান; ইউএসএআইডির মিশন ডিরেক্টর ক্যাথরিন স্টিভেনস; সেলিমা আহমাদ, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফরিদা পারভিন। স্বাগত বক্তব্য দেন ইউএসএআইডির উজ্জীবন প্রকল্পের প্রধান ড. ফয়সাল মাহমুদ। ইউএসএআইডির উজ্জীবন প্রকল্পের সহকারী প্রধান ড. জিনাত সুলতানা বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ পরিস্থিতি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ উপস্থাপন করেন।
অতিথিদের প্রতিশ্রুতি স্বাক্ষরের পূর্বে শায়েস্তাগঞ্জ থিয়েটার গ্রুপ একটি ইন্টারেক্টিভ জনপ্রিয় থিয়েটার শো পরিবেশন করে। বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ আইনত দণ্ডনীয় হলেও এই প্রথা অব্যাহত রয়েছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিদের সাথে মতবিনিময় করার সময়ে তারা কর্তৃপক্ষকে বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে এ ধরনের অনুষ্ঠান আরও আয়োজন করার জন্য অনুরোধ করেন।