আমাদের ভুল-ভ্রান্তিকে অন্যের ঘাড়ে চাপাতে ভালোবাসি : ডা. জাফরুল্লাহ

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকায় বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণ ঘটনার তৃতীয় দিন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ জনে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় তল্লা এলাকার বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। শোক চলছে সেখানে। স্বজনহারা মানুষজন ও হতবিহ্বল স্থানীয়রা প্রশ্ন ছুড়ছেন, কেন এই বিস্ফোরণ?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের গঠিত তদন্ত কমিটি বলছে, এই ঘটনায় গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংক্রান্ত কোনো গাফিলতি ছিল কি না, এবং নাশকতামূলক কিছু আছে কি না, তা খোঁজা হচ্ছে। তবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বললেন, ‘এটা আমাদের ব্যর্থতা, আমরা আমাদের ভুল-ভ্রান্তিকে অন্যের ঘাড়ে চাপাতে ভালোবাসি।’
আজ রোববার সকাল থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটির একটি বিশেষজ্ঞ দল কাজ করেছে। এদিকে আজ দুপুরে গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ঘটনাস্থলে থেকে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক নূর হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কজেজ অব ফায়ারের যে ১৭টি কারণ আছে, সবকটিকে আমরা অ্যানালাইসিস করছি। ১৪টি কারণকে আমরা ইগনোর করেছি। এখন আমরা তিনটার মধ্যে চলে এসেছি। এই তিনটা হলো গ্যাস, বিদ্যুৎ আর একটি নাশকতামূলক কিছু এর ভেতরে আছে কি না। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ঘটনাটি নাশকতা কি না, সে বিষয়ে।’
নূর হাসান বলেন, ‘গতকাল আমরা বিদ্যুৎ এবং গ্যাস দেখেছিলাম। আমাদের সঙ্গে একটি ইঞ্জিনিয়ার বিশেষজ্ঞ টিম এসেছে। আজকে আমরা এসিগুলো পরীক্ষা করব। এসিগুলো পরীক্ষা করে আমরা নিশ্চিত হয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করব টিমের সঙ্গে।’
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘এই মুসল্লিদের এখানে যে চিকিৎসাটা হওয়া উচিত ছিল সেটা হয়নি। এটা এত বড় একটি জেলা শহর। এখানে এত বড় হাসপাতাল আছে। এখানে সঙ্গে সঙ্গেই উচিত ছিল মরফিন ইনজেকশন দেওয়া। তাহলে ব্যথাটা থাকত না। আমার কষ্ট লেগেছে এখান থেকে ঢাকায় যেতে অন্তত দুই ঘণ্টা সময় লেগেছে। এই যে কষ্টটা, এটা অকল্পনীয় কষ্ট। যে ব্যথাটা এটা আপনারা উপলব্ধি করতে পারবেন না। আমাদের সরকার আরো একটু সতর্ক হলে, আরো একটু ব্যবস্থা নিলে অন্তত ২৪ জনের জায়গায় অর্ধেক লোক কম মারা যেত।’
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা আমাদের ভুল-ভ্রান্তিকে অন্যের ঘাড়ে চাপাতে ভালোবাসি, নাশকতা দিয়ে-টিয়ে। যদিও সরকার এই ঘটনা ঘটায়নি, কিন্তু এটা আমাদের একটি ব্যর্থতা। যারা মারা গেছে তাদের অন্তত ১০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত। আর এই ঘটনায় তদন্ত হবে, এ হতে পারে, তা হবে এসব না বলে দ্রুতই এই ঘটনার জন্য যারা দায়ী তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত। এখানে স্বাস্থ্য বিভাগেরও একটি ব্যর্থতা আছে। প্রত্যেকটি জেলা শহরে একটি করে বার্ন ইউনিট করা উচিত। এবং এটা কিন্তু খুবই সোজা কাজ। দুই দিনের মধ্যে যেকোনো ডাক্তারকে খুব ভালোভাবে এটার ট্রেনিং দেওয়া যায়। এটার খরচও কম। সব জেলায় অন্তত দুজন করে ডাক্তার রাখা উচিত।’