‘মমতা’ প্রকল্প বন্ধের খবরে দুশ্চিন্তায় ৬ ইউনিয়নের নারীরা

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ‘মমতা’মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবরে বিপাকে পড়েছেন আশেপাশের চরাঞ্চলসহ ছয়টি ইউনিয়নের হাজারো গর্ভবতী নারী। সাশ্রয়ী ও নির্ভরযোগ্য এই স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেলে তাদের মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্যসেবা সংকটের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
২০২১ সালের মে মাসে সেভ দ্য চিলড্রেনের অর্থায়নে এবং এসকেএস ফাউন্ডেশনের বাস্তবায়নে এই কেন্দ্রে ‘মমতা’প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে কেন্দ্রটিতে নরমাল ডেলিভারি সেবাও চালু হয়। নিয়মিতভাবে গর্ভবতী মায়েদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা (এএনসি), প্রসব-পরবর্তী সেবা (পিএনসি) এবং নিরাপদ প্রসবের সুবিধা দিয়ে আসছিল কেন্দ্রটি।
প্রতিমাসে এখানে গড়ে ৩১৬ জন গর্ভবতী নারী এএনসি সেবা নেন, ১৭৪ জন পিএনসি সেবা পান এবং গড়ে ৩৫টি সফল নরমাল ডেলিভারি সম্পন্ন হয়। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে এখানে ৭২টি সফল নরমাল ডেলিভারি হয়েছে। ২০২৫ সালে ‘মমতা’প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত সারাদেশের কেন্দ্রগুলোর মধ্যে এই কেন্দ্রটির অবস্থান ছিল ৭০তম।
সাঘাটার ভরতখালী ছাড়াও ফুলছড়ি উপজেলার চরাঞ্চল-ফজলুপুর, গজারিয়া, ফুলছড়ি ইউনিয়ন এবং সাঘাটা উপজেলার মুক্তিনগর, সাঘাটা, পদুমশহর ইউনিয়নের অসংখ্য মা ও শিশু এই কেন্দ্রে সেবা নিয়ে উপকৃত হয়েছেন। কিন্তু সম্প্রতি জানানো হয়, ৩০ জুন থেকে ‘মমতা’প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। এতে হতাশা ও অনিশ্চয়তায় পড়েছেন সেবা নিতে আসা নারী ও তাঁদের পরিবার।
ফুলছড়ির গজারিয়া ইউনিয়নের বাইংকা চর থেকে আসা গর্ভবতী নারী স্বপ্না বেগম বলেন, ‘এখানে এলেই ভালো সেবা পাওয়া যেতো। এখন বন্ধ হয়ে গেলে কোথায় যাব বুঝতে পারছি না। হাসপাতালে যাওয়া আমাদের মতো চরবাসীর জন্য খুবই কষ্টকর।
একই গ্রামের সীমা আক্তার বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ, গাইবান্ধা, সাঘাটা বা ফুলছড়িতে যাওয়া অনেক কষ্ট। এই ভরতখালী মমতা প্রকল্পের কেন্দ্রটিই একমাত্র ভরসা ছিল। এটি বন্ধ হয়ে গেলে খুব বিপদে পড়বো।’
পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা ফরিদা পারভীন বলেন, আমরা অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে নরমাল ডেলিভারিসহ সব ধরনের মাতৃত্বকালীন সেবা দিয়ে আসছিলাম। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হলে চরাঞ্চলের মানুষগুলোর জন্য এটি বড় বিপদ হয়ে দাঁড়াবে।
এসকেএস ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক (ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম) খন্দকার জাহিদ সারোয়ার (সোহেল) বলেন, আমরা চাই ‘মমতা’ প্রকল্পটি চলমান থাকুক। কিন্তু প্রকল্পের একটা নির্ধারিত সময়সীমা থাকে। দাতা সংস্থা অর্থায়ন বন্ধ করে দিলে সেটি চালু রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে যদি স্থানীয় সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সহায়তা করে, তাহলে এই সেবাটি অন্যভাবে আবার সচল রাখা সম্ভব।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। এটা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের বিষয়। তবে আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো।’