চলে গেলেন চাঁদে পা রাখা ১২ জনের একজন

চাঁদের মাটিতে পা রাখার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন এই পৃথিবীর মাত্র ১২ জন মানুষ। তাঁদেরই একজন এডগার মিচেল চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
এডগারের সাবেক স্ত্রী আনিতা মিচেলের বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, গত ৫ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচ এলাকার বাড়িতে ৮৫ বছর বয়সে মারা যান এই নভোচারী। মজার ব্যাপার হলো, সেদিনই চাঁদের মাটিতে অবতরণের ৪৫তম বার্ষিকী ছিল তাঁর। ১৯৭১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো চাঁদের বুকে পা রাখেন মিচেল।
এদিকে এক বিবৃতিতে এডগার মিচেলের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘তিনি অন্বেষণে বিশ্বাস করতেন। প্রেসিডেন্ট কেনেডির আহ্বানে চাঁদে মানুষ পাঠানোর কাজে যুক্ত হয়েছিলেন তিনি। তিনি সেই অগ্রগামী নভোচারী যার কাঁধে ভর করে আমরা এখন দাঁড়িয়ে আছি।’
অ্যালান শেপার্ড ও স্টুয়ার্ট রোজার সঙ্গে অ্যাপোলো ১৪ নভোযানে চড়ে চাঁদে যান মিচেল। ১৯৭১ সালের ৩১ জানুয়ারি চাঁদের উদ্দেশে পৃথিবী ত্যাগ করে নভোযানটি।
অভিযানে দুটি আলাদা সময়ে মিচেল ও শেপার্ড চাঁদে অবতরণ করেন। এ সময় তাঁরা দুজনে মিলে ৩৩ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে পাথরসহ অন্যান্য নমুনা সংগ্রহ করেন। সেই সময় মার্কিন পতাকাকে পেছনে রেখে শেপার্ডের বিখ্যাত সেই ছবিটি তুলে দেন মিচেল।
নিজের চন্দ্রাভিযানের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে ২০১৪ সালে যুক্তরাজ্যের দ্য টেলিগ্রাফকে মিচেল বলেছিলেন, ‘মহাকাশ থেকে একা, নিঃসঙ্গ পৃথিবীকে দেখতে পাওয়া একটি পরম আনন্দের অভিজ্ঞতা। তখন অনুধাবন করতে পারছিলাম যে, মহাকাশে ঝুলে থাকা একটি গ্রহের পুরো প্রক্রিয়ার অংশ হচ্ছে আমাদের শরীর। যে অভিজ্ঞতাটা আমি পেয়েছিলাম সেটাতে প্রাচীন সংস্কৃত শাস্ত্রে সমাধি বলে উল্লেখ করা আছে।’
তবে জীবনের একপর্যায়ে ধর্ম ও বিজ্ঞানের সম্পর্ক নিয়ে বেশ হতাশ হয়ে পড়েন মিচেল। আর নিজের এই হতাশার কথা প্রকাশ্যেও বলতেন তিনি। ভিনগ্রহের আনআইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্টস বা ইউএফও পৃথিবীতে এসেছে বলেও বিশ্বাস করতেন এই নভোচারী।
১৯৩০ সালের টেক্সাসের হেয়ারফোর্ডে জন্ম নেন এডগার মিচেল। ১৯৬৬ সালে নাসায় যোগ দেন তিনি। চন্দ্র অভিযান থেকে ফিরে আসার পরের বছর নাসা ছেড়ে দেন নিজের অন্য কাজে মনোযোগ দেওয়ার কারণ দেখিয়ে।
এডগার মিচেলের মৃত্যুর পর চাঁদে পা রাখা ১২ জন মানুষের মধ্যে আর বেঁচে রইলেন সাতজন। এঁরা হলেন, বাজ অলড্রিন, অ্যালান বেন, ডেভিড স্কট, জন ডব্লিউ ইয়ং, চার্লস ডিউক, ইউগেন কারনান ও হ্যারিসন স্মিথ।