হিলারি-ট্রাম্প বিতর্কে ‘জঘন্যতম’ যত বাক্য

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় বিতর্কে মুখোমুখি হয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বাংলাদেশ সময় আজ সোমবার সকাল ৭টায় মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের সেন্ট লুইস শহরের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে বিতর্ক শুরু হয়। দেড় ঘণ্টার এ বিতর্কে সঞ্চালক হিসেবে ছিলেন এবিসি টেলিভিশনের মার্থা রাডাৎস ও সিএনএনের অ্যান্ডারসন কুপার।
নির্বাচনের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে দ্বিতীয়বারের মতো মুখোমুখি বিতর্কেও ছড়িয়েছে উত্তাপ। কথার আক্রমণ-প্রতি আক্রমণে মুখর হয়ে ওঠে এ বিতর্ক। যথারীতি হিলারি ও ট্রাম্পের বক্তব্যে উঠে আসে ‘অপ্রিয়’ কথাও। সিএনএন ওই ‘অপ্রিয়’ কথামালার সংকলন করেছে ‘হিলারি-ট্রাম্প বিতর্কের সবচেয়ে জঘন্য বাক্যগুলো’ নামে।
একঝলকে দেখে নিই দ্বিতীয় প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে ট্রাম্পের সবচেয়ে শানিত আক্রমণ ও হিলারির প্রত্যুত্তর।
‘তুমি জেলে থাকবে’
হিলারি ক্লিনটন : এটা স্বস্তির বিষয় যে ট্রাম্পের মতো মেজাজ নিয়ে কেউ আমাদের দেশের আইনের দায়িত্বে নেই।
ডোনাল্ড ট্রাম্প : থাকলে আপনি জেলে থাকতেন।
‘অশালীন ট্রাম্প’
হিলারি ক্লিনটন : আর ওই অশালীন বক্তব্য…
ডোনাল্ড ট্রাম্প : ‘ওটা লকার রুমের আলাপ ছিল। অবশ্যই আমি ওই বক্তব্য নিয়ে গর্বিতও নই। এর জন্য আমি আমার পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়েছি এবং আমেরিকার জনগণের কাছেও ক্ষমা চেয়েছি। আপনারা জানেন, যখন আপনারা এমন একটি বিশ্বে থাকবেন যেখানে আইএস আমাদের মাথা কাটছে এবং নানা জঘন্য ঘটনা ঘটে চলছে; আমরা একটি মধ্যযুগীয় সময় পার করছি।’
‘এটা জানায় আসলে তিনি কে’
হিলারি ক্লিনটন : ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্যতিক্রম। গত জুনেই আমি বলেছিলাম, তিনি প্রেসিডেন্ট এবং সর্বাধিনায়ক পদের জন্য যোগ্য নন। এবং অনেক রিপাবলিকান ও নিরপেক্ষরাও একই কথা বলেছিলেন। সেটাই আমরা দেখতে এবং শুনতে পাই শুক্রবার ফাঁস হওয়া নারীদের সম্পর্কে ডোনাল্ডের কথায়। জানতে পারি, তিনি নারীদের সম্পর্কে কী ভাবেন, নারীদের সঙ্গে তিনি কী করেন। এবং তিনি বলেছেন, এই ভিডিও তাঁকে প্রতিনিধিত্ব করে না। কিন্তু আমি মনে করি, যাঁরা এটি দেখেছেন এবং শুনেছেন, তাঁরা আমার সঙ্গে একমত হবেন যে এই ভিডিওটিই জানায় আসলে তিনি কে।’
‘বিল ক্লিনটনকে প্ররোচিত করেছেন হিলারি’
ডোনাল্ড ট্রাম্প : এ দেশের রাজনীতির ইতিহাসে নারীর প্রতি অবমাননাকর তাঁর (বিল ক্লিনটন) মতো আর কেউ ছিলেন না। আপনি যেভাবে চান বলতে পারেন, কিন্তু বিল ক্লিনটন নারীদের অবমাননা করেছেন। হিলারি স্বামীকে প্ররোচিত করেছেন, ওই নারীদের আক্রমণ করেছেন এবং তিনি আরো ভয়ংকরভাবে নারীদের আক্রমণ করেছেন।’
‘যখন তাঁরা নিচ দিয়ে যাবে, আপনি ওপর দিয়ে যান’
হিলারি ক্লিনটন : যখন আমি এ ধরনের কথা শুনি, তখন আমি আমার বন্ধু মিশেল ওবামার একটি পরামর্শ প্রায়ই মনে করি, ‘যখন তাঁরা নিচ দিয়ে যাবে, আপনি তাঁদের ওপর দিয়ে যান।’
