ভারতেও রোয়ানুর প্রভাব

ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাব পড়েছে ভারতের ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের সমুদ্র উপকূলেও। আজ শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ বাংলাদেশ উপকূলে রোয়ানুর আছড়ে পড়ার কথা।
এরই মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী এলাকা হয়ে বাংলাদেশের কোথাও কোথাও আঘাত হানতে শুরু করেছে রোয়ানু।
ভারতের আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে ,ওড়িশার পারাদ্বীপের দিকে ২৫ কিলমিটার গতিবেগে ধেয়ে আসতে শুরু করেছে রোয়ানু। স্থলভাগে প্রবেশের পর ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই মুহূর্তে ঝড়টি পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ থেকে ১৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করলেও তা ক্রমশ এগিয়ে আসছে। ঘূর্ণিঝড়টির অভিমুখ রয়েছে সরাসরি বাংলাদেশের দিকে। তবে রোয়ানু আগের থেকে অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর।
রোয়ানু মূলত মালদ্বীপের শব্দ। যার অর্থ নারকেল ছোবড়ার দড়ি। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগর তীরবর্তী ৮টি দেশের আবহাওয়া দপ্তর ও বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার প্যানেলভুক্ত তালিকা অনুযায়ী এবারে এই ভয়ঙ্কর ঘুর্ণিঝড়টির নামকরণ করেছে মালদ্বীপ। এর আগে যে সামুদ্রিক ঝড়টির উৎপত্তি হয়েছিল সেটির নামকরণ করা হয়েছিল মহাসেন। মহাসেন নামকরণ করেছিল শ্রীলঙ্কা।
বিভিন্ন অঞ্চলের আবহাওয়া দপ্তরগুলো ঝড়ের নামকরণ করে থাকে। আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় হলে ভারত যেমন নামকরণ করে থাকে। তেমনি পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ড থেকেও নামের প্রস্তাব দেওয়া হয়। চক্রাকার পদ্ধতিতে চলে এই নামকরণ।
এরই মধ্যে রোয়ানুর প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দীঘা, মন্দারমনি, তাজপুরসহ বিস্তীর্ণ সমুদ্র সৈকত উত্তাল অবস্থায় রয়েছে। বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে সমুদ্র তীরে। উপকূলবর্তী এলাকায় প্রবল জলোচ্ছাসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা আঁচ করে স্থানীয় জেলা প্রশাসন পর্যটকদের সমুদ্র উপকূলে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সমুদ্র উপকূলবর্তী বিভিন্ন স্থানে বসানো হয়েছে পুলিশ ক্যাম্প। ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে আজ সকাল পর্যন্ত কলকাতায় বৃষ্টি হয়েছে ২৩.৭ মিলিমিটার।
রোয়ানুর প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গজুড়ে ঝড়ো হাওয়া ও ভারি বৃষ্টির সতর্কবার্তা জারি করেছে আবহাওয়া দপ্তর। শুক্রবার রাত থেকেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ডহারবার, বাসন্তী, সুন্দরবনসহ বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে প্রবল বৃষ্টিপাত। রোয়ানুর ভয়াবহতা এড়াতে বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের দুই মেদিনীপুর ও দুই ২৪ পরগনা জেলায় সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় সতর্ক করা হয়েছে জেলা প্রশাসনগুলোকে। তৈরি রাখা হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকেও। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দাদের সতর্ক করতে চলছে মাইকিং।
উপকূলের বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে নিরাপদ স্থানে। ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুরের সমুদ্র উপকূলবর্তী কাথি শহরে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।