স্কুইড গেমের সমাপ্তি, সামনে দক্ষিণ কোরিয়ার তিক্ত সত্য

নেটফ্লিক্সের বিশ্বজয়ী সিরিজ স্কুইড গেমের তৃতীয় ও শেষ সিজন সম্প্রচার শেষে লাখো ভক্ত সিরিজের বিদায়ী পর্ব দেখে নিজেদের বাস্তব জীবনে ফিরেছেন। তবে অনেক দক্ষিণ কোরিয়ান এই সিরিজ দেখে আবারও সেই কঠিন বাস্তবতার কথা ভাবছেন, যা এই ডিস্টোপিয়ান গল্পের প্রেরণা ছিল। খবর বিবিসির।
২০২১ সালে মুক্তির পর থেকেই রঙিন সেট আর পুঁজিবাদী সমাজের অন্ধকার বার্তায় দর্শককে মুগ্ধ করেছে স্কুইড গেম। গল্পে আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত মানুষরা বাঁচার জন্য প্রাণঘাতী শিশুদের খেলায় অংশ নেয়। হেরে গেলে মৃত্যু অবধারিত।
তৃতীয় সিজনের এক দর্শক ইউটিউবে লিখেছেন, “স্কুইড গেম ৩ কোরিয়ানদের আসল অনুভূতি আর মনের গভীর চিন্তাগুলো ফুটিয়ে তুলেছে। অফিসে যেমন মানুষ একে অপরকে পিষে ফেলার জন্য মুখিয়ে থাকে, ঠিক তেমনই দেখানো হয়েছে।”
বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিযোগিতামূলক সমাজ, বৈষম্য আর চরম মানসিক চাপের বাস্তবতায়ই স্কুইড গেম-এর জন্ম। যেখানে মানুষ সন্তান নিতে ভয় পায়, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা জীবনের একমাত্র সুযোগ হিসেবে বিবেচিত হয়।
প্রধান চরিত্র সিয়ং গি-হুনের গল্পও সত্য ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত। ২০০৯ সালে স্যাংইয়ং মোটর কারখানায় গণছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের ধর্মঘট এবং পুলিশি হামলা দক্ষিণ কোরিয়ার বড় শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে অন্যতম।
একজন চলচ্চিত্রপ্রেমী ব্লগার লিখেছেন, “গল্প হয়তো কাল্পনিক, কিন্তু বাস্তবের চেয়েও বাস্তব মনে হয়েছে। অনিশ্চিত চাকরি, বেকারত্ব, ভাঙা পরিবার – এগুলো কোনো গল্পের অংশ নয়, বরং প্রতিদিনকার লড়াই।”

তবে শনিবার রাতে রাজধানী সিউলের রাস্তায় ব্লকবাস্টার ফাইনাল উদযাপনে ছিল উল্লাস। স্কুইড গেমের রঙিন ট্র্যাকসুট পরা গার্ড আর বিশাল ডল শোভাযাত্রায় অংশ নেয়।
দেশের নতুন প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং স্কুইড গেম, বিটিএস আর অস্কারজয়ী প্যারাসাইট-এর মতো সাফল্যের ওপর ভর করে কে-কালচার বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চান।
এদিকে ফাইনাল পর্বের এক দৃশ্যে অভিনেত্রী কেট ব্ল্যানচেট লস অ্যাঞ্জেলেসের এক গলিতে কোরিয়ান খেলা খেলতে দেখা গেছে, যা মার্কিন স্পিন-অফের গুঞ্জন তৈরি করেছে।

মিশ্র প্রতিক্রিয়া
শেষ সিজনে গি-হুন গেম বন্ধ করতে চাইলেও ব্যর্থ হয়, আর অন্য এক খেলোয়াড়ের শিশুকে বাঁচাতে নিজেকে উৎসর্গ করে। অনেকেই এই সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্বিধায় পড়েছেন।
একজন নেটিজেন লিখেছেন, “চরিত্রের অতিরিক্ত পরোপকারিতা বিরক্তিকর লেগেছে। নিজের পরিবারের চেয়ে অচেনা মানুষের জন্য এভাবে আত্মত্যাগ অযৌক্তিক মনে হয়েছে।”
অন্যদিকে কেউ কেউ বলেছেন, গি-হুনের মৃত্যু গল্পের অস্বস্তিকর বাস্তবতাকে শক্তিশালী করেছে। “আমরা চাইতাম গি-হুন জিতুক, ভিআইপিদের হত্যা করুক, গেম শেষ করুক – কিন্তু এই পৃথিবী তেমন নয়।”

সিরিজের নির্মাতা হোয়াং ডং-হিউক বলেন, “প্রথম সিজনে প্রত্যাশা ছিল না, তাই নতুনত্ব কাজ করেছিল। কিন্তু দ্বিতীয়, তৃতীয় সিজনে প্রত্যাশা আকাশছোঁয়া ছিল – আর সেটাই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।”
চলচ্চিত্র ব্লগার জিয়ং বললেন, “নির্মমতা আর মানবিকতার সহাবস্থানের এই প্যারাডক্সই শেষ পর্বকে হৃদয়ছোঁয়া করেছে।”