‘বিশেষ কৌঁসুলি নিয়োগ করব আমি’
ডোনাল্ড ট্রাম্প : আমি আপনাদের বলছি, আমার মনে হয় না আমি এটা বলতে চাই, কিন্তু আমি এটা বলতে চলেছি। যদি আমি জিতি, তাহলে আমি আমার অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দেব, আপনার (হিলারি ক্লিনটন) ব্যাপারে তদন্ত করতে। কারণ, আপনি অনেক মিথ্যা বলেছেন, আপনার মধ্যে অনেক প্রতারণা আছে। আইনজীবী আপনার ব্যক্তিগত ই-মেইল ব্যবহারের বিষয়টি তদন্ত করবেন এবং এ জন্য আপনাকে কারাগারে যেতে হবে।
‘আমি একজন ভদ্রলোক’
হিলারি ক্লিনটন : (একজন দর্শকের প্রশ্নের জবাবে) যদি তিনি বলতে চান, তিনি শুরু করতে পারেন। ডোনাল্ড, আপনি বলতে পারেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প : না না, আমি একজন ভদ্রলোক। আপনি বলুন। তবে যা বলবেন, দয়া করে প্রসঙ্গে থাকবেন।
‘ট্রাম্পের ইসলামভীতি’
একজন দর্শক (ট্রাম্পের উদ্দেশে) : ‘যুক্তরাষ্ট্রে ৩৩ লাখ মুসলমান রয়েছেন এবং আমিও তাঁদের একজন। আপনি মুসলিমদের সঙ্গে কাজ করার কথা বলেছেন; কিন্তু যেভাবে ইসলামভীতি বাড়ছে, নির্বাচনের পর আপনি কীভাবে রাষ্ট্রের প্রতি হুমকি এড়িয়ে উত্তেজনা প্রশমন করবেন?’
ডোনাল্ড ট্রাম্প : ভালো, আপনি যে ইসলামভীতির কথা বলেছেন, এটা লজ্জাজনক। কিন্তু আমরা যা করতে পারি সেটা হচ্ছে, এটা ঠিক করতে পারি, যেহেতু সেখানে সমস্যা হচ্ছে। আমি বোঝাতে চাইছে, তাঁদের (মুসলমান) ক্ষেত্রে আমরা রাজনৈতিকভাবে ঠিক আছি। কিন্তু এটাও ঠিক যে একটা সমস্যা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে মুসলমানদের এগিয়ে আসতে হবে। যখন তাঁরা সমস্যার সম্মুখীন হবেন অথবা কোনো ঘটনা লক্ষ করবেন, অবশ্যই যেন অবহিত করেন তাঁরা।
বিতর্ক চলাকালেই সিএনএন জানায়, প্রথম বিতর্কে পিছিয়ে থাকার পর রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পের জন্য ফিরে আসার বড় সুযোগ ছিল এই বিতর্ক। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া ভিডিও টেপে নারীদের অসম্মান এবং শরণার্থী ও মুসলমানদের বিষয়ে অবস্থান নিয়ে পুনরায় পিছু হটতে হয় ট্রাম্পকে। উল্টো তিনি হিলারিকে নানা অশালীন ভাষায় আক্রমণ করেন। স্বভাবসুলভ বিনয় দিয়ে তা এড়িয়ে যান হিলারি, যা ভোটারদের মধ্যে তাঁর অবস্থান পোক্ত করেছে বলেই ধারণা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় বিতর্কের পর সিএনএন পরিচালিত তাৎক্ষণিক জরিপে এগিয়ে রয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন।
সিএনএন ৫৩৭ জন নিবন্ধিত ভোটারের সাক্ষাৎকার নিয়েছে, যাঁরা বিতর্কটি দেখেছেন। তাঁদের মধ্যে ৫৭ শতাংশ ভোটার হিলারি ক্লিনটনকে সমর্থন জানিয়েছেন এবং ৩৪ শতাংশ সমর্থন পেয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
দ্বিতীয় বিতর্কে হিলারি ক্লিনটন জয় পেলেও প্রথমবারের মতো শক্ত অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসেছেন। সেবার ৬২ শতাংশ সমর্থন পেয়েছিলেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী। সিএনএন জানিয়েছে, জরিপে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা (মার্জিন অব এরর) ৪ শতাংশ।